একজন সাধারণ মেয়ে হিসেবেই শুরু করেছিলেন জ্যোতি মালহোত্রা। ছোট্ট একটি বাড়ি, মাসে ২০ হাজার টাকার চাকরি, বাবা-মায়ের বিবাহবিচ্ছেদের পর হিসারের নিউ অগ্রসেন ভবন কলোনিতে এককভাবে বাবার সঙ্গে বসবাস। সেই ছোট ঘর থেকে আজ তিনি আন্তর্জাতিক সংবাদ শিরোনামে, কিন্তু একেবারেই গ্ল্যামারের কারণে নয়—বরং পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে।
সোশ্যাল মিডিয়ার পথেই উত্থান
জ্যোতির জীবন বদলাতে শুরু করে দিল্লির একটি বেসরকারি কোম্পানির চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পর। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ‘ক্রাউন অফ আইডিয়া মিস ইন্ডিয়া’ প্রতিযোগিতায় প্রথম রানার-আপ হন। এরপর ফ্যাশন দুনিয়ায় বিচরণ, নানা প্রতিযোগিতা আর শো-তে অংশগ্রহণ। তারপর আসে সোশ্যাল মিডিয়ার ‘স্টার’ হয়ে ওঠার ধাপ। করোনাকালে হিসারে ফিরে এসে ইউটিউবকে পেশা হিসেবে নেন।
বিশেষ করে পাকিস্তান-ভিত্তিক ভ্রমণ ব্লগ তাকে জনপ্রিয় করে তোলে। কর্তারপুর করিডোর হয়ে পাকিস্তান সফর করে তিনি ভিডিও বানান পাকিস্তানের মন্দির, বাজার, জীবনযাত্রা নিয়ে। এতেই বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন, ইউটিউব থেকে সিলভার বাটন পান। ভ্রমণ আর গ্ল্যামার মিশিয়ে তৈরি হয় এক মোহময়ী দুনিয়া। কিন্তু এর আড়ালেই কি লুকিয়ে ছিল অন্য কোনও চক্রান্ত?
গ্ল্যামারের আড়ালে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ?
তদন্তকারী সংস্থার অনুমান, পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার কোনও শাখা ধীরে ধীরে জ্যোতিকে ‘যোগাযোগ মাধ্যম’ হিসেবে ব্যবহার করছিল। প্রশ্ন উঠছে, সীমিত আয় থাকা সত্ত্বেও কীভাবে তিনি বিদেশে ঘনঘন সফর করতেন—বিশেষত পাকিস্তান, বালি, থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলিতে। পাকিস্তানে তার 'ভিআইপি ট্রিটমেন্ট', ইফতার পার্টির বিশেষ আমন্ত্রণ এবং সর্বোপরি, নিরাপত্তা প্রাপ্তি, এই সমস্ত কিছুর পেছনে কে বা কারা ছিল, তা জানতেই চলছে জোর তদন্ত।
গ্রেফতারের পর নীরবতা, কিন্তু চড়ছে ডিজিটাল জনপ্রিয়তা
জ্যোতিকে যখন গ্রেফতার করা হয়, তিনি জিজ্ঞাসাবাদে প্রায় নীরব। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় তার জনপ্রিয়তা হঠাৎ করেই আকাশছোঁয়া। মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যে গুগলে তার নাম এক লক্ষবার সার্চ হয়। ইউটিউবে নতুন সাবস্ক্রাইবার যোগ হয় ৪ হাজার, ইনস্টাগ্রামে ৭ হাজার। যদিও বর্তমানে তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট স্থগিত এবং ইউটিউব চ্যানেলও ব্লক হওয়ার পথে।
শুধুই ‘সেলফ-মেড’ কাহিনি, নাকি ছদ্মবেশী ষড়যন্ত্র?
সোশ্যাল মিডিয়ার সাফল্যের গল্প দিয়ে শুরু হলেও, এই ঘটনার পর প্রশ্ন উঠছে—জ্যোতির জনপ্রিয়তা কি শুধুই তার নিজস্ব প্রচেষ্টা, না কি এর পেছনে অন্য কোনো শক্তি কাজ করছিল? ওড়িশার এক মহিলা ব্লগারের সঙ্গে তার যোগাযোগও সন্দেহের তালিকায়। তদন্তকারী সংস্থার মতে, একটি সুপরিকল্পিত আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।