সোমবার ২২ সেপ্টেম্বর থেকে দেশে নতুন জিএসটি লাগু হচ্ছে। আর তা নিয়েই রবিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নাগরিকদের ভারতে তৈরি পণ্য কেনার আবেদন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি, এটাও জানিয়েছেন যে নতুন প্রজন্মের জিএসটি চালু হওয়ার পরে দেশের নাগরিকদের অনেক সুবিধা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। এছাড়াও, দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প নতুন জিএসটি সংস্কারে লাভবান হবে বলেও প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন।
জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী নবরাত্রি উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন যে নবরাত্রির প্রথম দিন থেকেই দেশে নতুন জিএসটি সংস্কার লাগু হবে। তাই নিজেদের পছন্দের জিনিস আরও সস্তায় কিনতে পারবেন নাগরিকরা। মোদী বলেন, 'কাল থেকে শক্তির উপাসনা পর্ব শুরু হবে। ' মোদী বলেন, '২২ সেপ্টেম্বর নবরাত্রির প্রথম দিন এবং এই দিনে নতুন প্রজন্মের জিএসটি বাস্তবায়িত হবে। এটি কেবল উদযাপনের সময় নয়, বরং অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং কর সংস্কারের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। আগামীকাল থেকে জিএসটি বাচত উৎসব কার্যকর হবে। সঞ্চয় উৎসব দেশের প্রতিটি নাগরিকের অর্থ সাশ্রয় করবে।'
সাধারণ মানুষের সুবিধা
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জাতির উদ্দেশে ভাষণে পূর্ববর্তী কর ব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন এবং জিএসটি আইনকে ঐতিহাসিক বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর দাবি, জিএসটি ২.০ সংস্কার ভারতে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই)-কে আকর্ষণ করবে। জিএসটির সংস্কার দেশের মানুষকে উপকৃত করবে। উৎসবের মরসুমে নতুন স্ল্যাবের জিএসটি শক্তি দেবে আম আদমিকে। নতুন স্ল্য়াবের জিএসটি দরিদ্র ও মধ্যবত্ত মানুষকে স্বস্তি দেবে। ভারত নতুন দিশা পেয়েছে। ব্যবসা সহজ হবে। ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগে আগ্রহ বাড়বে। প্রতিটি ঘরে আনন্দ ছড়িয়ে পড়বে। কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্যগুলির প্রচেষ্টার ফলে এটি সম্ভব হয়েছে। প্রতিটি রাজ্যের উদ্বেগের সমাধান করা হয়েছে। এক জাতি, এক কর স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হবে। কর গোলকধাঁধা আগে ঝামেলার ছিল, কিন্তু জিএসটি সংস্কার সবকিছু সহজ করে দিয়েছে। জিএসটি সংস্কারের ফলে ৯৯% পণ্য ৫% জিএসটির আওতায় এসেছে। এর ফলে মধ্যবিত্ত শ্রেণির জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আসবে। দরিদ্ররা এখন দ্বিগুণ সুবিধা ভোগ করবেন। দেশজুড়ে একটি অভিন্ন কর ব্যবস্থা চালু হবে। জিএসটি হার কম হলে স্বপ্ন পূরণ করা সহজ হবে।'
মোদী বলেন, 'আয়কর ও জিএসটির কর ছাড় যদি ধরা যায় তাহলে দেশের মানুষ আড়াই লক্ষ কোটি টাকা বাঁচাতে পারবে। এটাও আত্মনির্ভরতার পক্ষে একটা বড় পদক্ষেপ। দেশকে স্বনির্ভর করার বড় দায়িত্ব রয়েছে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উপরে। যে সব জিনিস দেশে বানাতে পারি, সেগুলো এখানেই তৈরি করতে হবে। বিদেশের উপর নির্ভরশীল হলে চলবে না। জিএসটির কর কমে যাওয়ায় ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা উন্নতি করতে পারবে। তাদের বিক্রি বাড়বে। লাভ পাবে।'
দেশে তৈরি পণ্য কেনার আবেদন
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, 'স্বদেশির মন্ত্র যেমন দেশের স্বাধীনতাকে শক্তিশালী করেছিল, তেমনি স্বদেশিও আজ দেশের সমৃদ্ধিকে শক্তিশালী করবে। আজ, অনেক বিদেশি জিনিসপত্র আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। আমরা এমনকী জানি না যে আমাদের পকেটে থাকা চিরুনি বিদেশি নাকি ভারতীয়। আমাদের এগুলি থেকে মুক্ত হতে হবে এবং কেবলমাত্র সেই জিনিসপত্র কিনতে হবে যা ভারতে তৈরি, যা আমাদের যুবসমাজের কঠোর পরিশ্রম এবং আমাদের ছেলে মেয়েদের ঘামের প্রতিফলন। আমাদের ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ পণ্য কিনতে হবে। প্রতিটি বাড়িকে স্বদেশি পণ্যের প্রতীক বানাতে হবে, প্রতিটি দোকানকে স্বদেশি পণ্যে সাজাতে হবে। এখন সময়ের দাবি হল স্বদেশি হওয়া এবং ভারতে তৈরি পণ্য কেনা বা ব্যবহার করা। জনগণের গর্বের সঙ্গে ঘোষণা করা উচিত, আমি স্বদেশি পণ্য কিনি। আমাদের ভারতে তৈরি পণ্য কেনা উচিত। এতে ছোট ব্যবসাগুলি উপকৃত হবে। আমাদের স্বনির্ভরতার পথ অনুসরণ করতে হবে। ভারতে যা কিছু তৈরি করা যায়, তা এখানেই করুন।'
গরিবি হটাও
প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, 'গত ১১ বছরে ২৫ কোটি মানুষ দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেয়েছেন। দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেয়ে এই মানুষগুলি নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণির অংশ হয়ে উঠেছে। এই বছর, সরকার ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়কে করমুক্ত করেছে, যা মধ্যবিত্ত শ্রেণির জীবনে সরলতা এবং সুবিধা এনেছে। এর ফলে কেবল নতুন মধ্যবিত্তই উপকৃত হবে না, বরং জিএসটি হ্রাসের মাধ্যমে দরিদ্ররাও দ্বিগুণ সুবিধা পাবেন। এই সঞ্চয় উৎসব বাড়ি তৈরি, ইলেকট্রনিক পণ্য কেনা, স্কুটার বা গাড়ি কেনা ও বেড়ানোকে আরও সহজ এবং সস্তা করে তুলবে। জিএসটি কমার ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (এমএসএমই) দ্বিগুণ সুবিধা পাবে। তাদের বিক্রয় বৃদ্ধি পাবে এবং তাদের করের বোঝা হ্রাস পাবে। এটিই দেশের সমৃদ্ধির ভিত্তি।'