বারাণসীর ভেলুপুর এলাকার ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের কাশ্মীরিগঞ্জের বাড়ি নম্বর বি ২৪/১৯। এখানে রামকমল দাস নামে এক বাবার ৫০টি সন্তান রয়েছে বলে জানা গেছে। বড় ছেলের বয়স ৭২ বছর এবং ছোট ছেলের বয়স ২৮ বছর। এই কথা শুনে প্রশ্ন জাগে যে এটা কীভাবে সম্ভব? এটা কি কোনও অনিয়ম নাকি এর পিছনে অন্য কোনও কারণ আছে? এই সত্যটি জানতে, আজতক সেই ঠিকানায় পৌঁছেছিল।
বিষয়টি সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে আলোড়ন তুলেছে
আসলে, গত কয়েকদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভোটার তালিকার একটি পেজ ভাইরাল হচ্ছে। দাবি করা হচ্ছে যে বারাণসীতে একই ঠিকানায় বসবাসকারী ৫০ জনেরও বেশি লোকের বাবার নাম রামকমল দাস। উত্তর প্রদেশ কংগ্রেস তাদের অফিসিয়াল 'এক্স' হ্যান্ডেলে এই তালিকাটি শেয়ার করে নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পর বিষয়টি আলোচনায় আসে।
वाराणसी में चुनाव आयोग का एक और चमत्कार देखिए!
— UP Congress (@INCUttarPradesh) August 12, 2025
मतदाता सूची में एक ही व्यक्ति 'राजकमल दास' के नाम पर 50 बेटों का रिकॉर्ड दर्ज है!
सबसे छोटा बेटा राघवेन्द्र- उम्र 28 साल,
और सबसे बड़ा बेटा बनवारी दास- उम्र 72 साल!
क्या चुनाव आयोग इस गड़बड़ी को भी सिर्फ त्रुटि कहकर टाल देगा या… pic.twitter.com/jVmucDKUOe
ইউপি কংগ্রেস লিখেছে, 'বারাণসীতে নির্বাচন কমিশনের আরেকটি অলৌকিক ঘটনা দেখুন! ভোটার তালিকায় 'রাজকমল দাস' নামে এক ব্যক্তির ৫০ জন ছেলে! সবচেয়ে ছোট ছেলের নাম রাঘবেন্দ্র - বয়স ২৮ বছর, এবং বড় ছেলের নাম বনওয়ারী দাস - বয়স ৭২ বছর! নির্বাচন কমিশন কি এই অসঙ্গতিকে কেবল একটি ত্রুটি বলে উড়িয়ে দেবে নাকি স্বীকার করবে যে প্রকাশ্যে জালিয়াতি চলছে? ভোট চুরির এই ঘটনাটি বলে দিচ্ছে যে কেবল বারাণসীর মানুষই নয়, সমগ্র গণতন্ত্র প্রতারিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন কখন এর জন্য হলফনামা দিচ্ছে?'
ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত বিবরণ
ভাইরাল হওয়া এই ভোটার তালিকাটি ২০২৩ সালের পৌর কর্পোরেশন নির্বাচনের তালিকা। এতে ২০৬ কন্যা প্রাথমিক ও প্রাক-মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, শঙ্খুলধারা এবং ৭২৫ নম্বর ভোটকেন্দ্র, বুথ নম্বর ১-এর উল্লেখ করা হয়েছে। এলাকার নাম 'বি-০২৪ কাশ্মীরিগঞ্জ' হিসেবে নথিভুক্ত। বি ২৪/১৯ ঠিকানায় তালিকায় ৫০ জনেরও বেশি নাম নথিভুক্ত। সকলের বাবার নাম 'রামকমল দাস'। যদি আমরা বয়স দেখি, ১৩ জনের বয়স ৩৭ বছর, ৫ জনের বয়স ৩৯ বছর, ৪ জনের বয়স ৪০ বছর, অনেকের বয়স ৪২ বছর, কারও বয়স ৭২ বছর এবং সবচেয়ে ছোটটির বয়স ২৮ বছর। প্রথম নজরে, এটি যে কারও জন্যই অবাক করার মতো পরিসংখ্যান - একই বাবার এত ছেলে, এবং তাও এত ভিন্ন বয়সের?
ঘটনাস্থল তদন্তে বেরিয়ে এসেছে ঐতিহ্যের গল্প
আজতক যখন এই ঠিকানায় পৌঁছায়, তখন দেখা যায় এটি কোনও সাধারণ বাড়ি নয়, বরং 'রাম জানকী মঠ মন্দির'। এই মঠটি আচার্য রামকমল দাস জি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এখানে গুরু-শিষ্যের ঐতিহ্য, যেখানে পার্থিব জীবন ত্যাগকারী শিষ্যরা তাদের গুরুকে তাদের পিতা বলে মনে করেন। মঠের ব্যবস্থাপক রামভারত শাস্ত্রী ভোটার তালিকার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন যে, আমাদের আশ্রমে যে কেউ ত্যাগ এবং বিচ্ছিন্ন জীবন গ্রহণ করে, সে তার পুরনো সম্পর্ক থেকে মুক্তি পায়। এমন পরিস্থিতিতে, সে গুরুকে তার পিতা বলে মনে করে। নথিপত্রে, বাবার নামের পরিবর্তে গুরুর নাম লিপিবদ্ধ থাকে। এটি একটি সম্পূর্ণ আইনি এবং ঐতিহ্যবাহী প্রক্রিয়া। তিনি বলেন, এখানে আসা দরিদ্র, অনাথ বা দুর্বল মানুষদের গুরু তাদের নাম দিয়ে শিষ্য হিসেবে গ্রহণ করেন। এই কারণেই ভোটার তালিকায় একই পিতা হিসেবে এত নাম লিপিবদ্ধ থাকে।
আইনি স্বীকৃতিও
মঠের প্রবীণ শিষ্য অভিরাম জানান যে এটি স্বেচ্ছাচারী নয়, বরং আইনত বৈধ ঐতিহ্য। ২০১৬ সালে, ভারত সরকার স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, বিচ্ছিন্ন জীবন গ্রহণকারী সাধু-ঋষিরা তাদের সমস্ত সরকারি নথিতে পিতার নামের পরিবর্তে গুরুর নাম লিখতে পারবেন। এই বিধানটি বিশেষ করে সন্ন্যাসী এবং সাধুদের জন্য, যাদের পারিবারিক জীবনের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। অভিরাম বলেন যে, প্রতিবার নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গেই এই ধরনের মামলাগুলিকে রাজনৈতিক রং দেওয়া হয় এবং মঠ এবং মন্দিরের নাম উত্থাপন করা হয়, যেখানে বাস্তবে ঐতিহ্য এবং আইনে স্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে।
সাধু সমাজের তীব্র প্রতিক্রিয়া
বারাণসীর এই মামলায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে অখিল ভারত সন্ত সমিতিও। সমিতির জাতীয় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী জিতেন্দ্রানন্দ সরস্বতী বলেছেন যে গুরুকুলের ছাত্র, ব্রহ্মচারী এবং সন্ত ঐতিহ্যের অনুসারীদের নথিতে পিতার পরিবর্তে গুরুর নাম থাকা একটি চিরন্তন ঐতিহ্য। কংগ্রেস তথ্য না জেনেই অভিযোগ করছে, যার মাধ্যমে হিন্দু ধর্মীয় নেতাদের বদনাম করার চেষ্টা করছে। আমরা এই ধরণের সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে মামলা করব। স্বামী জিতেন্দ্রানন্দ বলেন যে এই প্রথা কেবল কাশীতেই নয়, সমগ্র ভারতে শতাব্দী ধরে প্রচলিত। এটি কোনও সমস্যা নয়, বরং ধর্ম ও ঐতিহ্যের একটি অংশ।