Vande Mataram : 'বন্দে মাতরম'-কে 'আল্লাহু আকবরের' সঙ্গে তুলনা করেছিলেন গান্ধীজি, দুটো স্তবককে কেন বেছে নেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর?

'আল্লাহু আকবরের' সঙ্গে 'বন্দে মাতরমের' তুলনা করেছিলেন মহাত্মা গান্ধী। তার জেরে মুসলমানদের বিরোধের মুখেও পড়েছিলেন তিনি। গান্ধীজির এই অবস্থান নিয়ে মুসলমান সম্প্রদায়ের একাংশ ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল।

Advertisement
'বন্দে মাতরম'-কে 'আল্লাহু আকবরের' সঙ্গে তুলনা করেছিলেন গান্ধীজি, কেন?Mahatma Gandhi
হাইলাইটস
  • বন্দে মাতরম দেশের জাতীয় সঙ্গীত কিভাবে হল?
  • বন্দে মাতরম স্লোগান নিয়ে কেন সমস্যা দানা বেঁধেছিল?

'আল্লাহু আকবরের' সঙ্গে 'বন্দে মাতরমের' তুলনা করেছিলেন মহাত্মা গান্ধী। তার জেরে মুসলমানদের বিরোধের মুখেও পড়েছিলেন তিনি। গান্ধীজির এই অবস্থান নিয়ে মুসলমান সম্প্রদায়ের একাংশ ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল। তবে সেই বিতর্কের মধ্যেই 'বন্দে মাতরম'-কে জাতীয় সঙ্গীত করা হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মূল গানের ছটি স্তবকের মধ্যে থেকে দুটি নিয়ে তাতে কণ্ঠ দেন। তারপরই তা জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গৃহীত হয়। 

সালটা ১৯২০। অসহযোগ-খিলাফত আন্দোলন শুরু হওয়ার মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরে মহাত্মা গান্ধী মাদ্রাজ (বর্তমানে চেন্নাই) সফর করছিলেন। তাঁকে স্বাগত জানাতে নানা রকম স্লোগান দেওয়া হয়েছিল। ইতিহাসবিদরা দাবি করেন, বেশ কয়েকটি স্লোগান শুনে স্বচ্ছন্দ্য বোধ করেননি গান্ধীজি। তার মধ্যে নাকি একটি এই 'বন্দে মাতরম'। 

মহাত্মা গান্ধী নাকি বলেছিলেন, হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের কথা বলা সত্ত্বেও দুই সম্প্রদায় নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য 'বন্দে মাতরম' এবং 'আল্লাহু হু আকবর' ব্যবহার করে থাকে। অতএব, 'বন্দে মাতরম' হল 'আল্লাহু হু আকবর' এর সমতুল্য। তবুও, বন্দে মাতরমের দুটি স্তবক ভারতের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গৃহীত হয়েছিল। বিখ্যাত ইতিহাসবিদ সব্যসাচী ভট্টাচার্য তাঁর ২০০৩ সালের টবন্দে মাতরম, দ্য বায়োগ্রাফি অফ আ সং' বইতে লিখেছেন, সহিংসতা উসকে দেওয়ার জন্য বন্দে মাতরমকে স্লোগান হিসেবে ব্যবহার করা জাতীয় গর্বের প্রতীক থেকে বিতর্কের বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছিল। 

ওই ঐতিহাসিক আরও লিখেছেন, '১৯৩৭ সালে গানটি গৃহীত হওয়ার আগেও, স্লোগানটি নিয়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল। সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার সময়, বন্দে মাতরম স্লোগানটি মুসলমানদের উত্তেজিত করার জন্য ব্যবহার করা হত, ঠিক যেমন মুসলমানরা আল্লাহু হু আকবর ধ্বনি দিত। কংগ্রেস কর্তৃক গানটি গৃহীত হওয়ার কয়েক দশক আগে তা শুরু হয়েছিল। তা আজও অব্যাহত রয়েছে।' গান্ধী, জওহরলাল নেহেরু এবং রাজেন্দ্র প্রসাদের নেতৃত্বে কংগ্রেস স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রাণ হিসেবে বন্দে মাতরমকে ভারতের জাতীয় সঙ্গীত করার সিদ্ধান্ত নেয়। 


দুটি স্তবকে সীমাবদ্ধ রাখার সিদ্ধান্ত 

Advertisement

বন্দেমাতরম গানকে দুটি স্তবকে রাখার সিদ্ধান্ত কংগ্রেস কিন্তু গোপনে নেয়নি। মুসলিম নেতাদের আপত্তির জবাবে কংগ্রেস ইচ্ছাকৃতভাবেই রেকর্ডের সিদ্ধান্ত নেয়। আবার কংগ্রেসের অনুরোধে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজেই একটি সংক্ষিপ্ত সংস্করণকে সমর্থন করেছিলেন। উল্লেখ্য, ১৮৭৫ সালে রচিত বন্দে মাতরমের মূল সংস্করণে মাত্র দুটি স্তবক ছিল। কিন্তু বঙ্কিমচন্দ্র পরে এটিকে ছয়টি স্তবকে প্রসারিত করেছিলেন। ১৮৮২ সালে আনন্দ মঠে তা অন্তর্ভুক্ত হয়। বন্দে মাতরম ১৮৭৫ সালের ৭ নভেম্বর রচিত হয়েছিল। ১৮৭৫ সালে যখন এই গানটি প্রথম বঙ্গদর্শন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তখন এতে মাত্র দুটি গীতিমূলক স্তবক ছিল।

মুসলিমদের বিরোধ 

আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, বঙ্কিমচন্দ্রের এই গান নিয়ে আপত্তি ছিল মুসলমান সম্প্রদায়ের একাংশ। সন্ন্যাসী বিদ্রোহেও এই গান ব্যবহার করা হত। স্লোগান দেওয়া হতো। মুসলিম জমিদারদের বিরুদ্ধে সন্ন্যাসীরা এই গান-কে অস্ত্র করায় ইসলাম ধর্মের অনেকে বলতে শুরু করেন, গানটি সাম্প্রদায়িক হয়ে পড়েছে। ১৯২৩ সালে মহম্মদ আলি জওহর যখন কংগ্রেস দলের সভাপতিত্ব গ্রহণ করেন, তখন বন্দে মাতরম গাওয়ার পরপরই তিনি সভা থেকে ওয়াক আউট করেন। বন্দে মাতরমের প্রতি জিন্নার বিরোধিতাও ছিল একইরকম। ১৯৩৮ সালে তিনি বন্দে মাতরম নিয়ে আলোচনাও চেয়েছিলেন নেহরুর সঙ্গে। এমন কী জিন্না অভিযোগ করেছিলেন, 'মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর জন্য এই স্তোত্রকে ব্যবহার করা হচ্ছে।'

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কীভাবে গানটির স্তবক বেছে নেন? 

বঙ্কিমচন্দ্রের এই গান নিয়ে কংগ্রেস ও মুসলিম লিগের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। তখন সুভাষচন্দ্র বসু ও নেহরুর মধ্যে এই নিয়ে আলোচনা হয়। সুভাষকে নেহরু চিঠিতে তাঁর আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, এই গান মুসলমানদের বিরক্ত করতে পারে। তারা বিরূপ হতে পারে। তখন নেহরু নিজেই সেই গান নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে যান। তখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই গানের প্রথম দুটো স্তবক কেবল ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছিলেন। 

সেই বছরই ২৬ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বরের মধ্যে কলকাতায় কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক সম্পন্ন হয়। গান্ধীজি, নেহরু, প্যাটেল, বোস সবাই অংশ নিয়েছিলেন তাতে। বন্দে মাতরমের প্রথম দুটি স্তবক ভারতের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গৃহীত হয়। 

POST A COMMENT
Advertisement