ওড়িশার পুরীতে রথযাত্রায় চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা। পদপৃষ্টের তো ঘটনা ঘটার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। একাধিক ভক্ত আহত হয়েছেন। তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দুর্ঘটনার পর আহতদের দ্রুত চিকিৎসার জন্য নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রথ টানার সময় দুর্ঘটনায় একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। জানা গিয়েছে,বলভদ্রের রথ টানার সময় এই ঘটনা ঘটেছে। প্রথমে এই রথটিই টানা হচ্ছিল।
এ দিন জগন্নাথ, বলভদ্র এবং দেবী সুভদ্রার রথের দর্শন করেছিলেন পুরীর শঙ্করাচার্য স্বামী নিশ্চলানন্দ সরস্বতী এবং তাঁর শিষ্যরা। পুরীর রাজা 'ছেরা পাহাড়া' (রথ পরিষ্কার করার) আচার পালন করেন। পরে বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে রথ টানার কাজ শুরু হয়। রথের মধ্যে কাঠের ঘোড়া স্থাপন করা হয়। সেবায়েতরা রথটিকে সঠিক দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এই সময় রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু তিনটি রথকে 'প্রদক্ষিণ' করেন। দেবতাদের প্রণাম করেন।
প্রায় ১০ লক্ষ ভক্ত রথযাত্রায় অংশ নিয়েছিলেন
মনে করা হচ্ছে, প্রায় ১০ লক্ষ ভক্ত রথের উৎসবে অংশ নিয়েছিলেন। ভক্তদের বেশিরভাগই ওড়িশা এবং প্রতিবেশী রাজ্যের। বাংলা থেকে বহু মানুষ শামিল হয়েছিলেন পুরীর রথযাত্রায়। এদিকে ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন মাঝি পুরী পৌঁছন। পুরীর শঙ্করাচার্য স্বামী নিশ্চলানন্দ সরস্বতীর সঙ্গে দেখা করেন।
রথযাত্রার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা পুরাণের কথা। স্নান যাত্রার পর নিভৃতবাস থেকে বেড়িয়ে আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে রথে চড়ে দাদা বলরাম ও বোন সুভদ্রাকে নিয়ে মাসির বাড়ি যান জগন্নাথদেব। আবার মনে করা হয় দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর কৃষ্ণের বৃন্দাবন প্রত্যাবর্তনের স্মরণে এই উৎসব আয়োজিত হয়ে থাকে। রথযাত্রা উপলক্ষে বিভিন্ন স্থানে মেলার আয়োজন করা হয়। এমনকি পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চলে এই উৎসব উপলক্ষে যাত্রাপালাও মঞ্চস্থের রীতি বেশ জনপ্রিয়।
রথযাত্রা উপলক্ষে, পুরীর রথে জগন্নাথ মহাপ্রভুর দর্শন হওয়া খুব শুভ বলে বিবেচিত। জগনাথ, শুভদ্রা ও বলভদ্রর জন্য তিনটি রথ তৈরি করা হয়। যা দেখার জন্য ফি বছর ভিড় জমান লক্ষ লক্ষ ভক্ত ও দর্শনার্থী। এটা বিশ্বাস করা হয় যে, কোনও ব্যক্তি যদি রথযাত্রায় পূর্ণ নিষ্ঠার সঙ্গে অংশ নেন, তাহলে জন্ম ও মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্ত হয়ে উঠতে পারেন তিনি। শোনা যায়, শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে রথে চড়ে দাদা বলরাম ও বোন সুভদ্রাকে দেখতে যান জগন্নাথদেব। সেই উপলক্ষ্যে ওই তিথি মেনে গুন্ডিচা মন্দিরে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রার আয়োজন হয়। এই যাত্রাকে সোজা রথযাত্রা বলা হয়। এরপর সাত দিন পর মন্দির থেকে দেবতার ফিরতি যাত্রাকে উল্টোরথ যাত্রা বলা হয়। যদিও মাসির বাড়ি যাওয়া নিয়ে রথ যাত্রার আরও এতটি পৌরাণিক কাহিনিও শোনা যায়। তবে জগন্নথধাম পুরী ঘিরে প্রচলিত রয়েছে একাধিক কাহিনি।