
নয়ডার কুখ্যাত নিঠারি হত্যাকাণ্ডের প্রায় দুই দশক পর অবশেষে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে মুক্তি পেলেন মামলার একমাত্র আসামি সুরিন্দর কোলি। ২০০৫-০৬ সালের সেই ভয়ঙ্কর অপরাধের ঘটনায় ন্যায়বিচারের প্রত্যাশায় প্রায় উনিশ বছর ধরে অপেক্ষা করা পরিবারগুলো আজও উত্তরহীন এক প্রশ্নের সামনে দাঁড়িয়ে, 'যদি কোলি দোষী না হন, তবে আমাদের বাচ্চাদের হত্যা করল কে?'
২০০৫ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে নয়ডার সেক্টর ৩১-এর ডি-৫ নম্বর বাংলোর পেছনের ড্রেন থেকে উদ্ধার হয়েছিল অন্তত ২২ শিশুর হাড়, খুলি, পোশাক এবং চপ্পল। শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল সেই হত্যাকাণ্ড, যা পরবর্তীতে 'নিঠারি কিলিংস' নামে পরিচিত হয়। ওই বাংলোটি ছিল ব্যবসায়ী মনিন্দর সিং পান্ধেরের, আর তার বাড়ির গৃহকর্মী ছিলেন সুরিন্দর কোলি। পুলিশ তদন্তে প্রথমে তাদের দু’জনের বিরুদ্ধেই ওঠে ধর্ষণ, হত্যা এবং শিশু পাচারের অভিযোগ।
২০০৭ সালে কোলিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, পরে আবেদনে সেই সাজা স্থগিত হয়। গত বছর দুটি মামলায় প্রমাণের অভাবে তিনি খালাস পান। এবার সুপ্রিম কোর্ট তাঁর বিরুদ্ধে শেষ মামলাতেও রায় দিল বেকসুর খালাসের। বিচারপতি বিক্রম নাথের বেঞ্চ জানায়, 'নিরাময়মূলক আবেদন মঞ্জুর করা হল। আবেদনকারীকে অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হল। তাঁকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হবে।'
এই রায়ের পর শোকে স্তব্ধ নিঠারির ভুক্তভোগী পরিবারগুলি। ৬০ বছর বয়সি এক মায়ের প্রশ্ন, 'যদি মনিন্দর আর কোলি কেউই দোষী না হয়, তাহলে কি ভূত এসে আমাদের বাচ্চাদের মেরেছে?' তাঁর গলায় তীব্র ক্ষোভ ও অসহায়তা।
খুন হয়ে যাওয়া এক শিশুর বাবা এএনআই-কে বলেন, 'যদি তারা দোষী না হয়, তাহলে এত বছর ধরে তাদের জেলে রাখা হল কেন? যারা তাদের গ্রেফতার করেছিল, তাদের জবাবদিহি করা উচিত। আমাদের সন্তানদের খুনি কে, সেটা কি আমরা কখনও জানতে পারব না?'
সেই সময়ের তদন্তে পুলিশ জানিয়েছিল, কোলি শিশুদের লোভ দেখিয়ে ডাকত। তারপর নৃশংসভাবে খুন করত। দেহাবশেষ পিছনের নর্দমায় ফেলে দিত। আদালতে একাধিক সাক্ষ্যপ্রমাণ দেওয়া হলেও, বছর ঘুরে প্রমাণের দুর্বলতায় আজ সব মুছে গেছে।
নিঠারির সেই বাংলো, যার পিছনে পাওয়া গিয়েছিল হাড়গোড় ও পোশাকের স্তূপ, আজও নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে আছে এক ভয়াবহ ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে। কিন্তু যাদের সন্তানদের দেহাবশেষ সেখান থেকে উদ্ধার হয়েছিল, তাঁদের জীবনে ন্যায়বিচারের আলো এখনও অধরা।