
শুক্রবার ভোররাতে প্রয়াত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর (PM Narendra Modi) মা হীরাবেন (Heeraben Modi)। চলতি বছরের জুন মাসে তিনি শততম বছরে পদার্পণ করেন। ১৯২৩ সালের ১৮ জুন মেহসানায় জন্মগ্রহণ করেন হীরাবেন। দামোদরদাস মুলচাঁদ মোদীর সঙ্গে হীরাবেনের বিয়ে হয়েছিল। দামোদরদাস তখন চা বিক্রি করতেন। হীরাবেন ও দামোদরদাসের ৬ সন্তান। তৃতীয় সন্তান হলেন নরেন্দ্র মোদী। হীরাবেন এবং দামোদরদাসের অন্যান্য সন্তানরা হলেন অমৃত মোদী, পঙ্কজ মোদী, প্রহ্লাদ মোদী, সোমা মোদী এবং কন্যা বাসন্তীবেন হংসমুখলাল মোদী।
হীরাবেন সারাজীবন লড়াই করেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর মায়ের সংগ্রামের কথা অনেকবার আবেগঘনভাবে উল্লেখ করেছেন। ২০১৫ সালে ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গের সঙ্গে কথোপকথনের সময় প্রধানমন্ত্রী তাঁর মায়ের সংগ্রামের কথা স্মরণ করেছিলেন। তখন তিনি বলেছিলেন, 'বাবা মারা যাওয়ার পর মা অন্যের বাড়িতে গিয়ে বাসনপত্র মাজতেন, জল ভরতেন এবং আমাদের খাওয়াতেন।'
এরপর মায়ের সমস্যার কথা মনে করে কেঁদে ফেলেন প্রধানমন্ত্রী। মোদীর ভাই প্রহ্লাদ মোদীও তাঁর মায়ের ১০০ বছরে পদার্পণ করা নানা কথা বলেছিলেন আজতককে। প্রহ্লাদ মোদী বলেছিলেন যে তাঁর মায়ের বয়স যখন মাত্র ৬ মাস, তখন তাঁর মা মারা যান। ইতিহাস শুধু জানে তাঁদের সংগ্রাম।প্রহ্লাদ মোদী বলেন, আমার দিদা মারা যাওয়ার পর দাদু দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন। অতঃপর তাঁর থেকে জন্ম নেওয়া সন্তানদের লালন-পালনের দায়িত্বও ছিল আমার মায়ের উপরে। দাদুর দ্বিতীয় স্ত্রীও মারা যান খুব তাড়াতাড়ি, তারপর তিনি তৃতীয়বার বিয়ে করেন। তাঁর সন্তান ছিল। তাদের দায়িত্বও পড়ে হীরাবেনের উপর। তারপর তিনি নিজের সন্তানদেরও লালন-পালন করেন। এই সত্ত্বেও, তিনি তাঁর জীবন সম্পর্কে অভিযোগ করেননি কোনওদিন।'
হীরাবেনের চোর তাড়ানোর গল্পও বলেছিলেন প্রহ্লাদ মোদী। হীরাবেনরা যে বাড়িতে থাকতেন তার একটা দেওয়াল পড়ে যায়। রাতে বোনকে সঙ্গে হীরাবেন ঘুমোচ্ছিলেন। সেই সময় চোরেরা আসে। তাদের হাতে অস্ত্র ছিল। কিন্তু হীরাবেন তখন উঠে দাঁড়িয়ে চোরদের সঙ্গে লড়াই করেন। এরপর চোররা পালিয়ে যায়।
প্রহ্লাদ জানান যে ভাদনগরের প্রভাবের কারণেই তাঁর মা এত শক্তিশালী। ভাদনগরে একটি মাত্র কুয়ো ছিল, যেখান থেকে জল এনে সকলে খাবার রান্না করত। যে মাঠ কুয়োটি ছিল তার মালিকের নাম মোগাজি ঠাকুর। তিনি কাউকে জল নিতে নিষেধ করতেন না। সেখান থেকে প্রত্যেক মহিলা মাথায় করে দুই কলসি জল আনতেন। প্রহ্লাদ বলেন, 'গ্রামের প্রবেশদ্বার থেকে আমাদের বাড়িটা ছিল ১৫ ফুট উঁচুতে। মা দিনে দুবার জল আনতেন এবং বাড়ি পৌঁছনোর জন্য চড়াই বেয়ে উঠতেন। কুয়ো থেকে জল তুলতে হলে ১০০ হাত দড়ি টানতে হতো। যে কারণে মায়ের হাত-পা শক্ত ছিল। মা কাপড় ধুতে পুকুরে যেতেন, তারপর ঘরের কাজ করতেন, অন্য বাড়িতে কাজ করতেন। এভাবে তাঁর শরীর অনেক শক্ত হয়ে গেল। সারা জীবন কঠোর পরিশ্রম করে কাটিয়েছেন। অলসতা শব্দটি তাঁর জীবনে ছিল না।'
প্রহ্লাদ মোদি জানান যে তাঁর মা শিক্ষিত ছিলেন না, জীবনে স্কুলও দেখেননি। তারপরও বাচ্চাদের পড়ানোর কৌতূহল ছিল তাঁর। সপ্তাহে ৫ দিন বাজরার রুটি এবং তরকারি রান্না হত বাডিতে। তরকারিতে সামান্য বেসন যোগ করা হত, বাটার মিল্ক তখন বিনামূল্যে পাওয়া যেত, তাতে একটি বেগুন যোগ করা হতো এবং তারপর পুরো পরিবার তা খেত। মা জানতেন কীভাবে এক টাকা, পাঁচ টাকা বা টাকা ছাড়া পুরো পরিবার চালাতে হয়। ছেলে পঙ্কজ মোদীর সঙ্গে গুজরাতের গান্ধীনগরে বসবাস করতেন হীরাবেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই বছর ৪ ডিসেম্বর তাঁর মায়ের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। অসুস্থতার পরে বুধবারও তিনি মায়ের সঙ্গে দেখা করতে আমেদাবাদে যান। হীরাবেনের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী মোদীর জীবনের একটি আবেগময় অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটেছে।