অমিত শাহের নামে আপত্তিকর মন্তব্য করার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক FIR দায়ের হচ্ছে। যার মধ্যে নবতম সংযোজন রবিবার ছত্তিশগড়ের FIR টি। BJP-র বিরুদ্ধে তীব্র কটাক্ষ ছুড়ে দিলেন মহুয়া মৈত্র। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে করা তাঁর মন্তব্যকে বাগধারা বলেই উল্লেখ করেছেন তৃণমূল সাংসদ।
কী নিয়ে বিতর্ক?
মহুয়া মৈত্র তাঁর সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকাউন্টে লিখেছিলেন, 'অমিত শাহের মুণ্ডু কেটে প্লেটে বসিয়ে টেবিলে সার্ভ করা উচিত।' আর তাতেই বিতর্কের সূত্রপাত। গেরুয়া শিবিরের কর্মী-সমর্থকরা মহুয়ার বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় চলতে থাকে তীব্র আক্রমণ। এমনকী একাধিক FIR ও দায়ের হয়েছে তৃণমূলের কৃষ্ণনগরের সাংসদের নামে।
মহুয়ার জবাব
নিজের মন্তব্য নিয়ে ক্ষমাপ্রার্থী নন মহুয়া। বরং কটাক্ষের সুরেই তিনি বলেন, 'যারা ইডিয়ট হয় তারা ইডিয়ম বোঝে না।' অর্থাৎ বোকারা বাগধারা বোঝে না। অমিত শাহের নামে তাঁর করা মন্তব্যকে নিছক বাগধারা বলেই উল্লেখ করেছেন তৃণমূল সাংসদ।
কেন বেআইনি ভাবে বাংলাদেশিরা এ দেশে ঢুকে পড়ছে? এই নিয়ে অমিত শাহের কাছে জবাবদিহি চান মহুয়া। এই গাফিলতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এবং এর জন্য তাঁর মুণ্ডু কেটে প্লেটে বসিয়ে টেবিলে সার্ভ করা উচিত বলে তীর্যক মন্তব্য করেছিলেন তিনি।
মহুয়া মৈত্রর কথায়, '২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পর অমিত শাহের থোঁতা মুখ ভোঁতা হয়ে গিয়েছিল। তাঁর আবকি বার ৪০০ পার স্লোগান মাঠে মারা গিয়েছিল। বিদেশি সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টেও উল্লেখ করা হয়, এই নির্বাচনের ফল নরেন্দ্র মোদীর মুখে একটা থাপ্পড়। তার মানে কি এটাই, কেউ নরেন্দ্র মোদীর মুখে গিয়ে থাপ্পড় মেরে এসেছিল? অনেকেই অনেক কথায় বলে থাকেন, মাথা ঘুরে যাবে। সত্যই কি মাথা ঘুরে যায়?' নিজের মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে তৃণমূল সাংসদ বলেন, 'ইংরেজি ভাষায় এগুলিকে ইডিয়ম বলে। হেডস উইল রোল-এর অর্থ জবাবদিহিতা। আবার বাংলা ভাষাতেও বাগধারা রয়েছে। যেমন লজ্জায় মাথায় কাটা যাওয়ার অর্থ তুমি এতটাই লজ্জিত যে নিজের মাথা নিজে কেটে নিতে পারো। অর্থাৎ নিজের ভুলের দায়িত্ব স্বীকার করা। এগুলো বাগধারা।'
রবিবারই মহুয়ার নামে ছত্তিশগড়ের রায়পুরে একটি FIR দায়ের হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা গোপাল সামন্ত এই অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাঁর অভিযোগ, লোকসভার সাংসদের মন্তব্য গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোয় আঘাত, হিংসা ছড়ানোর উদ্দেশ্য এবং জাতীয় ঐক্যতা নষ্ট করার জন্য করা হয়েছে। FIR দায়ের করার জন্য পাল্টা ছত্তিশগড় পুলিশের বিরুদ্ধেই খড়গহস্ত হয়েছেন মহুয়া। ওই জেলায় পরিযায়ী বাঙালি শ্রমিকদের বিরুদ্ধে হওয়া অত্যাচার নিয়ে কী ভূমিকা পালন করেছে পুলিশ, সে প্রশ্ন তিনি করেন কোন্দাগাঁওয়ের এসপিকে।
তিনি বলেন, 'শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ভুয়ো FIR দায়ের করা হয়েছে। তাঁদের মারধর করা হয়েছে। আদালতে পেশ করা হয়নি। আটক করে রাখা হয়েছে।' আরও একটি ইডিয়ম ব্যবহার করে মহুয়া বলেন, 'টেইল বিটউইন লেগস'। অর্থাৎ চরম লজ্জার বিষয়।
কৃষ্ণনগরের সাংসদের ব্যাখ্যা, 'মাথা কেটে টেবিলে রাখা উচিত মন্তব্যটির সঙ্গে FIR-এ লেখা কথার আকাশ পাতাল তফাৎ। ওখানে লেখা হয়েছে, মহুয়া বলেছেন গলা কেটে দেব। এটাই হয় ভুয়ো FIR দায়ের করার জন্য গুগল ট্রান্সলেটে বাংলা থেকে ইংরেজি অনুবাদ এবং ইংরেজি থেকে সেটা আবার হিন্দিতে অনুবাদ করা হয়।'
নদিয়ায় সাংবাদিকদের মহুয়া বলেন, 'সীমান্ত সুরক্ষা অমিত শাহেরই দায়িত্ব। অনুপ্রবেশের জন্য নিজের গাফিলতি এড়িয়ে বারবার তৃণমূল সরকারের দিকে তিনি আঙুল তুলতে পারেন না। সীমান্তের সুরক্ষা করার যদি কেউ না থাকে, অন্য দেশের লোক প্রতিদিন এ দেশে ঢুকে পড়ে এবং আমাদের মা-বোনেদের দিকে কুনজর দেয় তাহলে তো উচিত অমিত শাহের মাথা কেটে প্লেটে করে টেবিলে সার্ভ করা।'