মহাকুম্ভে পদদলিত হওয়ার ঘটনায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। সেই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। প্রয়াগরাজের হাসপাতালে ভর্তি অনেকে। তাঁদের চিকিৎসা চলছে। অনেকে নিখোঁজ। কেউ মা, কেউ মামা বা ভাইকে খুঁজে পাচ্ছেন না। হাসপাতালের বাইরে তাঁরা দাঁড়িয়ে। কিন্তু হাসপাতাল কোনও সদুত্তর দিতে পারছে না। ফলে নিকটজনদের খুঁজতে হাসপাতালের বাইরেই ঠাঁই দাঁড়িয়ে অনেকে।
মধ্যপ্রদেশের ছাতারপুরের বাসিন্দা জয়প্রকাশ সোনি তাঁর বৃদ্ধ মা-কে নিয়ে এসেছিলেন কুম্ভস্নানে। কিন্তু গতকালের দুর্ঘটনার পর থেকে তিনি আৎ মা-কে খুঁজে পাচ্ছেন না। প্রয়াগরাজের মতিলাল নেহেরু মেডিকেল কলেজের বাইরে দাঁড়িয়ে তিনি। যদি মায়ের কোনও খোঁজ পান এই আশায়। কিন্তু, হাসপাতাল থেকে এখনও কোনও খবর পাননি।
জয়প্রকাশ জানান, রাত তখন একটা। এত ভিড় হয়ে যায় যে একে অপরের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে। অনেকে পড়ে যায়। তাদের মাড়িয়ে যেতে থাকে ভিড়। আমার মা-ও সেই ভিড়ের মধ্যে মাটিতে পড়ে যায়। অন্য বেশ কয়েকজনকে মাটি থেকে টেনে তুলতে পারলেও মা-কে পারিনি। বেশ কিছুক্ষণ পর মা-কে উদ্ধার করা সি্ভব হয়। তখন তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। প্রায় আধঘণ্টা পর অ্যাম্বুলেন্স এসে মা-কে হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু তারপর কেটে গেছে অনেকগুলো ঘণ্টা। হাসপাতালে মায়ের কোনও হদিশ মেলেনি। সেন্ট্রাল হাসপাতালে পৌঁছনোর পর আমাদের জানানো হয়, মাকে মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সে জন্যই এখন এখানে এসেছি।'
একই অবস্থা উত্তরপ্রদেশের গোন্ডার বাসিন্দা জোখু রামের। পদদলিত হয়ে তাঁর মামার মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও এক আত্মীয় এখনও নিখোঁজ। তাঁকে খুঁজেই চলেছেন। কিন্তু সন্ধান মেলেনি। পুলিশ বা হাসপাতালের তরফে কোনও আশ্বাসও পাননি।
জোখু রাম বলেন, 'আমরা দুটি বাসে ৬০ জনের একটি দলে এসেছিলাম। মেলায় আমরা ৯ জন ছিলাম। হঠাৎ ভিড়ের মধ্যে পড়ে যায়। প্রাণ বাঁচানোর জন্য তখন হুড়োহুড়ি শুরু হয়েছে। যে যেদিকে পারছে পালাচ্ছে। তাতে অবস্থা আরও খারাপ হয়। মাটিতে অনেকে পড়ে যায়। তারমধ্যে পড়ে আমার মামা মারা যান।'
মেঘালয়ের এক দম্পতির অবস্থা আরও খারাপ। তাঁদের সন্তান ভিড়ের মাঝে পড়ে আহত হয়। সে আপাতত হাসপাতালে ভর্তি। ওই শিশুটির মা বলেন, 'তখন এত ভিড় ছিল যে পালানোর জায়গা পাচ্ছিলাম না। যত এগোনোর চেষ্টা করছিলাম ততই ভিড় যেন জাপটে ধরছিল। কোনওরকমে আমার বাচ্চাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখন ওর চিকিৎসা চলছে।'
প্রসঙ্গত, মহাকুম্ভে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনার পর সতর্ক উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন। কোনওরকম অপ্রীতিকর অবস্থা এড়াতে নামানো হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ, আধাসেনা ও এনএসজি। সরকার সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে পূণ্যার্থীদের।