পহেলগাঁও হামলার বদলা নিয়েছে ভারত। অপারেশন সিঁদুরের অধীনে পাকিস্তানের গভীরে জঙ্গি শিবিরগুলিকে টার্গেট করে মিসাইল হামলা চালানো হয়েছে। হামলা চালাতে ভারতের পছন্দের অস্ত্র ছিল স্ক্যাল্প ক্রুজ মিসাইল এবং হ্যামার প্রিসিশন-গাইডেড বোমা। এই দুটিই রাফাল যুদ্ধবিমানে সজ্জিত ছিল বলে সূত্র জানিয়েছে। মধ্যরাতের কিছুক্ষণ পরেই পাকিস্তানের ৯টি স্থানে মিসাইল বৃষ্টি করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে যথাক্রমে জইস-ই-মহম্মদ এবং লস্কর-ই-তইবার শক্ত ঘাঁটি বাহাওয়ালপুর এবং মুরিদকে। বিমান বাহিনী ছাড়া ভারতের নৌবাহিনী এবং সেনাবাহিনীও এই অভিযানে জড়িত ছিল।
কৌশলগত ভাবেই অপারেশন সিঁদুররে জন্য স্ক্যাল্প ক্রুজ মিসাইল এবং হ্যামার প্রিসিশন-গাইডেড বোমা বেছে নেওয়া হয়েছিল। যাতে নির্দিষ্ট জঙ্গি ঘাঁটিগুলিতেই হামলা করা যায়। কোনও সাধারণ নাগরিক যাতে হতাহত না হয় সেটাও মাথায় রাখা হয়েছিল। ২০১৯ সালে বালাকোট বিমান হামলার সময় ভারত জঙ্গি লঞ্চপ্যাডগুলিতে আক্রমণ করার জন্য পুরনো মিরাজ ২০০০ জেট ব্যবহার করা হয়েছিল।
স্ক্যাল্প/স্টর্ম শ্যাডো (SCALP cruise missile)
স্ক্যাল্প, যা স্টর্ম শ্যাডো নামেও পরিচিত, একটি এয়ার টু গ্রাউন্ড দীর্ঘ পাল্লার ক্রুজ মিসাইল। যা গভীরে আঘাত হানতে সক্ষম তার স্টিলথ ফিচারের জন্য পরিচিত। রাতে এবং সমস্ত আবহাওয়ায় এই মিসাইল ব্যবহার করা হয়। ৪৫০ কিলোমিটার পাল্লার এই স্ক্যাল্প মিসাইলের নির্ভুলতার বেশিরভাগই এর উন্নত নেভিগেশন সিস্টেমের কারণে, যা INS, GPS এবং টেরেন রেফারেন্সিং ব্যবহার করে। এই মিসাইলটি একটি ইউরোপীয় কনসোর্টিয়াম MBDA দ্বারা তৈরি। এটিকে শক্ত বাঙ্কার এবং গোলাবারুদের ভাণ্ডার ধ্বংস করার জন্য একটি আদর্শ অস্ত্র হিসাবে বিবেচনা করা হয়। প্রকৃতপক্ষে, গত বছর প্রথমবারের মতো রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলা চালাতে একই মিসাইল ব্যবহার করেছিল ইউক্রেন। এই মিসাইল ৪৫০ কেজি ওজনের ওয়ারহেড বহন করতে সক্ষম। এতটাই নীচে দিয়ে উড়ে যায় যে শনাক্ত করা কঠিন।
এই অস্ত্রটি ইউরোফাইটার টাইফুন, রাফাল, মিরাজ ২০০০ এবং টর্নেডোর মতো যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়া যেতে পারে। এই অস্ত্রটি ব্রিটিশ রয়েল এয়ার ফোর্স, ফরাসি এয়ার ফোর্স, ইতালির এয়ার ফোর্স, ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্স এবং আরও অনেক দেশের সেনাবাহিনীতে ব্যবহৃত হচ্ছে। ইরাক, লিবিয়া এবং সিরিয়ার মতো দেশেও যুদ্ধের সময় ব্যবহার করা হয়েছে।
হ্যামার এয়ার-টু-গ্রাউন্ড বোমা (HAMMER bomb)
হ্যামার স্মার্ট বোমা লস্কর ও জইশের শক্তিশালী বাঙ্কার এবং বহুতলে আঘাত করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। হ্যামার হল একটি নির্ভুল গাইডেট স্ট্যান্ডঅফ অস্ত্র, যা উৎক্ষেপণের উচ্চতার উপর নির্ভর করে ৫০-৭০ কিলোমিটার পরিসরে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে সক্ষম। এটি একটি গ্লাইড বোমা নামেও পরিচিত, এর পাল্লা ৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত। এতে ২৫০ কেজি, ৫০০ কেজি, ১,০০০ কেজি ওয়ারহেড লাগানো যেতে পারে। এই বোমাটি তৈরি করেছে ফরাসি কোম্পানি সাফরান। জ্যামার দিয়ে এই বোমাকে বিভ্রান্ত করা যায় না। কম উচ্চতা থেকে ছোড়া যেতে পারে। এটিকে আটকানো কঠিন এবং সুরক্ষিত কাঠামো ভেদ করতে পারে বলেই এটি এত কার্যকর।