"দিস ইজ় সুভাষ চন্দ্র বোস স্পিকিং টু ইউ ওভার আজ়াদ হিন্দ রেডিও"। এই একটা লাইনই দেশবাসীকে স্বাধীনতা সংগ্রামে অনুপ্রাণিত করার জন্য যথেষ্ট ছিল। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে দেশের হাজার হাজার তরতাজা প্রাণ নিমেষে গর্জে উঠত। এই আজ়াদ হিন্দ রেডিওই একসময় ছিল দেশের স্বাধীনতার সবথেকে বড় অস্ত্র। আগামী ২৩ জানুয়ারি দেশের এই মহানায়কের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী পালন করা হবে। আসুন, নেতাজির আজ়াদ হিন্দ রেডিও সম্পর্কে অজানা কিছু কথা জেনে নেওয়া যাক।
গোটা পৃথিবী জুড়ে তখন বাজছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের রণদামামা। কীভাবে সুভাষ ইংরেজদের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে গেলেন, তা নিয়ে চায়ের টেবিলে ঝড় উঠছে। কালঘাম ছুটেছে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর। ভারতের স্বাধীনতা আসতে তখনও বছর পাঁচেক বাকি। ১৯৪২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রেডিও কাঁপিয়ে ভেসে এল একটা গুরুগম্ভীর কণ্ঠস্বর। "দিস ইজ় সুভাষ চন্দ্র বোস স্পিকিং টু ইউ ওভার আজ়াদ হিন্দ রেডিও"। সেই কণ্ঠস্বরে যে গোটা দেশের মাটি কেঁপে উঠেছিল, তা আজ আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
Speaking from Azad Hind radio, Germany on 31-8-42, Netaji hailed Quit India movement& said ‘I wud request Mr.Jinnah, Mr. Savarkar &all those leaders who still think of a compromise with British..Supporters of British imperialism will naturally become non-entities in a free India’ pic.twitter.com/fnVttTslla
— Sharmistha Mukherjee (@Sharmistha_GK) October 21, 2018
শুধুমাত্র অস্ত্র দিয়েই তো আর যুদ্ধ জেতা যায় না। তার জন্য দরকার পর্যাপ্ত রণকৌশল। ব্রিটিশরাই প্রথমে ইথার তরঙ্গকে কাজে লাগিয়ে ভারতবাসীকে নিজেদের দলে ফেরানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু, তাঁদের সেই উদ্দেশ্য সফল হয়নি। এর পালটা দিয়েছিলেন বাঙালি এই যুবকটি। তিনি গড়ে তুললেন আজ়াদ হিন্দ রেডিও। এই রেডিওর মাধ্যমেই দেশবাসীকে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অনুপ্রাণিত করতে শুরু করলেন। পালটা চাপে ব্রিটিশরাও গেল খানিকটা ঘাবড়ে।
এই প্রসঙ্গে আপনাদের জানিয়ে রাখি, ১৯৪২ সালের ৭ জানুয়ারি প্রথম যাত্রা শুরু করেছিল আজ়াদ হিন্দ রেডিও। তখন এটাকে লোকে বলত, ফ্রি ইন্ডিয়া রেডিও সম্প্রচার। সুভাষের মূল লক্ষ্য ছিল জার্মানির পরিকাঠামোকে কাজে লাগিয়ে দেশবাসীর কাছে রণকৌশল পৌঁছে দেওয়া। সেকারণেই বার্লিন থেকে তিনি এই রেডিও সম্প্রচার শুরু করেন।
Bose formed the Azad Hind Radio. He and other Indians who had gathered in Berlin made regular broadcasts from the Azad Hind Radio beginning in January 1942, speaking in English, Hindi, Bengali, Tamil, Telugu, Gujarati, and Pashto.
— ତାପଶ ନାୟକ 🌈 🌈 🌈 (@TapashNayak14) October 20, 2020
In Germany, Bose and Emily met again.
Page:-2/4 pic.twitter.com/p8fUJhB221
সুভাষের সেই ভাষন আজও শুনলে গায়ে কাঁটা দেয়। সুভাষ বলেছিলেন, "বিশ্বের অন্য জাতিগুলোর কাছে ব্রিটিশরা একদিনের শত্রু হলেও, ভারতবাসীদের কাছে তারা চিরশত্রু। যতক্ষণ পর্যন্ত না ভারতবাসীরা নিজেদের ভাগ্য নিজেরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, ততদিন পর্যন্ত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আমাদের এই লড়াই চলতে থাকবে। যারা আমাদের এই শত্রুকে সরাতে সাহায্য করবে, তাদের আমরাও সাহায্য করব।"
প্রত্যেক সপ্তাহে একবার করে মোট আটটি ভাষায় এই আজ়াদ হিন্দ রেডিও থেকে নিউজ় বুলেটিন পড়া হত। ভাষাগুলো হল ইংরেজি, হিন্দি, বাংলা, তামিল, মরাঠি, পঞ্জাবি, পুশতু এবং উর্দু। আজ়াদ হিন্দ রেডিওতে সুভাষ তাঁর ভাষন শুরু করতেন কমরেড শব্দটি দিয়ে। ক্রমে রেডিও জনপ্রিয়তা দেশবাসীর মধ্যে বাড়তে শুরু করেছিল। আর সেকারণেই ইংরেজ সেনাবাহিনী এই রেডিও নিয়ে অপপ্রচারও চালাতে শুরু করেছিল। সেকারণে তারা অল ইন্ডিয়া রেডিওর নাম বদলে Anti India Radio রেখেছিল। কিন্তু, সুভাষকে আটকানো যায়নি। তাঁর প্রতিটা উচ্চারিত শব্দ যেন দেশবাসীর মর্মে বিঁধে গিয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, "সূর্যোদয়ের আগেই রাতের সবথেকে অন্ধকার অংশটি থাকে। তাই সাহসী হও এবং সংগ্রাম চালিয়ে যাও। স্বাধীনতা প্রায় আমাদের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে।"
পরবর্তী পর্বে সুভাষ চন্দ্র বসুর এমনই কিছু অজানা কাহিনী নিয়ে আমরা আবার ফিরব।