North Sikkim Cloudburst Disaster 2025: উত্তর সিকিমের মংগন জেলা ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে। শুক্রবার রাত থেকে লাগাতার অতি ভারী বৃষ্টি এবং শনিবার সন্ধ্যায় মেঘভাঙা বৃষ্টির ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। চুংথাং থেকে শুরু করে ফিদাং পর্যন্ত একাধিক জায়গায় ধস নেমেছে। এই অবস্থায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে সমস্ত রাস্তা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা। সরকারি হিসেবে লাচেন ও লাচুংয়ে আটকে পড়েছেন প্রায় ১৪৬৫ জন পর্যটক।
লাচেনে প্রায় ১১৫ জন এবং লাচুংয়ে প্রায় ১৩৫০ জন পর্যটক আটকে রয়েছেন। সিকিম সরকার নির্দেশ জারি করে পর্যটকদের হোটেল ও হোম-স্টেতেই নিরাপদে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। তবে বিপদের শেষ নেই। বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকেই। মোবাইল নেটওয়ার্কও বন্ধ, ফলে বাইরে থাকা আত্মীয়-স্বজনরা তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না।
চুংথাং থেকে মুন্সিথাং যাওয়ার পথে বৃহস্পতিবার একটি পর্যটকবাহী গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায় ১০০০ ফুট নিচে তিস্তা নদীতে পড়ে যায়। গাড়িতে থাকা ১১ জন পর্যটকের মধ্যে দু'জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। একজনের মৃত্যু হয়েছে। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন ৮ জন, যাঁদের সন্ধানে শনিবার সকাল থেকেই জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (NDRF) উদ্ধার তল্লাশি চালাচ্ছে। যদিও টানা বৃষ্টির কারণে উদ্ধার কাজে ব্যাঘাত ঘটছে।
উদ্ধার হওয়া দু’জন পর্যটকই ওড়িশার বাসিন্দা—শ্যাম সুপ্রতিম নায়েক ও সৈরাজ জানা। বর্তমানে তাঁরা গ্যাংটকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। নিখোঁজ পর্যটকদের মধ্যে রয়েছেন ওড়িশার অজিতকুমার নায়েক, সুনীতা নায়েক, সুশীল জানা, ইতশ্রী জানা। ত্রিপুরার দেবজ্যোতি দেব এবং স্বপ্ননীল দেব, ও উত্তরপ্রদেশের কৈশেলেন্দ্র প্রতাপ সিংহ ও অঙ্কিতা সিংহ। গাড়িটির চালক পাসাং ডেনু শেরপা সিকিমের সিংহিক এলাকার বাসিন্দা।
চুংথাং থেকে সাঙ্কালান যাওয়ার রাস্তা সম্পূর্ণ ধসে গেছে। মেরামতির কাজ শুরুই করা যাচ্ছে না টানা বৃষ্টির কারণে। প্রশাসন জানিয়েছে, উদ্ধারকাজ শুরু করতে হলে বৃষ্টি থামা দরকার, কিন্তু আবহাওয়ার পূর্বাভাসে সেই আশাও ক্ষীণ।
অন্যদিকে, তিস্তার জলস্তর দ্রুত বাড়তে থাকায় নতুন করে প্লাবনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফিদাং সহ আরও কিছু এলাকা জলের নিচে চলে যেতে পারে। এমনকি সিংতাম শহরও যদি বৃষ্টিপাত এভাবে অব্যাহত থাকে, তাহলে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সব মিলিয়ে পুরো উত্তর সিকিম এখন কার্যত বিচ্ছিন্ন ও বিপর্যস্ত। প্রশাসন, সেনা ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী যৌথভাবে কাজ চালালেও, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রাকৃতিক সহায়তা না পেলে উদ্ধার কার্য প্রায় অসম্ভব।