জগদীপ ধনখড় ও সলমন খান। কোনও নিউজ রিপোর্টে এই এই দু'টি নাম পাশাপাশি দেখতে পাবেন... কখনও ভেবেছিলেন? না ভাবাটাই স্বাভাবিক। কারণ অনেকেই জানেন না, একসময় সলমন খানের আইনজীবী ছিলেন জগদীপ ধনখড়। হ্যাঁ, ভারতের প্রাক্তন(সদ্য) উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের কথাই বলা হচ্ছে। সম্প্রতি স্বাস্থ্যের কারণ দেখিয়ে তিনি ইস্তফা দিয়েছেন। রাজনীতির আঙিনায় আসার আগে, জগদীপ ধনখড় একজন বিশিষ্ট আইনজীবী এবং সংবিধান বিশেষজ্ঞও ছিলেন। আর সেই সুবাদেই ১৯৯৮ সালে 'কৃষ্ণসার শিকার মামলা'য় অভিযুক্তদের হয়ে আদালতে সওয়াল করেছিলেন আইনজীবী জগদীপ ধনখড়। সেই অভিযুক্তদের তালিকাতেই ছিলেন সলমন খান। তাঁদের জামিনও পাইয়ে দেন দুঁদে আইনজীবী।
ব্ল্যাকবাক মামলায় ধনখড়ের ভূমিকা
১৯৯৮ সালে রাজস্থানের যোধপুরের কাঙ্কানি গ্রামে একটি সিনেমার শ্যুটিং চলছিল। সেই সময়েই দু’টি বিপন্ন প্রজাতির কৃষ্ণসার হরিণ হত্যা হয়। পরিচালক সুরজ বরজাতিয়ার একটি সিনেমার শ্যুটিং চলছিল। অভিনয় করছিলেন সলমন খান, সইফ আলি খান, টাবু, নীলম ও সোনালি বেন্দ্রের মতো বলিউডের প্রথম সারির তারকারা।
কৃষ্ণসার হত্যা মামলায় জগদীপ ধনখড় কেসের একেবারে প্রথম পর্যায়ে সলমন খান ও তাঁর সহ-অভিযুক্তদের আইনজীবী ছিলেন। সলমনের গ্রেফতারির পর ধনখড়ই তাঁদের জামিন করান। সেই সময় ধনখড়ের সহকারী ছিলেন প্রভীন বলওয়াড়া। তিনি বললেন, '১৯৯৮ সালে ধনখড় সাহেবই প্রথম সলমন খানের হয়ে সওয়াল করেছিলেন। জামিনেরও ব্যবস্থা করেছিলেন। তবে মামলার বাইরে আর তাঁর সঙ্গে আর কোনও যোগাযোগ(সলমনের সঙ্গে) ছিল না।'
সলমনের পক্ষে কী যুক্তি দিয়েছিলেন ধনখড়?
১৯৯৮ সালে Rediff On The Net-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ধনখড় বলেন, 'সেটে প্রায় ৩০০ জন ছিলেন। তাও কেউ কিছুই দেখলেন না?' তদন্তের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি।
আদালতে ধনখড় বলেন, 'সলমন পুলিশকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করেছেন। তাই তাঁকে জামিন দেওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।' তিনি আরও যুক্তি দেন, 'যদি গ্রামবাসীরা অভিনেতাদের হরিণ মারতে দেখে থাকেন, তবে সঙ্গে সঙ্গে অভিযোগ না করে তিন সপ্তাহ পরে কেন অভিযোগ দায়ের করলেন?'
কী হয়েছিল?
বছরের পর বছর ধরে এই মামলার শুনানি চলে। এরপর ২০১৮ সালের ৫ এপ্রিল সলমন খানকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তাঁকে যোধপুর সেন্ট্রাল জেলে পাঠানো হয়। সেখানে তিনি দু’রাত কাটান।
৭ এপ্রিল, ২০১৮ সালে বিচারক রবীন্দ্র কুমার জোশি তাঁকে ৫০ হাজার টাকার ব্যক্তিগত বন্ড এবং দু'টি ২৫ হাজার টাকার সিউরিটিতে জামিন দেন। শর্ত ছিল, আদালতের অনুমতি ছাড়া সলমন দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।
আইন থেকে রাজনীতির ময়দানে
২০০৩ সালে জগদীপ ধনখড় বিজেপিতে যোগ দেন। ২০১৬ সালে দলের লিগাল সেলের প্রধান হন। ২০১৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল পদে আসীন হন। এরপর ২০২২ সালে উপরাষ্ট্রপতি হন।