ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা ও উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের সংযোগ রক্ষায় বরাবরই গুরুত্ব পেয়েছে চিকেন নেক করিডর। এই করিডর শত্রুপক্ষের নজরে থাকার কারণে বিকল্প রাস্তাও খুঁজছিল দিল্লি। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এবার ভুটানের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে দুটি নতুন রেলপথ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে ভারত। একটি রেলপথ উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ির বানারহাট থেকে ভুটানের সামসী পর্যন্ত, অপরটি নিম্ন অসমের কোকরাঝাড় থেকে গেলেফু পর্যন্ত পৌঁছাবে।
এই দুই রেলপথ চালু হলে শুধু ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেই নয়, কোনও জরুরি পরিস্থিতিতেও উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে সহজ যোগাযোগ রক্ষা করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও এই রেলপথ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
প্রাক্তন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা আধিকারিক এমসি গুপ্তা জানান, বানারহাট ও কোকরাঝাড়— এই দুই জায়গার অবস্থান কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই দুই রুট দিয়ে ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে ভুটান হয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যাওয়া বা সেখান থেকে উত্তরবঙ্গে আসা সহজ হবে। বিশেষত চিন সীমান্তের দিকে দ্রুত সেনা ও রসদ পাঠানোর পথ হিসেবেও এই রেলপথ বড় ভূমিকা নিতে পারে। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে সেবক থেকে সিকিমের রংপো পর্যন্ত নতুন রেললাইনও, যা ভারত-চিন সীমান্তে আরও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।
এছাড়াও বিকল্প হিসেবে হিলি-তুরা সড়কপথের গুরুত্বও বাড়ছে। সম্প্রতি অসম হয়ে উত্তর-পূর্বের সড়ক যোগাযোগ অনেক উন্নত করা হয়েছে। মণিপুরে নতুন রেললাইন তৈরির কাজও সীমান্ত নিরাপত্তায় সাহায্য করছে। সব মিলিয়ে বানারহাট-সামসী ও কোকরাঝাড়-গেলেফু রেলপথ কেবল প্রতিরক্ষা নয়, কূটনৈতিক পরিসরেও ভারতের শক্তি বাড়াবে।
এই দুটি রেল প্রকল্পের জন্য ইতিমধ্যেই ভারতে ও ভুটানের মধ্যে চুক্তি হয়েছে। দুর্গা সপ্তমীর দিন সরকারি ভাবে এই প্রকল্পের ঘোষণা করা হয়। মোট ৪,০৩৩ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ হয়েছে, যার মধ্যে বানারহাট-সামসী রেলপথে খরচ ধরা হয়েছে ৫৭৭ কোটি টাকা এবং কোকরাঝাড়-গেলেফু রেলপথে ৩,৪৫৬ কোটি টাকা। তিন বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
পর্যটনের ক্ষেত্রেও এই নতুন রেলপথ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। ডুয়ার্স ও ভুটানে যাতায়াতে সুবিধা বাড়বে। ইতিমধ্যেই ভুটান সরকার সামসীকে একটি শিল্পকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনায় হাত দিয়েছে। এই রেললাইন আমদানি-রপ্তানির দিক থেকেও নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দেবে।
প্রস্তাবিত বানারহাট-সামসী রেলপথের দৈর্ঘ্য ২০ কিলোমিটার। রুটে দুটি স্টেশন ছাড়াও তৈরি হবে একটি বড় সেতু, ২৪টি ছোট সেতু এবং ৩৭টি রোড আন্ডারব্রিজ। সব মিলিয়ে এই রেলপথ ভারত-ভুটান সম্পর্ক ও উত্তর-পূর্ব ভারতের ভবিষ্যতের দিকেই এক বড় পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।