হিংসার আগুনে পুড়ছে মণিপুর। উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে লাগাতার লুটপাট, অশান্তির খবর মিলছে। মৃত্যুর খবরও সামনে আসছে। মণিপুরে হিংসা শুরু হয় ৩ মে ২০২৩। কিন্তু ১৬ মাস পেরিয়ে গেলেও সেখানে শান্তি ফিরে আসেনি। গত শনিবার নতুন করে হিংসায় ৫ জন মারা গেছে।
মণিপুরের পরিস্থিতি দেখে বোঝা যায়, সেখানে মেইতেই এবং কুকি দুই সম্প্রদায়ের কাছে এখনও অস্ত্র রয়েছে। শোনা যাচ্ছে, ওই দুই সম্প্রদায়ই পাহাড় ও উপত্যকায় বাঙ্কার তৈরি করেছে। কেন্দ্র সরকার হস্তক্ষেপও করেছে একাধিকবার। সেই রাজ্য়ের সরকারও তৎপর। কিন্তু তারপরও ১৬ মাস পেরিয়ে গেল। কেন থামছে না হিংসা?
গত বছরের মে মাস থেকে মণিপুরের অবস্থা ভয়াবহ থাকলেও গত কয়েক মাস ধরে পরিস্থিতি শান্ত ছিল। কিন্তু এখন বিমান বোমা, আরপিজি ও আধুনিক অস্ত্রের জন্য ড্রোন ব্যবহারের পর পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সর্বশেষ হামলার পর পুলিশ সার্চ অপারেশন করে। তখন ৭.৬২ মিমি স্নাইপার রাইফেল, পিস্তল, ইম্প্রোভাইজড লং রেঞ্জ মর্টার (পম্পি), ইম্প্রোভাইজড শর্ট রেঞ্জ মর্টার, গ্রেনেড, হ্যান্ড গ্রেনেড সহ অনেক আধুনিক অস্ত্র খুঁজে পায়।
কেন হিংসা থামছে না?
এখন সবচেয়ে বেশি করে যে প্রশ্নটা উঠছে তা হল মণিপুরে কেন হিংসা থামছে না। এর অনেক কারণ রয়েছে। এই লড়াইটি দুটি জাতিগোষ্ঠী কুকি এবং মেইতেই-এর মধ্যে। মেইতেই সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ মানুষ উপত্যকায় বাস করে এবং কুকি সম্প্রদায় পাহাড়ে। হিংসা শুরু হওয়ার পর থেকে দুই সম্প্রদায়ের মানুষই নিজেদের এলাকায় রয়েছে। দুই সম্প্রদায় একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত। এতে তৈরি হচ্ছে অসন্তোষ। দুই সম্প্রদায় একে অপরকে দোষারোপ করছে। তাতে অশান্তি বাড়ছে। প্রতিবেদনে প্রকাশ, দুই সম্প্রদায় নিরাপদ আশ্রয়ে তৈরি করেছে। তাদের কাছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র রয়েছে। ফলে সুযোগ পেলেই তারা একে অপরকে আক্রমণ করছে। তারপর নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছে।
উভয় সম্প্রদায় এত অস্ত্র কোথায় পাচ্ছে সেটাও একটা প্রশ্ন। মণিপুরে যে অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে তা সাধারণত যুদ্ধে ব্যবহার করে সেনা ও পুলিশ। মনে করা হচ্ছে, লুটপাট করে এই সব অস্ত্র পাওয়া গেছে। সম্প্রতি মণিপুরে সেনা মোতায়েন সহ অনেক থানায় অস্ত্র লুটের খবর পাওয়া গেছে। সেই অস্ত্র ব্যবহার করছে দুই সম্প্রদায়। আবার অভিযোগ, প্রতিবেশী দেশগুলি থেকে মণিপুরে অবৈধ অস্ত্র আসছে।
মণিপুরে হিংসা কেন ঠেকাতে পারছে সেনা? মণিপুরে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। তবে তারাও হিংসা থামাতে পারছে না বলে মনে হচ্ছে। এর কারণ হয়তো পারস্পরিক সমন্বয়ের অভাব। আবার সেখানকার সাধারণ মানুষ সেনা মোতায়েন নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। রাজ্য পুলিশও দুই শিবিরে বিভক্ত বলে মনে করা হচ্ছে। মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংকেও বিরোধিরা নিশানা করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আনা হয়েছে। এন বীরেন সিং মেইতেই সম্প্রদায়ের। সেজন্য তাঁর নিজের সম্প্রদায়ের উপর নরম মনোভাব রয়েছে বলে দাবি করছেন বিরোধীরা।
উল্লেখ্য মণিপুরে এখনও পর্যন্ত ২০০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মেইতেইরা মণিপুরের জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ। তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগ ইম্ফল উপত্যকায় বাস করে। আর নাগা এবং কুকি-সহ আদিবাসীদের সংখ্যা প্রায় ৪০ শতাংশ। তারা পার্বত্য জেলাগুলিতে বাস করে। দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে হিংসার কারণে বহু সাধারণ মানুষ ত্রাণ শিবিরে রয়েছে।