
বাংলাদেশ, নেপালের মতো আন্দোলনের আঁচ লাদাখে। হিংসাত্মক আন্দোলনে ইতিমধ্যেই লাদাখে কম করে ৪ জনের মৃত্যু হল। ৭০ জনের বেশি আহত। লাদাখ শহরে জারি করা হয়েছে কার্ফু। যার নির্যাস, ৫ জনের বেশি জমায়েত করা যাবে না। গোটা লাদাখ জ্বলছে রক্তক্ষয়ী আন্দোলনে।
কেন হঠাত্ লাদাখে এরকম বিক্ষোভ?
আজ অর্থাত্ বুধবার হঠাত্ তীব্র বিক্ষোভে জ্বলে ওঠে লাদাখ। কয়েক হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করে। তাঁদের দাবি, লাদাখকে পৃথক রাজ্য ঘোষণা করা হোক। বস্তুত, লাদাখ কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, কার্ফু জারি করা হয়েছে। এবং লেহ-তে যাতে আন্দোলনকারীরা জমায়েত না করতে পারে, তার জন্য ব্যাপক নিরাপত্তাবাহিনী নামানো হয়েছে। এই বিক্ষোভটির ডাক দিয়েছে লেহ অ্যাপেক্স বডি নামে একটি স্বঘোষিত সংগঠন। তাদের দাবি, অবিলম্বে লাদাখকে সংবিধানের ৬ নম্বর তফশিলে রাজ্যের তকমা দেওয়া হোক।
VERY SAD EVENTS IN LEH
— Sonam Wangchuk (@Wangchuk66) September 24, 2025
My message of peaceful path failed today. I appeal to youth to please stop this nonsense. This only damages our cause.#LadakhAnshan pic.twitter.com/CzTNHoUkoC
জম্মু-কাশ্মীরের অংশ লাদাখ। জম্মু কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হওয়ার পরেও লাদাখও সরাসরি কেন্দ্রের অধীনে চলে আসে। অনুচ্ছেদ ৩৭০ বিলোপের পরে ২০১৯ সালের ৫ অগাস্ট লাদাখকে যখন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে আনা হল, তখন পূর্ণ সমর্থনই জানিয়েছিল লাদাখের জনতা। এখন হঠাত্ রাজ্যের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়ে গেল।
জলবায়ু অ্যাক্টিভিস্ট সোনম ওয়াংচুকের নেতৃত্বে ১০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া অনশন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন ১৫ জন। তাঁদের মধ্যে দু’জনের শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। এরপরই ডাকা হয় বনধ। ১৫ দিনের অনশন কর্মসূচি শেষের পরে ওয়াংচুক তাঁর সমর্থকদের কাছে আহ্বান জানান, হিংসাত্মক আন্দোলন যাতে কেউ না করে। কিন্তু কিছু যুবক পুলিশের গাড়িতে ইট পাথ ছুড়তে শুরু করে দেয়। থানায় আগুনও ধরিয়ে দিয়েছে।
বিজেপি অফিসের বাইরে নিরাপত্তা গাড়িতে অগ্নিসংযোগ
টানা অনশনের আবহে লাদাখের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মঙ্গলবার। লেহতে বিজেপি অফিসের বাইরে একটি নিরাপত্তা বাহিনীর গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। পরিস্থিতি সামলাতে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করেছে প্রশাসন।
অক্টোবরে কেন্দ্র–লাদাখ বৈঠক
কেন্দ্র এবং লাদাখের প্রতিনিধিদের মধ্যে নতুন দফায় বৈঠক হওয়ার কথা ৬ অক্টোবর। এই বৈঠকে যোগ দেবেন লেহ এপেক্স বডি (LAB) এবং কার্গিল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স (KDA)-এর সদস্যরা। তবে অনশন দীর্ঘায়িত হওয়া এবং লাদাখের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে জনমনে উদ্বেগ বাড়ায় বিক্ষোভকারীরা চাইছেন বৈঠকের তারিখ এগিয়ে আনা হোক।
ওয়াংচুকের শান্তির বার্তা
সমর্থকদের উদ্দেশে পরিবেশকর্মী সোনম ওয়াংচুক শান্ত থাকার আবেদন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি যুবকদের বলব, আগুন লাগানো ও সংঘর্ষ বন্ধ করুন। আমরা অনশন শেষ করছি, তাই প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, দমননীতির বদলে টিয়ার গ্যাসের ব্যবহার বন্ধ করুন। কোনও অনশন সফল হয় না, যদি হিংসায় মৃত্যু ঘটে।
শান্তির আহ্বান সাবেক পুলিশ কর্তার
জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন পুলিশ প্রধান শেশ পল বৈদও লাদাখবাসীর উদ্দেশে শান্তির আবেদন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সহিংসতা কারও উপকারে আসবে না। এক্স হ্যান্ডেলে ভিডিও বার্তায় তিনি লেখেন, লাদাখের হিংসা উদ্বেগজনক। কিন্তু দায়ী কে? জম্মু বহু দশক ধরে রাজ্যের দাবি জানাচ্ছে, তবুও কখনও হিংসা হয়নি। আমার লাদাখি ভাই-বোনদের কাছে আবেদন, হিংসা কোনও সমাধান নয়।'
বাতিল হল লাদাখ ফেস্টিভ্যালের সমাপ্তি অনুষ্ঠান
বিক্ষোভের উত্তেজনার জেরে চারদিনের লাদাখ ফেস্টিভ্যালের সমাপ্তী অনুষ্ঠান বাতিল করেছে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রশাসন। অনিবার্য পরিস্থিতির কথা জানিয়ে তাঁরা দুঃখপ্রকাশ করেছেন শিল্পী, সাংস্কৃতিক দল, পর্যটক এবং সাধারণ মানুষের অসুবিধার জন্য।
ওমর আবদুল্লার আক্রমণ বিজেপিকে
লাদাখে এহেন পরিস্থিতিতে বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করেন প্রাক্তন জম্মু-কাশ্মীর মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। তিনি অভিযোগ করেন, নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর থেকেই বিজেপি রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার কাজে ইচ্ছে করে দেরি করছে। তাঁর কথায়, মানুষ ভোট দিয়েছে, বিজেপি জিততে পারেনি, এর জন্য জনগণকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।