কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৮ জন ভারতীয়। জখম হয়েছেন ১৭ জন। প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, ২ থেকে ৩ জন জঙ্গি এই হামলা চালায়। পরিকল্পনামাফিক তারা পর্যটকদের লক্ষ্য করে বলে জানা যায়।
জানা যায়, পাকিস্তানি ও স্থানীয় কাশ্মীরি সন্ত্রাসবাদীরা যৌথভাবে হামলা চালায়। পহেলগাঁওয়ের এই ঘটনা সারা বিশ্বের মিডিয়ায় আলোচিত হচ্ছে। পাকিস্তানের সংবাদপত্রগুলো খবর কভার করেছে। পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র 'দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন' লিখেছে যে 'ভারত সরকার ২০১৯ সালে কাশ্মীর থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহার করে। তারপর থেকে ওই অঞ্চলে অস্থিরতা বেড়েছে। যার জেরে এলাকায় উত্তেজনা আরও বেড়েছে।'
পাকিস্তানের ওই সংবাদপত্রটি লিখেছে, 'ভারতীয় পুলিশরা জানিয়েছে, হামলাকারীরা একদল পর্যটকের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের লক্ষ্য করে খুব কাছ থেকে গুলি ছোড়ে। এই হামলায় তিন ডজনেরও বেশি লোক আহত হয়েছেন, যাদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।'
এক্সপ্রেস ট্রিবিউন লিখেছে, যে হামলার সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সৌদি আরব সফরে ছিলেন। তিনি হামলার নিন্দা করে সাফ জানিয়েছেন, জঙ্গিদের শাস্তি দেওয়া হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও মোদীকে সমর্থন জানিয়েছেন। সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলায় একযোগে লড়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
পাকিস্তানি সংবাদপত্রটি নিবন্ধের শেষে লিখেছে, 'উপত্যকায় নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি ৫ লক্ষেরও বেশি। তারপরও হিংসা হচ্ছে। হামলার পর ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলিকে সমর্থনের অভিযোগ করেছে। তবে পাকিস্তান এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছে, তারা কাশ্মীরিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে সমর্থন করে।'
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম 'ডন'-এর দাবি
পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র 'ডন' লিখেছে, ভারতের পহেলগাঁওতে এমন সময় হামলা হয়েছে যখন সেদেশ সফরে রয়েছেন আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্স। পত্রিকাটি লিখেছে, 'পহলগাঁও খুব সুন্দর জায়গা। অনেক ভারতীয় ছবির শুটিং হয়েছে সেখানে। অমরনাথ যাত্রার রুটেও পড়ে এই এলাকা। এটি কাশ্মীরের সবচেয়ে নিরাপদ এলাকা। এত নিরাপদ এলাকায় হামলার জেরে পুরো অঞ্চলে শোকের ছায়া।' 'ডন' আরও লিখেছে, 'অনেক ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এই হামলার জেরে দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট নামে একটি অজানা গোষ্ঠীকে দায়ি করেছে। তারা হামলার দায় স্বীকারও করেছে বলে জানা গেছে। ২০০০ সালে প্রাক্তন আমেরিকান রাষ্ট্রপতি বিল ক্লিনটনের দিল্লি সফরের আগে একই রকম ঘটনা ঘটেছিল। তবে কারা এই হামলা চালিয়েছিল তা নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছিল।'
'বহিরাগতদের জম্মু ও কাশ্মীরে বসবাসের অধিকার আছে...'
আর একটি পাকিস্তানি সংবাদ আউটলেট জিও টিভি নেটওয়ার্ক তাদের ওয়েবসাইটে বার্তা সংস্থা এএফপিকে উদ্ধৃত করে লিখেছে, দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্সের মধ্যে বৈঠকের একদিন পর এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। ২০০৮ সালে মুম্বই হামলার পর ভারতে এটিই সবচেয়ে বড় হামলা। পত্রিকাটি লিখেছে, 'প্রধানমন্ত্রী মোদী বুধবার সকালে সৌদি সফর মাঝপথে ছেড়ে দিল্লি ফিরেছেন। একটি ছোট দল সামাজিক মাধ্যমে হামলার দায় স্বীকার করেছে। ২০১৯ সালে ৩৭০ ধারা বিলোপের পর থেকে বহিরাগতরাও জম্মু ও কাশ্মীরে বসবাসের অধিকার পেয়েছে। তারা সেখানে চাকরি করছে। জমি কেনার অধিকারও পেয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের চরম অবনতি হয়েছে।'
পাকিস্তানের সংবাদপত্রে ভারতের বিরুদ্ধে বিষোদগার...
পাকিস্তানের নিউজ আউটলেট এআরওয়াই নিউজ তাদের একটি নিবন্ধে ভারতের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছে। পত্রিকাটি লিখেছে, 'বিশ্লেষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, এই আক্রমণটি ভুয়ো প্রচার হতে পারে। কারণ মোদী সরকার রাজনৈতিক সুবিধা পেতে অতীতে একই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। পাকিস্তান বিরোধী মনোভাব উস্কে দিতে এই ধরনের ঘটনা সামনে আনা হয়।'