বেসরকারি খাতে স্থানীয়দের জন্য সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করতে চলেছে কর্ণাটকের সিদ্দারামাইয়া সরকার। ইতিমধ্যেই এই নিয়ে বিলে ছাড়পত্র দিয়েছে রাজ্য মন্ত্রিসভা। বিল অনুযায়ী কর্ণাটকে বেসরকারি চাকরিতে ম্যানেজমেন্ট পদে অন্তত ৫০% কর্মীই কর্ণাটকের বাসিন্দা হতে হবে। একইভাবে, বাদবাকি পদে অন্তত ৭০% সংরক্ষণ রাখতে হবে সেই রাজ্যের মানুষের জন্য।
এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে, মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া এক্স-এ লিখেছেন, 'রাজ্যের সমস্ত বেসরকারি শিল্পে কম-গ্রেডের (গ্রুপ 'সি এবং ডি') পদের জন্য ১০০ শতাংশ কন্নড় নিয়োগ বাধ্যতামূলক করার জন্য রাজ্য মন্ত্রিসভা সোমবার একটি বিলে অনুমোদন দিয়েছে।' তবে, তীব্র প্রতিক্রিয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী পোস্টটি ডিলিট করে দেন।
তবে, বিলের খসড়ায় গ্রুপ সি এবং ডি পদের জন্য ১০০ শতাংশ সংরক্ষণের কথা উল্লেখ করা নেই।
সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, 'আমাদের সরকারের ইচ্ছা কন্নড় ভূমিতে কন্নড়ীরা যেন চাকরি থেকে বঞ্চিত না হয় এবং তাদের মাতৃভূমিতেই যেন সুখের জীবন গড়ার সুযোগ দেওয়া হয়।'
কর্ণাটকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বহু মানুষ কাজ করেন
কর্ণাটক ভারতের অন্যতম শিল্প-সমৃদ্ধ রাজ্য। ভারতের আইটি হাব বেঙ্গালুরুও সেখানে। দেশের বিভিন্ন রাজ্যের আইটি কর্মী তো বটেই, এছাড়াও বিভিন্ন স্কিল-ভিত্তিক কাজ, যেমন ইঞ্জিনিয়ারিং, গবেষণা, উৎপাদন, ম্যানেজমেন্ট, হসপিটালিটি ইত্যাদি কাজের জন্য অন্য রাজ্যের বহু মানুষ কর্ণাটকে যান। বাঙালিদেরও একটি বড় অংশ কর্ণাটকে থাকেন।
একইভাবে কর্ণাটকের এই বড় শিল্পগুলিতে গ্রুপ-সি, ডি পদে অনেক ছোট চাকরি থাকে। তাতেও বিভিন্ন রাজ্যের মানুষ কাজ করেন।
কন্নড়পন্থী...
মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া তাঁর সরকারকে 'কন্নড়পন্থী' বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলছেন, আমাদের অগ্রাধিকার হল কন্নড়দের কল্যাণ নিশ্চিত করা।
এই ঘোষণার পরপরই বিভিন্ন ক্ষেত্রের শিল্পপতি, চাকরিজীবী এমনকি কন্নড়দের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে সিদ্দারামাইয়া সরকার। তবে রাজ্য সরকার আশ্বাস দিয়েছে, বিল প্রণয়নের সময় বিভিন্ন সেক্টরের পরামর্শ নেবে এবং সমস্যা থাকলে তার সমাধান করবে।
'বিলটি শ্রম বিভাগ এনেছে। তারা এখনও শিল্প, শিল্পমন্ত্রী এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সঙ্গে পরামর্শ সেরে উঠতে পারেনি। আমি নিশ্চিত যে বিলটির নিয়ম তৈরির আগে সেটা অবশ্যই করা হবে। সংশ্লিষ্ট সেক্টরের যথাযথ পরামর্শ নেওয়া হবে,' বলেছেন প্রতিমন্ত্রী প্রিয়াঙ্ক খড়গে।
তিনি যোগ করেন, 'এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই'।
'শিল্প, কারখানা এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে স্থানীয় প্রার্থীদের কর্ণাটক রাজ্য কর্মসংস্থান বিল, 2024' বৃহস্পতিবার রাজ্য বিধানসভায় পেশ করা হতে পারে।
শিল্পপতিদের সমালোচনা
বায়োকনের চেয়ারপার্সন কিরণ মজুমদার-শ X-এ এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন। দেখুন তাঁর টুইট।
ব্যবসায়ী এবং সমাজসেবী মোহনদাস পাই এই পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। স্থানীয়দের জন্য কোটা বাধ্যতামূলক করার পরিবর্তে দক্ষতা উন্নয়নে আরও বেশি অর্থ ব্যয় করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
স্বর্ণ গ্রুপের এমডি চি. ভিএসভি প্রসাদও কর্মীদের ঘাটতির কথা তুলে ধরেন। তিনি আশঙ্কা করেন, এর ফলে বড় শিল্পগুলি কর্ণাটকে তাদের কাজ বন্ধ করে চলে যাবে। নতুন শিল্প আসতেও ভয় পাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
খবরটি ইংরাজিতে পড়তে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে।