নেতাজি @ ১২৫ : মহানিষ্ক্রমণের পথে চলে গেলেন সুভাষ, জানতেন একমাত্র এই মহিলাই

সেদিন নেতাজির ঘরে শুয়েছিলেন তাঁরই ভাইঝি ইলা বসু। সুভাষের সেজ দাদা সুরেশ চন্দ্র বসুর দ্বিতীয়া কন্যা ছিলেন ইলাদেবী। নেতাজিকে তিনি রাঙা কাকু বলে সম্বোধন করতেন। নেতাজিও তাঁকে প্রচন্ড ভালোবাসতেন। তো, সেদিন রাত্তিরবেলা কী হয়েছিল, আসুন সবিস্তারে সেই ঘটনার কথা জানা যাক।

Advertisement
নেতাজি @ ১২৫ : মহানিষ্ক্রমণের পথে চলে গেলেন সুভাষ, জানতেন একমাত্র এই মহিলাইনেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু
হাইলাইটস
  • ঠিক ৮০ বছর আগে আজকের দিনেই নিজের পৈতৃক বাড়ি থেকে শেষবারের জন্য বাইরে পা রেখেছিলেন সুভাষ
  • সেদিন নেতাজির ঘরে শুয়েছিলেন তাঁরই ভাইঝি ইলা বসু
  •  আদেশ ছিল, তিনি চলে যাওয়ার পরেই যেন তাঁর ঘরের আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়

ভারতের স্বাধীনতা ইতিহাসে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর অবদান যে কতখানি, সেটা আজ আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ব্রিটিশদের হাত থেকে ভারতবর্ষকে মুক্ত করার জন্য তিনি দেশ থেকে দেশান্তরে দৌড়ে বেড়িয়েছেন। হাত মিলিয়েছিলেন নাৎসি স্বৈরাচারী হিটলারের সঙ্গেও। এই প্রসঙ্গে আপনারা সকলেই জানেন, নেতাজি'র 'মহানিষ্ক্রমন'-এর কথা। ব্রিটিশদের চোখে যে ধুলো দিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন, সেকথা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু, সেদিন রাত্রে নেতাজি সেজে তাঁরই ঘরে আলো জ্বেলে শুয়েছিলেন এক মহিলা। এই গল্পটা কি আপনারা জানেন? আগামী ২৩ জানুয়ারি গোটা দেশজুড়ে এই মহান রাষ্ট্রনায়কের ১২৫তম জন্মজয়ন্তী পালন করা হবে। আসুন, তার আগে এই গল্পটা একবার জেনে নেওয়া যাক।

সেদিন নেতাজির ঘরে শুয়েছিলেন তাঁরই ভাইঝি ইলা বসু। সুভাষের সেজ দাদা সুরেশ চন্দ্র বসুর দ্বিতীয়া কন্যা ছিলেন ইলাদেবী। নেতাজিকে তিনি রাঙা কাকু বলে সম্বোধন করতেন। নেতাজিও তাঁকে প্রচন্ড ভালোবাসতেন। তো, সেদিন রাত্তিরবেলা কী হয়েছিল, আসুন সবিস্তারে সেই ঘটনার কথা জানা যাক।

সালটা ১৯৪১। ১৬ জানুয়ারির রাত। অর্থাৎ ঠিক ৮০ বছর আগে আজকের দিনেই নিজের পৈতৃক বাড়ি থেকে শেষবারের জন্য বাইরে পা রেখেছিলেন সুভাষ। প্রথমে ঠিক ছিল যে দাদা শরৎ বসুর গাড়ি নিয়েই রওনা দেবেন নেতাজি। কিন্তু, সেই গাড়িটা ইংরেজদের কাছে বেশ পরিচিত ছিল। এরপর ঠিক হয়, তিনি শিশির বসুর গাড়ি চেপেই রওনা দেবেন।

এই গাড়িতে চেপেই মহানিষ্ক্রমনের পথে গিয়েছিলেন সুভাষ চন্দ্র বসু

যেমন পরিকল্পনা ঠিক তেমন কাজ। সন্ধেবেলা থেকেই চুপিসারে চলছিল বেরনোর প্রস্তুতি পর্ব। রাত তখন ১টা বেজে ৩৫ মিনিট। মহম্মদ জিয়াউদ্দিনের ছদ্মবেশ ধরে নেন সুভাষ।  আদেশ ছিল, তিনি চলে যাওয়ার পরেই যেন তাঁর ঘরের আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়। সেই আদেশের বিন্দুমাত্র অমান্য করেননি ইলাদেবী। সকলের সন্দেহ এড়াতে তিনি নিজেই ওই ঘরে একঘণ্টা বা তার বেশি সময় ধরে চুপচাপ শুয়ে থাকেন। এমনকী নেতাজি চলে যাওয়ার পরও তিনি সকলের সন্দেহ এড়াতে দিনদশেক তাঁকে খাবার দেওয়ার ভান করেন।

Advertisement

এবার আসা যাক সেই মাহেন্দ্রক্ষণের কথায়। রাতে তিনি আগে থেকে তাঁর রাঙা কাকুর জন্য ফ্লাক্সে গরম কফি করে রেখেছিলেন। সেই কফি খেয়েই ঘর থেকে দ্রুত পায়ে তিনি বেরিয়ে আসেন। দরজার ঠিক বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিলেন ইলা। তাঁর কপালে ছোট্ট একটা চুমু এঁকে বলেছিলেন, ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুন। এরপরই তিনি গাড়িতে চড়ে বসেন। 

এই প্রসঙ্গে আপনাদের জানিয়ে রাখি, ১৯৩৭ সালে ৪৬৮০ টাকা দিয়ে গাড়িটি কিনেছিলেন শিশির বসু। কলকাতার নেতাজি ভবনে আজও সেই গাড়ি রাখা আছে। আপনারা চাইলে একবার দেখে আসতেই পারেন। জার্মানির ওয়ান্ডারার গাড়ি। নম্বর বিএলএ ৭১৬৯। চালকের আসনে ছিলেন শিশিরকুমার বসু। পিছনে নেতাজি। এই গাড়ি চড়েই কলকাতা থেকে গোমো পৌঁছেছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু।

পরবর্তীকালে এই ইলা বসুর সঙ্গে মণীন্দ্র নাথ দত্তের বিয়ে হয়েছিল। ১৯৪৩ সালে তিনি এক পুত্রসন্তানের জন্মও দিয়েছিলেন। কিন্তু, সেই মাসেই হঠাৎ মারা যান ইলাদেবী। ১৯৭৫ সালে শিশির বসুর 'মহানিষ্ক্রমণ' বইটি প্রকাশিত হয়েছিল। সেই বইতেই ইলাদেবী সম্পর্কে জানা গেছে। 

এই প্রসঙ্গে আরও একটা গল্প আপনাদের বলি। ইলাদেবী তাঁর রাঙা কাকাবাবুর জন্য প্রেসিডেন্সি জেলে নিয়মিত পান ও মশলার দুটো কৌটো নিয়ে যেতেন। সুভাষ চন্দ্রের সেই দিনগুলোয় বাইরের জগতের সঙ্গে একমাত্র যোগসুত্র ছিলেন ইলা। সেই সময় বসু পরিবারের অভ্যা স ছিল ভাজা মশলা ও মিঠে পান দিয়ে মুখশুদ্ধি করার। জেলেও নেতাজি এই অভ্যেযস বজায় রেখেছিলেন। অনেক সময় এমনও হয়েছে যে ওই কৌটোর মধ্যেই বিভিন্ন গোপন বার্তা সুভাষের কাছে পাঠানো হত। কিন্তু, ইলাদেবীর প্রত্যুৎপন্নমতিত্বে কোনওবারই তিনি ধরা পড়েননি।

POST A COMMENT
Advertisement