Dowry Death: প্রতিদিন পণের চাপে ২০ মহিলার মৃত্যু, ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর রিপোর্টে ভয়ঙ্কর তথ্য

নিক্কি ভাটিয়াকে জ্যান্ত জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনায় শিউরে উঠেছে গোটা দেশ। পণের চাপে গৃহবধূর উপর এহেন নৃশংস অত্যাচার একটা উদাহরণ মাত্র। বহু এলাকায়, ঘরে ঘরে রয়েছে এমন নিক্কি ভাটিয়া। চমকে দিচ্ছে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর তথ্য।

Advertisement
প্রতিদিন পণের চাপে ২০ মহিলার মৃত্যু, ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর রিপোর্টে ভয়ঙ্কর তথ্যনিজস্ব চিত্র
হাইলাইটস
  • নিক্কি ভাটিয়ার মতো হাজার হাজার মহিলা পণের দাবিতে নৃশংস অত্যাচারের শিকার
  • দেশে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় পণের চাপে মৃত্যু হয় ২০ জন মহিলার
  • চমকে ওঠার মতো তথ্য দিল ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো

৫ বছর। ৩৫ হাজার ৪৯৩ জন মহিলার হত্যা! নেপথ্যে পণের চাহিদা। গ্রেটার নয়ডার নিক্কি ভাটি হোক কিংবা যোধপুরের সঞ্জু বিষ্ণোই, পণের জন্য বলি হতে হচ্ছে একের পর এক বৃহবধূকে। প্রতিদিন প্রায় ২০ জন করে মহিলাকে পণের জন্য মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়। বিয়ের অনেক বছর পরও এই অত্যাচার সইতে হচ্ছে একাধিক গৃহবধূকে। চমকে দেওয়ার মতো তথ্য মিলল ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর (NCRB) রিপোর্টে।

সমাজকর্মীর মত
পণের চাপ এখনও ভারতে এতটাই প্রবল, অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিয়ে কেবলমাত্র লেনদেনের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। মহিলা অধিকার রক্ষাকর্মী যোগিতা ভায়ানা বলেন, 'এখনও খোলাখুলি সমাজে পণ চাওয়া হয়। নয়ডায় একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। আবাক হলাম দেখে, পণে ফর্চুনার এবং মার্সেডিজের তো বিলাসবহুল গাড়ি দেওয়া হচ্ছে।' তিনি আরও বলেন, 'এই পিতৃতান্ত্রিক ভাবনা এখনও সমাজের বহু স্তরে রয়েছে। নিক্কির বাবাও বারবার বলছিলেন তিনি জামাইকে টপ মডেলের এসইউভি গাড়ি দিয়েছেন। সঙ্গে গয়না এবং নগদও দেওয়া হয়েছিল। মেয়ের মৃত্যু নিয়ে কথা বলার বদলে পণের বিষয়টিকেই বারবার তুলে ধরছিলেন।'

১৯৬১ সাল থেকে পণপ্রথার বিরুদ্ধে আইন লাগু রয়েছে দেশে। কিন্তু বাস্তবে ছেলের বাড়ির তরফে এখনও নগদ, গাড়ি, গয়নার দাবি করা হয়। এই দাবি পূরণ না হলে চলে গৃহবধূর উপর অকথ্য অত্যাচার। মারধর করা হয় তাকে। এমনকী হত্যা পর্যন্ত করা হয়। 

নিক্কির ভয়াবহ পরিণতি
মাত্র ১৭ বছর বয়সে নিক্কির সঙ্গে বিপিন ভাটির বিয়ে হয়েছিল। মৃত্যুর পর এই ঘটনায় একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। প্রথমে স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধেই অভিযোগ ছিল। বিপিন ভাটি সহ সকলেই গ্রেফতার হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে এটা হত্যা না আত্মহত্যা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইনের চোখে যাই হোক না কেন, নিক্কির মৃত্যুর কারণ পণের চাপ। 

রাজস্থানের ঘটনা
তবে নিক্কি ভাটিই একমাত্র উদাহরণ নয়। রাজস্থানের যোধপুকে এক সরকারি স্কুলের শিক্ষিকা সঞ্জু বিষ্ণোই নিজের ৩ বছরের মেয়েকে কোলে নিয়ে গায়ে আগুন দেন। তাঁর বিয়ে ১০ বছর আগে হয়েছিল। কর্মক্ষেত্রে ভাল বেতনও পেতেন তিনি। তবে এখনও শ্বশুরবাড়ির তরফ থেকে পণের দাবি উঠছিল। লাগাতার তাঁকে অত্যাচার করা হচ্ছিল। 

Advertisement

মনোবিদরা কী বলছেন?
মনোস্তত্ববিদ ডা. শ্বেতা শর্মা বলেন, 'পিতৃতান্ত্রিক অধিকার হয়ে দাঁড়িয়েছে পণ। উচ্চ বেতনের চাকরিরতা লেও গৃহবধূকে আশ্রিতই মনে করা হয়। পণ পুরুষের অধিকার হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। এতে তাদের অহংকার তুষ্ট হয়।'

দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় একটি সমীক্ষা চালিয়েছে। ৭৪ হাজারের বেশি ভারতীয় দম্পতির উপর চলেছে এই সমীক্ষা। যেখানে বলা হচ্ছে, ৯০ শতাংশ বিয়েতেই পণ নেওয়া হয়েছে। ১৯৫০ থেকে ১৯৯ সাল পর্যন্ত পণ দেওয়ার পরিমাণ ছিল ২৫০ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় ২১ লক্ষ কোটি টাকা। 

কী বলছে আইন?
আইনজীবী সীমা কুশওয়াহার বক্তব্য, 'আদালতও অনেক সময়ে পণকে উপহার হিসেবে দাবি করার বিষয়টি মেন নেয় দুর্ভাগ্যবশত।' তিনি আরও বলেন, '১৯৮৩ সালে ৪৯৮এ ধারা এসেছিল, গৃহবধূর উপর অত্যাচারের ঘটনায় এই ধারা দেওয়া হয়। যদিও আইনজীবীদের মতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই ধারার অপব্যবহার হচ্ছে এবং সেটাই বেশি করে আলোচিত হচ্ছে। এর ফলে আসলে যাঁরা এই ধরনের অত্যাচার সহ্য করছেন, তাঁদের সমস্যা চাপা পড়ে যাচ্ছে।'

NCRB-র তথ্য
গত ২১ অগাস্ট গ্রেটার নয়ডায় নিক্কির সঙ্গে ঘটা ভয়াবহ ঘটনা ফের একবার প্রমাণ করে দিল, দেশে এখনও পণ প্রথা বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। এই ঘটনায় ফের প্রমাণিত হল, বিশ্বের প্রথমসারির অর্থনীতির দেশ হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে গেলেও, পণের মতো সামাজিক সমস্যা এখনও ভারতের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। এ প্রসঙ্গে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর পরিসংখ্যান হতবাক করে দেবে সকলকে। 

ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর তথ্য বলছে ২০১৭ থেকে ২০২২ পর্যন্ত সারা দেশে ৩৫ হাজার ৪৯৩ জন বধূকে পণের দাবিতে হত্যা করা হয়েছে। গড়ে হিসেব করলে প্রতিদিন ২০ জনের মৃত্যু।

 

POST A COMMENT
Advertisement