
পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে হরিয়ানার ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্রাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ৩৩ বছর বয়সী জ্যোতিকে ১৬ মে হিসারের নিউ অগ্রসেন এক্সটেনশন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তিনি 'ট্রাভেল উইথ জো' নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল চালাতেন, যার চার লক্ষেরও বেশি সাবস্ক্রাইবার রয়েছে। পুলিশ এবং তদন্তকারী সংস্থাগুলি দাবি করেছে যে সে উত্তর ভারতে সক্রিয় একটি বিশাল গুপ্তচরবৃত্তি নেটওয়ার্কের অংশ ছিল। উল্লেখ্য গত দুই সপ্তাহে পঞ্জাব, হরিয়ানা এবং উত্তর প্রদেশ থেকে ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ডায়েরি থেকে সূত্র
পুলিশ জ্যোতির ব্যক্তিগত ডায়েরি বাজেয়াপ্ত করেছে, যাতে তার চিন্তাভাবনা, অভিজ্ঞতা এবং ভ্রমণের বিবরণ রয়েছে। ডায়েরিটি প্রায় ১০-১১ পৃষ্ঠার, যার মধ্যে আট পৃষ্ঠা ইংরেজিতে এবং তিন পৃষ্ঠা হিন্দিতে। হিন্দিতে লেখা অংশগুলিতে বিশেষভাবে পাকিস্তান সফরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। একটি পোস্টে লেখা আছে, 'পাকিস্তান থেকে ১০ দিনের ভ্রমণ শেষ করে, আজ আমি আমার দেশ ভারতে ফিরে আসছি। সীমান্তের দূরত্ব কতদিন থাকবে তা আমরা জানি না, তবে হৃদয়ের অভিযোগগুলি মুছে যাক।' এটি থেকে সীমান্তের ওপার সম্পর্কে তার চিন্তাভাবনা এবং সম্পর্কের এক ঝলক পাওয়া যায়।
পাকিস্তানের আতিথেয়তার প্রশংসা
ডায়েরিতে তিনি পাকিস্তানের ধর্মীয় স্থান, যেমন মন্দির এবং গুরুদ্বার পরিদর্শনের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তিনি দেশভাগের সময় বিচ্ছিন্ন পরিবারগুলিকে পুনর্মিলন করার কথাও বলেন। পুলিশ মনে করছ যে এই লেখাগুলি কেবল আবেগপূর্ণ বক্তব্য নয়, বরং তার সম্ভাব্য উদ্দেশ্য এবং যোগাযোগের দিকে ইঙ্গিত করে।
বিদেশ ভ্রমণের তদন্ত
তদন্তকারী সংস্থাগুলি তার পাকিস্তান, চিন এবং অন্যান্য দেশে সফরের পুরো টাইমলাইন তদন্ত করছে। সে প্রায়ই বিদেশে যেত, তার পরিবারকে অন্য গন্তব্যের কথা বলে। একবার সে বলেছিল যে সে দিল্লি যাচ্ছে, পরে তাকে অন্য কোথাও পাওয়া যায়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং পরিচিতি
জ্যোতির সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টগুলিতে একটি মনোমুগ্ধকর ভ্রমণ লাইফ স্টাইল দেখানো হয়েছে, যার মধ্যে বালির মতো জায়গায় ব্যয়বহুল ভ্রমণও অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই ভ্রমণের জন্য তিনি কোথা থেকে অর্থ পেয়েছেন তা জানতে পুলিশ তার আর্থিক লেনদেন তদন্ত করছে।
প্রিয়াঙ্কা সেতুপতিকেও প্রশ্ন
জ্যোতির কাশ্মীর সফরের সময় ওড়িশার প্রিয়াঙ্কা সেতুপতিও তার সঙ্গে ছিলেন। জ্যোতির কার্যকলাপ সম্পর্কে তিনি কি জানতেন, সে সম্পর্কে সংস্থাগুলি তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
এনআইএ, আইবি এবং স্থানীয় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ
জ্যোতি বর্তমানে পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতে আছেন এবং জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ), গোয়েন্দা ব্যুরো (আইবি) এবং হরিয়ানা পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক এবং গভীর ষড়যন্ত্র
২০২৩ সালে পাকিস্তান হাইকমিশন থেকে ভিসা পাওয়ার সময় জ্যোতি পাকিস্তানি কর্মকর্তা এহসান-উর-রহিম ওরফে দানিশের সঙ্গে দেখা করেন। উল্লেখ্য, ১৩ মে ভারত সরকার এহসানকে দেশ থেকে বহিষ্কার করে। সূত্র থেকে জানা গেছে যে জ্যোতি তার ডায়েরিতে পাকিস্তানে তার আতিথেয়তার প্রশংসা করেছেন এবং আশা প্রকাশ করেছেন যে আরও বেশি সংখ্যক ভারতীয় হিন্দু সেখানে তাদের পূর্বপুরুষদের স্থান পরিদর্শন করতে পারবেন। তিনি মন্দির এবং গুরুদ্বার সহ ধর্মীয় স্থানগুলিতে সহজে প্রবেশাধিকারের জন্য তার ইচ্ছা এবং ১৯৪৭ সালের দেশভাগের সময় বিচ্ছিন্ন পরিবারগুলির সঙ্গে পুনরায় সংযোগ স্থাপনের আকাঙ্ক্ষার কথাও লিখেছেন।
মালেরকোটলা সংযোগ
তদন্তে দেখা গেছে যে একই অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া গুজালা এবং ইয়ামিন মহাম্মদও এহসানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন এবং পাকিস্তানি সংস্থাগুলিকে সামরিক ঘাঁটি সম্পর্কে তথ্য পাঠিয়েছিলেন।
নতুন কৌশলের অংশ
হিসারের এসপি শশাঙ্ক কুমার সাওয়ান বলেছেন যে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থাগুলি সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের টার্গেট করছে। এটি একটি নতুন কৌশল, যেখানে সীমান্তের বাইরে থাকা সত্ত্বেও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। জ্যোতি মালহোত্রার মামলা কেবল একজন ব্যক্তির গ্রেফতারি নয়, বরং আধুনিক গুপ্তচরবৃত্তি ব্যবস্থা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংঘটিত কার্যকলাপেরও উদাহরণ হয়ে উঠেছে। তদন্ত চলছে, এবং ভবিষ্যতে এই নেটওয়ার্কের আরও দিক উন্মোচিত হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।