Kerala Poverty Free: আজ থেকে চরম দারিদ্রমুক্ত কেরল, কীভাবে হল অসাধ্য সাধন? ব্যাখ্যা বাম সরকারের

চিনের পর বিশ্বে এই প্রথম, ভারতের কোনও রাজ্য চরম দারিদ্রমুক্ত হল। কীভাবে এই অসাধ্য সাধন করে দেখারল কেরল? ব্যাখ্যা করেছে কেরলের বামশাসিত সরকার। কী বললেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন?

Advertisement
আজ থেকে চরম দারিদ্রমুক্ত কেরল, কীভাবে হল অসাধ্য সাধন? ব্যাখ্যা বাম সরকারের চরম দারিদ্রমুক্ত কেরল
হাইলাইটস
  • দেশের প্রথম রাজ্য হিসেবে দারিদ্র মুক্ত কেরল
  • কীভাবে এই মাইলস্টোন সাফল্য এল
  • স্টেপ বাই স্টেপ ব্যাখ্যা করেছে বিজয়ন সরকার

সাফল্যের মুকুটে নয়া পালক। দেশের প্রথম চরম দারিদ্রমুক্ত রাজ্যের তকমা পেল বামশাসিত কেরল। ১ নভেম্বর, শনিবার থেকেই চরম দারিদ্রমুক্ত হল দক্ষিণের এই রাজ্য। শনিবার আনুষ্ঠানিক ভাবে সে ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। কেরলের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে এই মাইলস্টোন সাফল্যের ঘোষণা করেন তিনি। বসেছিল বিশেষ বিধানসভা অধিবেশন। 

পিনারাই বিজয়ন বলেন, 'আজকের কেরল পিরাভি (প্রতিষ্ঠা দিবস) ঐতিহাসিক। আমরা কেরলকে ভারতের প্রথম দারিদ্র মুক্ত রাজ্য তৈরি করতে পেরেছি। এই বিধানসভা অধিবেশন  অনেক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হয়েছে। এবার এবারের এই মুহূর্তটি সর্বোচ্চ মাইলস্টোন স্পর্শ করল। নতুন কেরলের জন্ম হল।'

২০২১ সালে নতুন সরকার শপথ নেওয়ার পর প্রথম অঙ্গীকারই ছিল, রাজ্যকে দারিদ্রমুক্ত করে তোলার। সে কথা স্মরণ করিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'নির্বাচনের সময়ে মানুষকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল এটি। সেই প্রতিশ্রুতি আজ পূরণ হল।'

যদিও কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন UDF সরকারের বক্তব্য, পিনারাই বিজয়ন সম্পূর্ণ ভুয়ো এবং বিভ্রান্তিকর কথা বলছেন। কেরলের এই বিশেষ বিধানসভা অধিবেশন বয়কট করে বিরোধী UDF বিধায়করা। 

পৃথিবীতে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার এমনটা ঘটল, কোনও রাজ্য চরম দারিদ্রমুক্ত হল। এর আগে , ২০২০ সালে দেশের প্রত্যেকটি রাজ্যকে দারিদ্রমুক্ত ঘোষণা করে চিন। চরম দারিদ্র মুক্ত বলতে এমন পরিস্থিতিকে বোঝানো হয়, যেখানে নিত্য প্রয়োজন মেটাতেও সক্ষম হন প্রতিটি নাগরিক। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান কোনও কিছুরই অভাব থাকে না কোনও মানুষের কাছে। 

বিশ্ব ব্যাঙ্কের মাপকাঠি অনুযায়ী, দৈনিক ২.১৫ ডলার অর্থাৎ ১৮০ টাকার কমে যদি জীবন চলে, সেক্ষেত্রে ওই অবস্থা চরম দারিদ্র হিসেবে গণ্য হয়।  আবার NITI Aayog-এর মাপকাঠির মধ্যে পড়ে পুষ্টি, বাড়ি, পরিচ্ছন্নতা, শিক্ষা এবং প্রাথমিক পরিষেবা। ২০২৩ সালে NITI Aayog যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করে, সেখানেই কেরলে দারিদ্রের হার ছিল তলানিতে। নাগরিকদের মাত্র ০.৫৫ শতাংশ দরিদ্র বলে গণ্য হয়েছিলেন। তারপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে ছিল গোয়া (০.৮৪) এবং পুদুচেরি (০.৮৫)। 

Advertisement

কীভাবে এই অসাধ্য সাধন হল?
কারণ ব্যাখ্যা করে বিজয়ন সরকার জানিয়েছে, ২০২১ সালে দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর তাদের তরফে চরম দারিদ্র দূরীকরণ প্রকল্পের সূচনা হয়, যার আওতায় তিন থেকে চার মাস ধরে  ‘কদম্বশ্রী’ কর্মী, ASHA কর্মী এবং স্থানীয়দের দিয়ে সমীক্ষা চালানো হয়। ১৪টি জেলায় সমীক্ষা চালিয়ে ‘চরম দরিদ্র’ ৬৪ হাজার ৬টি পরিবার ও তার ১ লক্ষ ৩০ হাজার ৯ ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয় প্রাথমিক ধাপে। এরপর প্রত্যেক পরিবার ও ব্যক্তির প্রয়োজন বুঝে এর পর বাড়িঘর, স্বাস্থ্য,  জীবিকা এবং সমাজকল্যাণমূলক প্রকল্পের ব্যবস্থা করা হয়। তৃণমূল স্তরে সেই প্রকল্প যাতে পৌঁছে দেওয়া যায়, সেই ব্যবস্থা করে স্থানীয় প্রশাসন। সরাসরি রিপোর্ট জমা পড়ে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান এবং জীবিকা খাতে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ৮০ কোটি, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ৫০ কোটি টাকা খরচ করে সরকার। চরম দরিদ্র নাগরিকদের জন্য ৩ হাজার ৯১৩টি বাড়ি তৈরি করা হয়। জমি দেওয়া হয় ১ হাজার ৩৩৮টি পরিবারকে। বাড়ি মেরামতের জন্য ৫ হাজার ৬৫১ পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয়। ২১ হাজার ২৬৩ জনকে রেশন কার্ডের মতো অন্যান্য নথি তৈরি করে দেয় সরকার। যাযাবর শ্রেণি, ভূমিহীন মানুষকেও সামাজিক প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। 

চরম দারিদ্র দূরীকরণ সত্যিই সম্ভব হয়েছে কি না, দফায় দফায় তা যাচাই করেছে রাজ্য সরকার। এই যাচাইয়ে উঠে আসে ‘চরম’ দরিদ্র বলে চিহ্নিত নাগরিকদের মধ্যে ৪ হাজার ৪২১ জন মারা গিয়েছেন এবং ২৬১টি যাযাবর পরিবারের সন্ধান মেলেনি। ৪৭টি ডুপ্লিকেট এন্ট্রি পাওয়া যায়। এরপর চূড়ান্ত তালিকায় ৫৯ হাজার ২৭৭ পরিবার ছিল, যাদের যথাযথ সহায়তার মাধ্যমে দারিদ্রমুক্ত করা হয়।

 

POST A COMMENT
Advertisement