পহেলগাঁও হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হয়েছেন। এখনও হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন ১৭ জন। তাঁদের চিকিৎসার দেখভাল করছে কেন্দ্রীয় সরকার। মঙ্গলবার জঙ্গি হামলার সময়ে ঠিক কী হয়েছিল, সেই হাড়হিম করা অভিজ্ঞতা শুনিয়েছেন সেখান থেকে বেঁচে ফেরা পর্যটকরা। তাঁদেরই মধ্যে একজন মিহির সোনি। হামলার সময় পহেলগাঁওয়ে উপস্থিত ছিলেন মিহির। তিনি জানান, যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে তার আশপাশে কোনও পুলিশ বা জওয়ান ছিলেন না। গুলির শব্দ শুনে তাঁরা সচেতন হয়ে যান। প্রাণে বাঁচাতে আত্মগোপন করেন।
ঘটনাস্থল থেকে ফিরে আসা অনেকে জানিয়েছেন, জঙ্গিরা ধর্ম জিজ্ঞাসা করে হত্যা করছিল। সেই প্রসঙ্গে মিহির বলেন, 'জঙ্গিরা দূরে থাকার কারণে স্পষ্ট শুনতে পাইনি তাদের কথা। তারা পর্যটকদের সঙ্গে কী কথা বলছিল সেটাও আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়। তবে দেখতে পাচ্ছিলাম, কথা বলার পরই তারা গুলি করছিল।'
মিহির বলতে থাকেন,'হামলার কিছুক্ষণ পর আমরা যখন নিচে নামলাম, তখন জওয়ানরা ঘটনাটি জানতে পারে। আমরা নিচে নেমে নিরাপত্তা বাহিনীকে খবর দিই। তখন তারা ওপরের দিকে যেতে শুরু করে। আমরা যখন নিচে নামার চেষ্টা করি তখন ঘোড়সওয়ার পালিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন পায়ে হেঁটে না যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছিল। এরপর অন্য ঘোড়ার মালিকের সঙ্গে চার হাজার টাকায় চুক্তি আমরা নেমে আসি।'
হামলার সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন হুগলির বাসিন্দা চঞ্চল দে। তিনি জানান, 'জঙ্গি হামলার সময় মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে আমি একটি ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে ছিলাম। তখন হঠাৎ চিৎকার শুনে লোকজনকে ছুটোছুটি করতে দেখি। সবাই ভয় পেয়েছিল। কেউ কোনও কথা বলছিলেন না। স্থানীয়রা আমাদের হোটেলে ঢোকার পরামর্শ দিচ্ছিলেন। আমরাও তাই করি। হোটেলে ফিরে যায় গাড়িতে। ফেরার পথে শুধু অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের শব্দ শোনা যাচ্ছিল। রাস্তায় তখন টহল দিচ্ছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীর গাড়ি। এই বীভৎস দৃশ্য দেখে আমার ৮ বছরের ছেলে। সেও ভয় পেয়েছিল। আতঙ্কে সারা রাত ঘুমাতে পারিনি আমরা।'
জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারান মহারাষ্ট্রের ছয়জন। ধারাশিব জেলার দুটি পরিবার ঘটনাস্থল থেকে মাত্র দুই থেকে তিন কিলোমিটার দূরে ছিল। তাঁদেরই একজন জানান, 'গাড়ির ড্রাইভার আমাদের সেখান থেকে বের করে নিয়ে আসেন। সকাল থেকেই আমরা ছিলাম। কী অসাধারণ পরিবেশ। কোথাও কোনও সন্ত্রাসের আশঙ্কা আছে বলে তো মনে হয়নি। কিন্তু অতর্কিত হামলা আমাদের নাড়িয়ে দেয়। ফেরার সময় দেখা গেল পুরো এলাকা দখলে নিয়েছে সেনাবাহিনী।'