পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রাখার অভিযোগে গ্রেফতার হরিয়ানার ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্রার বিরুদ্ধে তদন্ত জোরদার করল পুলিশ। ইতিমধ্যেই তাঁর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট স্থগিত করা হয়েছে। পুলিশের আশঙ্কা, এবার তাঁর ইউটিউব চ্যানেল 'Travel With Jeo'-ও বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে।
৩৩ বছর বয়সি এই ইউটিউবারকে গত সপ্তাহে হরিয়ানার হিসার জেলার নিউ অগ্রসেন এক্সটেনশন এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। বর্তমানে তিনি পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন।
হিসারের এসপি শশাঙ্ক কুমার সাওয়ানের মতে, জ্যোতির সরাসরি সেনা বা প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত গোপন তথ্যের অ্যাক্সেস না থাকলেও, তিনি পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে সক্রিয় যোগাযোগ রাখছিলেন। তাঁকে পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে ‘যোগাযোগ ব্যক্তি’ (Contact Asset) হিসেবে গড়ে তোলার প্রক্রিয়া চলছিল বলে দাবি পুলিশের।
এসপি আরও জানান, পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার সময় এবং তার পর চার দিনের ভারত-পাকিস্তান সামরিক উত্তেজনার মধ্যেই মালহোত্রাকে দিল্লিতে পাকিস্তান হাইকমিশনের এক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেখা যায়। তদন্তে উঠে এসেছে, তিনি ইউটিউবের অন্যান্য ‘ইনফ্লুয়েন্সার’-দের সঙ্গেও যোগাযোগ রেখেছিলেন, যাঁদের বিরুদ্ধেও একই ধরনের অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, মালহোত্রা একাধিকবার পাকিস্তান এবং অন্তত একবার চিন সফর করেছিলেন। পুলিশের অনুমান, তিনি একটি 'স্পনসর্ড ট্রিপ'-এর মাধ্যমে পাকিস্তানে যান এবং সেখানে উচ্চপদস্থ পাক আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁর বিদেশ সফর, আর্থিক লেনদেন এবং ডিজিটাল ডিভাইসগুলির ফরেনসিক তদন্ত চলছে।
তদন্তকারীরা আরও জানিয়েছেন, দিল্লিতে পাক হাইকমিশনে তিনি এহসান-উর-রহিম ওরফে ড্যানিশ নামে এক কর্মকর্তার সংস্পর্শে আসেন। এফআইআরে বলা হয়েছে, তাঁর মাধ্যমে মালহোত্রা পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত আলি আহওয়ানের সংস্পর্শে আসেন এবং সেখানেই তাঁর থাকার ব্যবস্থা হয়।
এছাড়া হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম ও স্ন্যাপচ্যাটের মাধ্যমে তাঁর কথোপকথনের সূত্র ধরেও তদন্ত চলছে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই অ্যাপগুলির মাধ্যমেই তিনি পাকিস্তানি যোগাযোগের সঙ্গে ‘সংবেদনশীল তথ্য’ শেয়ার করতেন।
ওড়িশা পুলিশের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে মালহোত্রা পুরীতে গিয়েছিলেন এবং সেখানকার এক মহিলা ইউটিউবারের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। সেই সম্পর্কও তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে।
পুলিশের মতে, এই ধরণের যোগাযোগ এবং বিদেশ সফরের উদ্দেশ্য 'সামাজিক যোগাযোগ' হলেও, ভারতের মতো সংবেদনশীল ভূ-রাজনৈতিক পরিবেশে এধরনের আচরণ দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলি ইতিমধ্যেই এই ইউটিউবারের গতিবিধি বহুদিন ধরে নজরে রাখছিল।
তদন্ত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। পুলিশ অনুমান করছে, মালহোত্রার মাধ্যমে আরও কিছু ভারতীয় নাগরিক এই আন্তর্জাতিক চক্রান্তে জড়িত থাকতে পারেন। সমস্ত প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণের পর আরও গ্রেফতারির সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ।