জয়পুর পুলিশ এক চাঞ্চল্যকর ঘটনায় এক কুখ্যাত ‘চোর বধূ’কে গ্রেফতার করেছে। অভিযুক্ত মহিলা ধনী ব্যবসায়ী ও পেশাদারদের বিশ্বাস অর্জন করে লক্ষাধিক টাকার গয়না ও নগদ চুরি করতেন। আধিকারিকরা জানিয়েছেন, তিনি বিবাহ সংক্রান্ত অ্যাপ ব্যবহার করে একজন আদর্শ জীবনসঙ্গী হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতেন এবং পরে তার শিকারের আর্থিক সম্পদ হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যেতেন।
কীভাবে ফাঁদ পেতেন এই ‘চোর বধূ’?
পুলিশের মতে, অভিযুক্ত মহিলা বিশেষভাবে ধনী ব্যবসায়ী, পেশাদার এবং বিবাহবিচ্ছেদ হওয়া ব্যক্তিদের টার্গেট করতেন। বৈবাহিক অ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করার পর তিনি ধীরে ধীরে তার শিকারের বিশ্বাস অর্জন করতেন। এরপর বিয়ে করে পরিবারের অংশ হয়ে কয়েক মাস সময় ব্যয় করতেন। এই সময়ে, তিনি পরিবারের মূল্যবান সম্পদ এবং নগদ চুরি করে অদৃশ্য হয়ে যেতেন।
শেষ প্রতারণার ঘটনা ও গ্রেফতার
জয়পুরের একজন নামী জুয়েলার্স, যার প্রথম স্ত্রী মারা গিয়েছিলেন, অভিযুক্তের এই প্রতারণার শেষ শিকার হন। একটি বৈবাহিক অ্যাপের মাধ্যমে অভিযুক্তের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর, তিনি গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে তাকে বিয়ে করেন। বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যেই অভিযুক্ত তার শ্বশুরবাড়ির কাছ থেকে ৩৬.৫ লাখ টাকার গয়না এবং নগদ নিয়ে পালিয়ে যান।
পালিয়ে যাওয়ার পর, তিনি দেরাদুনে তার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে মিথ্যা পারিবারিক সহিংসতার মামলা দায়ের করেন। এই মামলাগুলিকে আইনি হুমকি হিসেবে ব্যবহার করে তিনি আরও অর্থ আদায় করার চেষ্টা করতেন।
জয়পুর পুলিশের সফল অভিযান
জয়পুর পুলিশের কয়েক মাসের তদন্তের পর, অভিযুক্তকে উত্তরাখণ্ডের দেরাদুন থেকে গ্রেফতার করা হয়। জয়পুর পুলিশের ডেপুটি কমিশনার অমিত কুমার অভিযুক্তের গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এবং বলেছেন যে তিনি অতীতে একই কৌশলে একাধিক ব্যক্তিকে প্রতারণা করেছেন।
পুলিশ এখন তার বিরুদ্ধে অন্যান্য মামলাগুলি খতিয়ে দেখছে এবং তার সঙ্গে যুক্ত সম্ভাব্য সহযোগীদের খোঁজ করছে। যারা এই প্রতারণার শিকার হয়েছেন তাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।
পরিকল্পিত প্রতারণার পদ্ধতি
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত মহিলা অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে তার প্রতারণা চালাতেন। প্রথমে তিনি ধনী ব্যক্তিদের টার্গেট করতেন এবং তাদের আর্থিক সম্পদ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতেন। বিয়ের পর, পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করার জন্য তিন-চার মাস সময় ব্যয় করতেন। একবার বিশ্বাস অর্জন করার পর, তিনি পরিবারের মূল্যবান গয়না ও নগদ নিয়ে পালিয়ে যেতেন।
যারা তাকে থামানোর চেষ্টা করতেন, তাদের বিরুদ্ধে তিনি পারিবারিক সহিংসতা এবং হয়রানির মিথ্যা মামলা দায়ের করতেন। এই আইনি হুমকি ব্যবহার করে তিনি ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ আদায় করতেন।
পুলিশের বার্তা
পুলিশ এই চক্রের শিকার হতে পারে এমন যে কাউকে এগিয়ে এসে অভিযোগ দায়ের করার অনুরোধ জানিয়েছে। অভিযুক্তের গ্রেফতার ধনী ব্যক্তিদের প্রতারণার এই কৌশলকে প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছে এবং আরও তদন্তের মাধ্যমে এই চক্রের গভীরে যাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।