মেঘ ভাঙা বৃষ্টিতে জম্মু-কাশ্মীরের ডোডাতে প্রকৃতি যেন তাণ্ডব চালাচ্ছে। তোলপাড় হচ্ছে নদী। চোখের নিমেষে সলিল সমাধি একের পর এক হোটেল, বাড়ি, মন্দিরের। কাঠুয়া এবং কিশতওয়ারের পর এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ল ভূস্বর্গের এই জেলা। বন্যার অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে জম্মুতে। এখনও পর্যন্ত দুর্যোগের কবলে পড়ে ৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। বাড়ছে আরও প্রাণহানির আশঙ্কা।
মঙ্গলবার সকাল থেকে জম্মু-কাশ্মীরের ডোডা জেলায় আচমকাই শুরু হয় প্রবল ঝড়বৃষ্টি। কিশতওয়ার এবং কাঠুয়ার সাম্প্রতিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয় ডোডাতে। মেঘ ভাঙা বৃষ্টির জেরে হড়পা বান শুরু হয়। আর প্রবল সেই জলের তোড়ে ভেসে যায় কমপক্ষে ১০টি বাড়ি। ভেঙে পড়তে দেখা যায় একাধিক মন্দির, হোটেল। চোখের নিমেষে ধূলিস্যাৎ হয়ে জলে ভেসে যাচ্ছে বাড়িগুলি। প্রকৃতির সেই রুদ্ররূপের মুহূর্তের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। যা দেখে শিউরে উঠছেন সকলে।
জানা গিয়েছে, আঞ্চলিক আবহাওয়া দফতরের তরফে আগেই ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস ছিল জম্মু ও কাশ্মীরে। কাঠুয়া, সাম্বা, ডোডা, জম্মু, রাম্বান এবং কিশতওয়ারে মেঘ ভাঙা বৃষ্টি এবং ধসের আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। সেই পূর্বাভাস মিলল মঙ্গলবার সকালে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের জেরে এখনও পর্যন্ত কমপক্ষে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আরও প্রাণহানিরও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইতিমধ্যেই উপত্যকার সমস্ত স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পঠনপাঠন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তাওয়াই নদী ফুঁসছে। বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে জলস্তর। মঙ্গলবার রাতভর আরও প্রবল দুর্যোগের পূর্বাভাস রয়েছে। এতে নদীর জলস্তর উপচে জনবসতি এলাকা ভাসিয়ে দেবে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। বন্যার অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে জম্মুতে। জলাশয় থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সকলকে। ধস প্রবণ এলাকাগুলি থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে স্থানীয়দের।
কাশ্মীরের দক্ষিণ প্রান্তের জেলাগুলিতে চলছে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত। পার্বত্য এলাকায় বৃষ্টির পরিমাণ বেশি। তবে ঝিলাম নদী এলাকায় এখনও বন্যার অ্যালার্ট জারি করেনি প্রশাসন। তবে রাতারাতি বাড়তে পারে জলস্তর। এদিকে, কাশ্মীরের মধ্য অংশে হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত রয়েছে। উত্তর কাশ্মীর এই মুহুর্তে শুষ্ক আবহাওয়া চলছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে কাঠুয়া জেলায় (১৫৫.৬ মিলিমিটার)। এদিন সকাল ৮.৩০ থেকে কিছুটা হলেও বৃষ্টি কমেছে সে জেলায়। ডোডাতে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ৯৯.৮ মিলিমিটার, জম্মুতে ৮১.৫ মিলিমিটার, কাটরাতে ৬৮.৮ মিলিমিটার। উঁচু পাহাড়ি এলাকায় আরও মেঘ ভাঙা বৃষ্টি এবং হড়পা বানের পূর্বাভাস দিয়েছে মৌসম ভবন। নামতে পারে ধসও। বুধবার পর্যন্ত পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। ইতিমধ্যেই উদ্ধারকারীরা দুর্যোগ কবলিত এলাকায় পৌঁছে গিয়েছেন। তবে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে উদ্ধারকাজে বেগ পাচ্ছেন তারা। জম্মু-কাশ্মীরের প্রাকৃতিক দুর্যোগের জেরে আপাতত স্থগিত বৈষ্ণোদেবী যাত্রা