দেশের ইতিহাসে অন্যতম বড় রেল দুর্ঘটনা। শুক্রবার সন্ধ্যায় ওড়িশার বালেশ্বরে তিনটি ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এখনও পর্যন্ত ২৮০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। তবে, সরকারি তরফে মৃত্যুর সংখ্যা আর একটু কম। বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস, শালিমার-চেন্নাই সেন্ট্রাল করমণ্ডল এক্সপ্রেস এবং একটি মালগাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। আজ সকালে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। তিনি দুর্ঘটনার কারণ জানতে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত করার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'দুর্ঘটনার কারণ জানতে উচ্চ-পর্যায়ের তদন্ত করা হবে এবং রেল নিরাপত্তা কমিশনারও একটি স্বাধীন তদন্ত করবেন। এখন আমাদের ফোকাস উদ্ধার এবং ত্রাণ কার্যের ওপর।'
যেভাবে ঘটল তিনটি ট্রেনের দুর্ঘটনা:
শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ বাহনাগা বাজার স্টেশন থেকে ৩০০ মিটার দূরে শালিমার-চেন্নাই সেন্ট্রাল করমণ্ডল এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হলে মারাত্মক সংঘর্ষ ঘটে। করমণ্ডল এক্সপ্রেসের সঙ্গে পাশের ট্র্যাকে দাঁড়িয়ে থাকা মালগাড়ির সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ এতটাই ভয়ানক ছিল যে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন মালগাড়ির উপরে উঠে যায়। এছাড়াও, করমণ্ডল এক্সপ্রেসের পিছনের বগিগুলি তৃতীয় ট্র্যাকে চলে যায়। সেই সময় তীব্র গতিতে তৃতীয় ট্র্যাকে বিপরীত দিক থেকে আসা বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস ধাক্কা খায় করমণ্ডলের লাইনচ্যুত কোচগুলির সঙ্গে।
একের পর এক বিস্ফোরণের মতো শব্দ শোনা গেছে
স্থানীয়রা জানান, তাঁরা একটানা বিকট শব্দ শুনতে পান। একের পর এক বিকট বিস্ফোরণের মতো শব্দ শুনে ঘটনাস্থলে পৌঁছন তাঁরা। তাঁরা গিয়ে দেখেন ট্রেনগুলো লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে আছে এবং তাঁদের সামনে ইস্পাত-লোহা ও অন্যান্য ধাতুর এলোমেলো ভাঙা স্তূপ ছাড়া আর কিছুই নেই।
দুর্ঘটনার পরিস্থিতি এমন ছিল:
করমণ্ডল এক্সপ্রেসে র B2 থেকে B9 পর্যন্ত বগি উল্টে গেছে। একই সময়ে A1-A2 কোচও ট্র্যাকে উল্টে যায়। যেখানে, কোচ B1 এর পাশাপাশি ইঞ্জিন লাইনচ্যুত এবং শেষে কোচ H1 এবং GS কোচ ট্র্যাকে থেকে যায়। অর্থাৎ করমণ্ডল এক্সপ্রেসেই মৃত্যুর সংখ্যা সর্বাধিক হতে পারে। এসি বগিতে প্রাণহানির সম্ভাবনাও রয়েছে।
বেঙ্গালুরু-হাওড়ার এতগুলি কোচ ক্ষতিগ্রস্ত
বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসেরও একটি জিএস কোচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একই সঙ্গে পেছনের জিএস কোচ ও দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে উল্টে যায়। কোচ A1 থেকে ইঞ্জিন পর্যন্ত বগিটি ট্র্যাকে রয়ে গেছে।
রেলের মুখপাত্র অমিতাভ শর্মা বলেছেন, সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ বালেশ্বরের কাছে শালিমার-চেন্নাই করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ১০-১২টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে বিপরীত ট্র্যাকে পড়ে। কিছুক্ষণ পর যশবন্তপুর থেকে হাওড়াগামী আরেকটি ট্রেন ওই লাইনচ্যুত কোচগুলির সঙ্গে ধাক্কা খায়, ফলে তারও ৩টি বগি লাইনচ্যুত হয়। একটি মালগাড়িও দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল। কারণ চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেসের কয়েকটি কোচ লাইনচ্যুত হওয়ার পরে মালগাড়িতে ধাক্কা মারে।'
সুপারফাস্ট ট্রেনের উল্টে যাওয়া বগিতে এখনও বহু মানুষের আটকে থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে। লাইনচ্যুত বগির নীচ থেকে মৃতদেহ বের করতে গ্যাস কাটার ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রায় ৯০০ জন আহত যাত্রীকে বালেশ্বর, ময়ূরভঞ্জ, ভদ্রক, জাজপুর এবং কটক জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।