সাফল্যের পথে উঠে আসা সব সময় সহজ নয়। অনেকেই সেই লড়াইয়ের মাঝে হার মানেন, আবার কেউ কেউ ইতিহাস তৈরি করেন। ঠিক যেমন করেছেন ঝাড়খণ্ডের তিন তরুণ-তরুণী—ববিতা পাহাড়িয়া, বিষ্ণু মুন্ডা এবং সুরজ যাদব। কঠিন বাস্তবতা, দারিদ্র্য আর সামাজিক বাধা পেরিয়ে তাঁরা ঝাড়খণ্ড পাবলিক সার্ভিস কমিশন (JPSC) পরীক্ষায় সফল হয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন—ইচ্ছা থাকলে পথ মেলে।
পাহাড়িয়া সমাজের প্রথম মহিলা অফিসার
ববিতা পাহাড়িয়া, একটি বিলুপ্তপ্রায় উপজাতি গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। তার গ্রামে নেই পাকা রাস্তা বা বিশুদ্ধ পানীয় জল। সেই কষ্টের জীবন থেকেই তিনি উঠে এসেছেন। সরকারি চাকরি না পাওয়া পর্যন্ত বিয়ে করবেন না—এই সিদ্ধান্তে অটল থেকে তিনি সংগ্রাম চালিয়ে যান। বাবার অনুরোধে বিয়ে না করে, কটূক্তি সহ্য করেও চালিয়ে যান পড়াশোনা। অবশেষে, JPSC পরীক্ষায় ৩৩৭তম স্থান পেয়ে তিনি নিজের পরিবার এবং জাতির গর্ব হয়ে ওঠেন। টাকার অভাবে মিষ্টি কিনতে না পারলেও, তার মা চিনি খাইয়ে প্রতিবেশীদের মুখ মিষ্টি করান—এই অনন্য উদাহরণ মানবিকতারও এক অসাধারণ নিদর্শন।
প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে ডিএসপি
বিষ্ণু মুন্ডার জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ছিল। তার মা গর্ভাবস্থায় ওষুধ খাওয়ার কারণে শরীরের একটি অংশ ঠিকমতো গঠিত হয়নি। বাবা দিনমজুর, মা গৃহিণী। খাবারের জন্যও পরিবার সংগ্রাম করত। সেখান থেকেই উঠে আসা বিষ্ণু নিজের পড়াশোনার খরচ চালাতে টিউশন পড়াতেন এবং উপজাতি হোস্টেলে থাকতেন। অবশেষে ৯ বছরের প্রচেষ্টায় সফল হন JPSC-তে।
সুইগির ব্যাগ থেকে প্রশাসনিক কার্যালয়
সুরজ যাদবের গল্প যেন এক অনুপ্রেরণার রূপকথা। গিরিডির এক রাজমিস্ত্রির ছেলে সুরজ পড়াশোনার খরচ চালাতে রাঁচিতে সুইগির ডেলিভারি বয় ও র্যাপিডো রাইডার হিসেবে কাজ করতেন। বাইক কেনার টাকাও ছিল না, বন্ধুদের বৃত্তির টাকায় বাইক কিনে কাজ শুরু করেন। দিনে ৫ ঘণ্টা কাজ করে বাকি সময় পড়াশোনা করতেন। তার প্রচেষ্টার ফল মিলল—তিনি ডেপুটি কালেক্টর হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। বোর্ডকে যখন জানান তিনি একজন ডেলিভারি বয়, তারা প্রথমে অবাক হলেও, তার আত্মবিশ্বাসী উত্তর তাদের মুগ্ধ করে।
এই তিনজনের গল্প শুধু সাফল্যের নয়, বরং এক নিরন্তর সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি। যেখানে সীমাবদ্ধতা থাকে, সেখানেই সম্ভাবনার জন্ম হয়—তাঁরা তার প্রমাণ। তাদের জয় শুধু ব্যক্তিগত নয়, গোটা সমাজের আশা ও অনুপ্রেরণার বাতিঘর।