ভারতের নকশাল আন্দোলনের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের অবসান ঘটল। দীর্ঘদিন ধরে সিপিআই (মাওবাদী)-এর নেতৃত্বে থাকা কুখ্যাত নকশাল নেতা মাল্লুজুলা ভেনুগোপাল রাও ওরফে ‘ভূপতি’, ‘অভয়’ বা ‘সোনু’ বুধবার মহারাষ্ট্রের গধচিরোলিতে ৬০ জন ক্যাডারসহ আত্মসমর্পণ করেছেন। সূত্রের খবর, তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করেছেন।
দীর্ঘ অপরাধমূলক রেকর্ডে ঘেরা নকশাল নেতা
৭০ বছর বয়সী ভেনুগোপাল রাও ছিলেন সিপিআই (মাওবাদী)-এর সর্বোচ্চ সিদ্ধান্তগ্রহণকারী সংস্থা পলিটব্যুরোর সদস্য এবং দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটির ইনচার্জ। মহারাষ্ট্র-ছত্তিশগড় সীমান্তের ঘন বনাঞ্চল আবুঝামাদ থেকেই তিনি সংগঠনের কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের নেতৃত্ব দিতেন।
নিরাপত্তা বাহিনীর বিশ্বাস, তিনি ছিলেন একাধিক বড় হামলার মূল পরিকল্পনাকারী, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ২০১০ সালের দান্তেওয়াড়ার সিআরপিএফ জওয়ান হত্যাকাণ্ড, যেখানে ৭৬ জন জওয়ান শহিদ হন। হত্যাচেষ্টা, নিরাপত্তা বাহিনীর উপর হামলা, অগ্নিসংযোগ সহ তার নামে রয়েছে একাধিক মামলা। মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড় ও তেলেঙ্গানায় তার মাথার দাম মিলিয়ে পুরস্কারের অঙ্ক দাঁড়িয়েছিল প্রায় ৭ কোটি টাকারও বেশি।
পরিবার ও অতীত জীবন
অন্ধ্রপ্রদেশের পেদাপ্পালি জেলার বাসিন্দা এবং বাণিজ্যে স্নাতক ভেনুগোপাল রাও ছিলেন প্রয়াত সিনিয়র মাওবাদী নেতা মল্লাজোলু কোটেশ্বর রাও ওরফে কিষেণজির ছোট ভাই, যিনি ২০১০ সালে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হন। তার স্ত্রী তারাক্কাও ২০১৮ সালে গধচিরোলি পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন।
নকশাল দমনে নিরাপত্তা বাহিনীর বড় সাফল্য
গধচিরোলি পুলিশের কর্মকর্তারা বলেছেন, এই আত্মসমর্পণ নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য এক বিশাল সাফল্য এবং নকশালবাদের শিকড় উপড়ে ফেলার লড়াইয়ে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। এই ঘটনাকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সেই ঘোষণার সঙ্গেই মিলিয়ে দেখা হচ্ছে, যেখানে তিনি ২০২৬ সালের মধ্যে নকশাল প্রভাব নির্মূল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভেনুগোপাল রাও ও তার ৬০ জন ক্যাডারের আত্মসমর্পণ শুধু মহারাষ্ট্রেই নয়, গোটা মধ্য ও পূর্ব ভারতে নকশাল সংগঠনের দুর্বল অবস্থার ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি সরকারের ‘বিদ্রোহ নির্মূল অভিযান’-এর পক্ষে এক বড় ইতিবাচক বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে।