বিতর্কপ্রবণ রাজনৈতিক মন্তব্যের জগতে আরেকটি নতুন পালক যোগ করলেন বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার জাতীয় সভাপতি জামাল সিদ্দিকী। তাঁর বক্তব্য—'সব মুসলিমই ভগবান রামের বংশধর।' শুনে প্রথমে মনে হতে পারে, এ যেন এক ‘ধর্মীয় ডিএনএ টেস্টের’ ফলাফল! তবে কথার পেছনে আছে এক গভীর ঐতিহাসিক এবং আধ্যাত্মিক যুক্তির সুতোর টান।
এক সাক্ষাৎকারে সিদ্দিকী বলেন, 'ইসলামের অনেক আগেই সনাতন ধর্ম ছিল। এটি আমাদের সভ্যতার ভিত্তি।' তিনি শুধু তাই-ই নন, সরাসরি বলেই ফেলেন—'যারা রাম ও কৃষ্ণে বিশ্বাস করে না, তারা মুসলিম নয়!'
এই বক্তব্যে অনেকে চমকে গেলেও, সিদ্দিকীর যুক্তির গাঁথুনি বেশ মজবুত। তাঁর মতে, ইসলাম বহু নবীর অস্তিত্ব মেনে চলে। কোরানে যেখানে ২৫ জন নবীর কথা বলা হয়েছে, হাদিস বলছে ১,২৪,০০০ জন নবী এসেছিলেন পৃথিবীতে। 'তাহলে কে বলতে পারে ভগবান রাম বা কৃষ্ণ তাঁদের মধ্যে ছিলেন না?'—এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে চলেছেন এখন অনেকেই।
সিদ্দিকীর মন্তব্যে একটা ‘ইতিহাস-সন্ধানী’ ঢঙ যেমন আছে, তেমনি একটা অলক্ষ্যে থাকা রাজনৈতিক বার্তাও। ভারতের মুসলিমদের শিকড় যে প্রাচীন হিন্দু ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িত—এই বক্তব্যে তিনি একযোগে ধর্মীয় সংহতি এবং জাতীয় ঐক্যের রসায়ন রাঁধতে চেয়েছেন।
তিনি বলেন, 'উপাসনার রীতি আলাদা হতে পারে, কিন্তু সংস্কৃতি এক। আমাদের পরিচয় এখনও সনাতন।' এই বক্তব্যে অদ্ভুতভাবে যেন ‘সর্বধর্ম সমন্বয়’-এর গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে—একদিকে ধর্মীয় ঐক্য, আর অন্যদিকে ভোট বৈতরণী পার করার সেতু?
এই মন্তব্যে স্বাভাবিকভাবেই রাজনীতিতে নানা প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। কেউ বলছেন, এটা 'রাজনৈতিক স্ট্র্যাটেজি', কেউ বলছেন, এটা 'ধর্মীয় উদারতার দৃষ্টান্ত'। আবার কেউ কেউ টিপ্পনি কাটছেন—'এবার কি রামনবমীতে কোরান পাঠ হবে?'
হাস্যরসের আবরণে সিদ্দিকীর বক্তব্যে এক গভীর বার্তা আছে—ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে যদি ইতিহাসের মাটিতে দাঁড়িয়ে আমরা একে অপরকে চিনতে পারি, তাহলে হয়তো ভারতীয় রাজনীতিতে নতুন এক ‘সংস্কৃতি সংযোগ’ সম্ভব।