পাকিস্তানে ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পর এবার বাংলাদেশে পা বাড়াচ্ছে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি)। জেহাদি এই সংগঠনটি এখন বাংলাদেশের ভেতর থেকে সক্রিয়ভাবে সদস্য সংগ্রহ করছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে ইঙ্গিত মিলেছে। ভারত–বাংলাদেশ সীমান্ত ৪ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ হওয়ায় এই ঘটনা নয়াদিল্লির নিরাপত্তা মহলেও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয়, বাংলাদেশের বিভিন্ন নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থা এখনও পর্যন্ত এই ক্রমবর্ধমান তৎপরতা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না।
বাংলাদেশি নাগরিকের টিটিপিতে যোগদানের প্রমাণ
ঢাকার সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ থেকে দুজন টিটিপি সদস্য আফগানিস্তানে গিয়েছেন। তাদের একজন ২০২৫ সালের এপ্রিলে পাকিস্তানের ওয়াজিরিস্তানে সেনাবাহিনীর অভিযানে নিহত হন। অন্যজনকে গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশি নিরাপত্তা বাহিনী।
গত জুলাই মাসে সন্ত্রাসবিরোধী ইউনিট (এটিইউ) নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করেছে জামা'আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) প্রাক্তন নেতা শামিন মাহফুজকে, যিনি পরবর্তীকালে জামা'আতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকিয়া গড়ে তোলেন। তার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইন ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একাধিক মামলা রয়েছে।
অন্যদিকে সাভার থেকে মো. ফয়সাল নামের আরও এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি স্বীকার করেছেন যে, ইমরান হায়দার নামে এক পাকিস্তানি বিমান প্রকৌশলীর মাধ্যমে তাকে আফগানিস্তানে পাঠানো হয়েছিল। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশের আরও কয়েকজন যুবক এই নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত।
মালয়েশিয়া থেকেও ধরা পড়েছে বাংলাদেশি নেটওয়ার্ক
জঙ্গি নেটওয়ার্কের আন্তর্জাতিক বিস্তারও ধরা পড়েছে। জুন মাসে মালয়েশিয়ায় টিটিপি-সংশ্লিষ্ট সন্দেহে ৩৬ জন বাংলাদেশিকে আটক করা হয়। তারা মূলত কারখানা ও নির্মাণ খাতে কাজের জন্য মালয়েশিয়ায় গিয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীতে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে চরমপন্থী মতাদর্শ ছড়ানোর সঙ্গে যুক্ত হয় বলে অভিযোগ। এদের মধ্যে পাঁচজনের বিরুদ্ধে সরাসরি জঙ্গি সংগঠনের অংশ হওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
বাংলাদেশে বাড়ছে জঙ্গি আতঙ্ক
২০১৬ সালে ঢাকায় হলি আর্টিজান হামলার পর বাংলাদেশে জঙ্গি নেটওয়ার্কের ওপর বড়সড় দমন নেমে আসে। তবু, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নতুন করে টিটিপি-সংশ্লিষ্ট তৎপরতার প্রমাণে উদ্বেগ বাড়ছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার এই সময়ে এই ধরনের জঙ্গি নেটওয়ার্ক সক্রিয় হলে তা বাংলাদেশ ছাড়াও সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে বলে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মত।
গোয়েন্দা মহলের উদ্বেগ
মানবাধিকার কর্মী আসিফুর রহমান চৌধুরী এক্স-এ লিখেছেন, “বাংলাদেশে টিটিপির সক্রিয় সদস্য কতজন, তা নিয়ে ভাবতে গিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। অথচ সরকারের অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলছেন দেশে কোনও জঙ্গি নেই।”
বর্তমান পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা মহলের পর্যবেক্ষণ, বাংলাদেশের ভেতরে টিটিপির মতো বিদেশি জঙ্গি নেটওয়ার্ক সক্রিয় হলে তা শুধু দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নয়, সীমান্তবর্তী দেশগুলির জন্যও বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে। এই বিষয়ে নজরদারি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।