ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, কয়েক জন মিলে তাঁকে ঘিরে দাঁড়িয়ে। কেরলের পালাক্কাড। গভীর রাত। নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হল এক পরিযায়ী শ্রমিককে। মারধরের আগে একটাই প্রশ্ন, 'তুমি বাংলাদেশি?' করা হল ভিডিও। যা দেখে শিউড়ে উঠছেন দেশবাসী। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নিহতের নাম রাম নারায়ণ বাঘেল। ছত্তীসগঢ়ের বাসিন্দা। ওয়ালায়ার সংলগ্ন আট্টাপল্লম এলাকায় স্থানীয় কয়েকজন তাঁকে ঘিরে ধরে। চোর সন্দেহে শুরু হয় ‘জেরা’। ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, কয়েক জন মিলে তাঁকে ঘিরে দাঁড়িয়ে। প্রশ্ন করা হচ্ছে, চড় মারা হচ্ছে। এক জনের আঘাত করার সময় অন্য জনের হাসির শব্দও শোনা যাচ্ছে।
পুলিশের দাবি, চোর সন্দেহেই মারধর করা হয়েছে। যদিও কোনও চুরির সামগ্রী উদ্ধার হয়নি বলে স্বীকার করেছে প্রশাসন। মারধরের এক পর্যায়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন রাম নারায়ণ। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, রক্তবমি করতে শুরু করেন। তড়িঘড়ি স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ তাঁকে পালাক্কাড জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। থ্রিসুর মেডিক্যাল কলেজে ময়নাতদন্তে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুরুতর আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। চিকিৎসকদের মতে, নির্মম অত্যাচারের ফলেই মৃত্যু।
নিহতের পরিবার দেহ গ্রহণে অস্বীকার করেছে। তাঁদের দাবি, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি, Scheduled Castes and Scheduled Tribes (Prevention of Atrocities) Act অনুযায়ী মামলা রুজুর দাবিও জানিয়েছে পরিবার। রাম নারায়ণের দাদা শশীকান্ত বলেন, 'আমরা দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ। এই আইনে মামলা না হলে এবং সব অভিযুক্তের শাস্তি নিশ্চিত না হলে দেহ নেব না।' ক্ষতিপূরণ হিসেবে ২৫ লক্ষ টাকার দাবিও জানিয়েছে পরিবার। তাঁদের দাবি, রাম নারায়ণই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী।
নিহতের স্ত্রী ললিতা ও তাঁর দুই সন্তান অনুজ ও আকাশ ছত্তীসগঢ় থেকে কেরল পৌঁছেছেন। থ্রিসুর মেডিক্যাল কলেজে দেহ দেখে ভেঙে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের স্পষ্ট বক্তব্য, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কেরলেই থাকবেন।
এই ঘটনায় কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। বলেন, 'ওয়ালায়ারে গণপিটুনির ঘটনায় নিহত রাম নারায়ণ বাঘেলের পরিবার ন্যায়বিচার পাবে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়া হবে।' জানান, পালাক্কাডের পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করা হয়েছে। ক্ষতিপূরণের বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে।
শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোরও। সিপিআই(এম) এর অভিযোগ, এটি নিছক চোর সন্দেহে গণপিটুনি নয়। ভিডিওতে ‘বাংলাদেশি’ কিনা সেই প্রশ্ন তুলে আক্রমণ চালানো হয়েছে। রাজ্যের মন্ত্রী এম বি রাজেশ বলেন, 'আরএসএস এর ছড়ানো জাতি বিদ্বেষেরই ফলেই এই সব প্রশ্ন আর হিংসা জন্ম নিয়েছে।' তাঁর অভিযোগ, ঘটনার এই দিকটি আড়াল করার চেষ্টা চলছে। রাজেশ আরও দাবি করেন, অভিযুক্তদের মধ্যে কয়েক জনের আগেও অপরাধের ইতিহাস রয়েছে।
উঠছে নানা প্রশ্নও। পরিযায়ী শ্রমিকের পরিচয়, ভাষা বা চেহারা কি প্রাণনাশের কারণ হয়ে উঠছে? 'বাংলাদেশি' তকমা কি হিংসার নতুন অস্ত্র? কেরলের এই ঘটনায় প্রকাশ্যে সেই অস্বস্তিকর বাস্তবতা।