scorecardresearch
 

নেতাজি @ ১২৫ : কে ছিলেন এমিলি, কীভাবেই বা তাঁর প্রেমে পড়লেন সুভাষ

অস্ট্রিয়ায় থাকাকালীন এই এমিলির প্রেমেই পড়েছিলেন সুভাষ চন্দ্র বসু। সে এক বড় অদ্ভূত কাহিনী। আগামী ২৩ জানুয়ারি গোটা দেশজুড়ে এই মহান রাষ্ট্রনায়কের ১২৫তম জন্মজয়ন্তী পালন করা হবে। তার আগে এই মিষ্টি প্রেমের গল্পটা আপনারা শুনবেন না?

Advertisement
নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু
হাইলাইটস
  • ১৯১০ সালের ২৬ ডিসেম্বর অস্ট্রিয়ার ক্যাথলিক পরিবারে জন্ম হয়েছিল এমিলির
  • এমিলি প্রথমে সুভাষের সেক্রেটারি হয়ে এসেছিলেন
  • এমিলিকে হিন্দু মতে বিয়ে করেন সুভাষ চন্দ্র বসু

গত কয়েকদিন ধরে আপনাদের কাছে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর বেশ কিছু অজানা গল্প আপনাদের কাছে তুলে ধরেছি। আজ আপনার বলব এমিলি শেঙ্কলের কথা। আপনার অনেকেই হয়ত এই মহিলার কথা শুনে থাকবেন। অস্ট্রিয়ায় থাকাকালীন এই এমিলির প্রেমেই পড়েছিলেন সুভাষ চন্দ্র বসু। সে এক বড় অদ্ভূত কাহিনী। আগামী ২৩ জানুয়ারি গোটা দেশজুড়ে এই মহান রাষ্ট্রনায়কের ১২৫তম জন্মজয়ন্তী পালন করা হবে। তার আগে এই মিষ্টি প্রেমের গল্পটা আপনারা শুনবেন না?

তবে তার আগে এমিলি শেঙ্কলের প্রথম জীবন সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। জেনে নেওয়া যাক, কীভাবে সুভাষের সঙ্গে তাঁর প্রথম পরিচয় হয়েছিল। ১৯১০ সালের ২৬ ডিসেম্বর অস্ট্রিয়ার ক্যাথলিক পরিবারে জন্ম হয়েছিল এমিলির। তাঁর ঠাকুরদা ছিলেন একজন মুচি, আর বাবা ছিলেন পশু চিকিৎসক। এমিলির উচ্চশিক্ষার প্রতি একেবারেই আগ্রহ ছিল না তাঁর বাবার। তার বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর একটু বেশি বয়সেই তিনি স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু সেকেন্ডারি স্কুলে তাঁর পড়াশোনায় আগ্রহ দেখে তাঁর বাবা যারপরনাই অখুশি হন এবং তাঁকে চার বছরের জন্য নারী মঠে ভর্তি করে দেন। কিন্তু, এমিলি মন থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছিলেন যে তিনি আর যাই করুন না কেন, জীবনে কখনও সন্ন্যাসিনী হবেন না। সেকারণে তিনি আবারও স্কুলে ভর্তি হন এবং ২০ বছর বয়সে তাঁর পড়াশোনা শেষ করেন। এরপর গোটা ইউরোপ মহাদেশ জুড়ে শুরু হয়েছিল 'দ্য গ্রেট ডিপ্রেশন'। এইসময় অনেকেই বেকার হয়ে পড়েছিলেন। সেই তালিকায় ছিলেন এমিলিও।

এমিলি এবং সুভাষের মধ্যে একজন বন্ধু ছিলেন, যিনি এই দুজনকেই খুব ভালো করে চিনতেন। তিনি হলেন ভিয়েনায় বসবাসকারী ভারতীয় পদার্থবিদ ডক্টর মাথুর। সেইসময় সুভাষচন্দ্র বসু বই লিখছিলেন। সেকারণে তাঁর একজন সেক্রেটারি দরকার ছিল যাঁর ইংরেজি ভাষার উপরে যথেষ্ট দক্ষতা থাকবে এবং তাঁর কথা শুনে শুনে লিখতেও পারবেন। এমিলি শর্ট হ্যান্ডটা খুব ভালো করে জানতেন। সঙ্গে ইংরেজি ভাষা এবং টাইপিংয়েও ছিলেন যথেষ্ট চোস্ত। সেকারণে ওই মাথুর সাহেব এমিলিকে সুভাষের কাছে নিয়ে এসেছিলেন। এইভাবেই হয়েছিল প্রথম পরিচয়।

Advertisement

এরপর ধীরে ধীরে দুজনেই দুজনের প্রেমে পড়তে থাকেন। শোনা যায়, অবশেষে ১৯৩৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর এমিলিকে সকলের নজর এড়িয়ে বিয়ে করেছিলেন সুভাষ। যদিও এই বিয়েতে ছিলেন না কোনও হিন্দু পুরোহিত কিংবা প্রত্যক্ষদর্শী। ছিল না কোনও সিভিল রেকর্ডও। জানা গেছে, অস্ট্রিয়ার একটি রিসর্টে হিন্দু মতেই নাকি বিয়ে হয়েছিল সুভাষের। সেই অনুষ্ঠানে এমিলি সিঁদুরও পরেছিলেন। ১৯৩৪ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত তাঁরা সংসার করলেও বছর তিনেকের বেশি তাঁরা একসঙ্গে ছিলেন না। ১৯৪২ সালের নভেম্বর মাসে তাঁদের কন্যা অনিতার জন্ম হয়। শোনা যায়, এরপরেই নাকি পরিবারের কাছে বিয়ে এবং মেয়ের কথা খোলসা করেছিলেন সুভাষ।

বয়সের দিক থেকে এমিলির সঙ্গে সুভাষের প্রায় ১৪ বছরের পার্থক্য ছিল। কিন্তু, বয়স তো আর কখনও প্রেমের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। প্রায় এক দশকের এই সংসার জীবনে চিঠিপত্র আদানপ্রদানের মাধ্যমেই খোঁজখবর নেওয়া চলত। শোনা যায় শেষ চিঠিতে নাকি সুভাষ এমিলিকে লিখেছিলেন, "প্রাণে বেঁচে নাও থাকতে পারি, তোমাকে আর নাও দেখা দিতে পারি, ফাঁসি অথবা গুলি খেতে পারি। তবুও জানবে তুমি আমার হৃদয়ে রয়েছো। এই জন্মে না হলেও পরের জন্মে আমরা একসঙ্গে থাকব।"

তবে এমিলির শেষ জীবনটা বেশ কষ্টের ছিল। গোটা পরিবারে তিনি একাই অর্থ উপার্জন করতেন এবং মেয়েকে বড় করে তুলেছিলেন। তিনি ট্রাঙ্ক এক্সচেঞ্জে শিফট ডিউটি করতেন। সুভাষের দাদা শরৎ চন্দ্র বসু নাকি এমিলিকে মেনে নিয়েছিলেন এবং তাঁকে বসু পরিবারে স্বাগত জানিয়েছিলেন। কিন্তু, এমিলি কখনও ভারতে পা রাখেননি। মেয়ে অনিতা পাফ জানিয়ছেন, তাঁর মা নাকি এই সম্পর্কটা নিয়ে খুব একটা বেশি কথা বলতে চাইতেন না। সেইসঙ্গে তিনি সকলের অগোচরে থাকতেই বেশি পছন্দ করতেন। অবশেষে সুভাষের সেই শেষ চিঠিকে বুকে আঁকড়ে ধরেই ১৯৯৬ সালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

Advertisement