Mamata Banerjee skip Voter Adhikar Rally: রাহুলকে জোটবার্তা দিলেন, ছাব্বিশের 'বিরোধিতা'ও বোঝালেন মমতা, কীভাবে?

জনৈতিক মহলের মতে, সংসদে টিএমসি কংগ্রেসের সঙ্গে ইস্যুভিত্তিক সমন্বয় বজায় রাখলেও, ইন্ডিয়া জোটের মধ্যে তাদের অবস্থান স্বাধীন। তৃণমূল শিবির বারবার তা স্পষ্ট করে দিয়েছে। আর সেই কারণেই মনে করা হচ্ছে যে রাহুলের 'ভোটার অধিকার যাত্রায়' স্বশরীরে যোগদানের পরিবর্তে, মমতা ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিনিধি পাঠিয়ে সমন্বয় বজায় রাখার পথ বেছে নিয়েছেন।

Advertisement
রাহুলকে জোটবার্তা দিলেন, ছাব্বিশের 'বিরোধিতা'ও বোঝালেন মমতা, কীভাবে?জোট বার্তা দিতে রাহুলের ব়্যালিতে ইউসুফ, আমন্ত্রণ পেয়েও কেন গেলেন না মমতা?

ছাড়াও রাহুলের সঙ্গে এই পথযাত্রায় পা মেলাতে দেখা গেছে কখনও অখিলেশ যাদবকে। আবার কখনও সঙ্গে দিয়েছেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন। ভোটার অধিকার যাত্রার সমাপ্তি উপলক্ষ্যে ১ সেপ্টেম্বর মেগা ইভেন্ট হবে পটনায়। সেই কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার জন্য রাজ্য থেকে দুই প্রতিনিধিকে পাঠাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেসও। দলের পক্ষ থেকে বিহারের এই সমাবেশে প্রতিনিধি পাঠানো হচ্ছে বহরমপুরের সাংসদ তথা প্রাক্তন ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠান  এবং উত্তরপ্রদেশের নেতা ললিতেশ ত্রিপাঠীকে । জানা গিয়েছে, লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তবে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচির কারণে তাঁরা সশরীরে উপস্থিত হতে পারবেন না। সেই কারণেই প্রতিনিধি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব। মুখে জোটের কথা বললেও বিহারে রাহুলের পাশে মমতা ও অভিষেককে না দেখা যাওয়ায় অবশ্য রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। 

রাজনৈতিক মহলের মতে, সংসদে টিএমসি  কংগ্রেসের সঙ্গে  ইস্যুভিত্তিক সমন্বয় বজায় রাখলেও, ইন্ডিয়া জোটের মধ্যে তাদের অবস্থান স্বাধীন। তৃণমূল শিবির বারবার তা  স্পষ্ট করে দিয়েছে। আর সেই কারণেই মনে করা হচ্ছে যে রাহুলের 'ভোটার অধিকার যাত্রায়' স্বশরীরে যোগদানের পরিবর্তে, মমতা ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিনিধি পাঠিয়ে সমন্বয় বজায় রাখার পথ বেছে নিয়েছেন। আর  ইউসুফ এবং ললিতেশ ঘোষণা করেছেন, কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন সরকারের সমস্ত 'জনবিরোধী' নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনে ইন্ডিয়া জোট একসঙ্গে থাকবে।

প্রসঙ্গত, আগামী বছর বাংলায় বিধানসভা নির্বাচন।  যার জন্য রাজনৈতিক দলগুলি ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। তিনবার ক্ষমতায় থাকা তৃণমূল কংগ্রেসের এবারও বাংলার বিধানসভায় আধিপত্য ধরে রাখা কঠিন লড়াই, তা জানেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।  বছরের শুরুতেই, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলীয় বিধায়কদের বৈঠকে স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে পশ্চিমবঙ্গে তাঁর কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের  প্রয়োজন নেই। তিনি একাই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। পশ্চিমবঙ্গে, তৃণমূল কংগ্রেস সিপিএম এবং বিজেপির সঙ্গে  কংগ্রেসকে বিরোধী দল হিসেবেই দেখে। গত লোকসভাতেও ইন্ডিয়া জোটের সদস্য হয়েও বাংলাতে একাই লড়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 

Advertisement

২০১১ সালে বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়ে বাংলায় ক্ষমতা এলেও কয়েক বছর আগে পর্যন্ত ঘাসফুলের সঙ্গে হাতের সম্পর্ক খুব খারাপ পর্যায়ে পৌঁছেছিল। অধীর চৌধুরীর পর শুভঙ্কর সরকার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হওয়ার পর  এই সম্পর্কের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে এখনও দুই দলের মধ্যে সম্পর্ক খুব একটা স্বাভাবিক নয়। এমন পরিস্থিতিতে, যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিহারে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে  সমাবেশে যোগ দিতেন, তাহলে বাংলার নির্বাচনে এর প্রভাব পড়ত । বিশেষজ্ঞ মহলের মতে, আর এই  ভয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই সমাবেশ থেকে দূরে থাকছেন। কিন্তু জোটের বাধ্যবাধকতার কথা মাথায় রেখে তিনি  প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন।

বিহারে SIR কাজ চলছে। বাংলাতেও নির্বাচন কমিশন প্রস্তুত বলে জানা যাচ্ছে। এই আবহে  বাংলায় SIR  নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের মনোভাব অত্যন্ত আক্রমণাত্মক। তৃণমূলের পক্ষ থেকে  বিশাল আন্দোলনেরও ঘোষণ করা  হয়েছে। এরপরে বাংলায় SIR  প্রক্রিয়া শুরু হলে উত্তেজনা চরমে পৌঁছে যাবে, তা বলাইবাহুল্য। এমন পরিস্থিতিতে, তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্যই বিহারের মতো বাংলায় এই আন্দোলনে  ইন্ডিয়া অ্যালায়েন্সের সহযোগিতা চাইবে।  তবে রাহুল গান্ধীর সরাসরি সহযোগিতা বাংলার রাজনীতিতে টিএমসির ভোটব্যাঙ্কে আঘাত হানার আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছে না ঘাসফুল শিবির।  বিহারে রাহুলের সঙ্গে  কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার ক্ষেত্রে বাংলায় ভোটব্যাঙ্ক হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে। প্রসঙ্গত, কেন্দ্রে ইন্ডিয়া জোট থাকলেও তৃণমূল এবং কংগ্রেস উভয়ের জন্যই বাংলায় অত্যন্ত অস্বস্তিকর এবং বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি রয়েছে।  কেন্দ্রীয় ইস্যুতে অংশীদারিত্ব থাকলেও  বাংলায় পারস্পরিক বিরোধিতা রয়েছে। যা নিয়ে বিজেপি প্রায়শই নিশানা করে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে, এই সমস্ত বিতর্ক এড়াতে, টিএমসি বিহারের জন্য মধ্যম পথ বেছে নিয়েছে। আর এই মধ্যম পথে, তৃণমূল  ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গে  রয়েছে, তবে এই সমন্বয়ের মাঝে  নিজের স্বতন্ত্রতাও বজায় রাখছেন তৃণমূল নেত্রী।

POST A COMMENT
Advertisement