সরকারি কর্মীরা জেলে গেলে চাকরি যায়, তাহলে মন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রীরা জেলে গেলে তাঁদের পদ যাবে না কেন? বিহারের জনসভা থেকে প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। শুক্রবার গয়ার মঞ্চ থেকে তিনি বলেন, 'জেলের ভিতর থেকে ফাইলে সই করবেন, এটা কীভাবে হতে পারে?' বিরোধীদের উদ্দেশে কটাক্ষ করে বলেন, 'বাবা সাহেব আম্বেদকরও ভাবেননি যে ক্ষমতায় থাকা মানুষরা এভাবে দুর্নীতি করবেন। শুধু তাই নয়, দুর্নীতির অভিযোগে জেলে যাওয়ার পরেও যে জেলের ভিতর থেকেই দুর্নীতি চলবে, এমনটাও ভাবেননি।'
গত বুধবার লোকসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তিনটি বিল পেশ করেন। তার মধ্যে ১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিল নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে ওঠে। বিলের প্রস্তাবনা অনুযায়ী, কোনও মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রী টানা ৩০ দিন জেলে থাকলে পদচ্যুত হবেন। আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই তাঁকে পদ থেকে সরে যেতে হবে।
বিল অনুযায়ী, সংবিধানের ৭৫ নম্বর অনুচ্ছেদে নতুন ধারা যোগ হবে। নিয়ম অনুযায়ী কোনও মন্ত্রী যদি এমন অপরাধে গ্রেফতার হন, যার শাস্তি ৫ বছর বা তার বেশি কারাদণ্ড, সেক্ষেত্রে টানা ৩০ দিন জেলে থাকলেই তাঁকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রীও এর বাইরে নন। এমন ক্ষেত্রে ৩১তম দিনের মাথায় তাঁকেও পদ ছাড়তে হবে। একই নিয়ম রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, মন্ত্রী এবং জম্মু কাশ্মীরের মন্ত্রীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
বিরোধীদের তীব্র সমালোচনা
কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিংভি এক্স (টুইটার)-এ লেখেন, 'এটা ভয়ঙ্কর চক্র। এমনিতেই বিরোধী নেতাদের নির্বিচারে গ্রেফতার করা হয়। নতুন আইনে আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই মন্ত্রীদের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া যাবে। এতে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে হাতিয়ার করে বিরোধী রাজ্যগুলিতে অস্থিরতা তৈরির প্রবণতা তৈরি হবে।'
বিরোধী নেতাদের অভিযোগ, এই আইন রাজ্য সরকারগুলির স্থিরতা নষ্ট হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতার দাপট বাড়াবে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই প্রস্তাবনার তীব্র সমালোচনা করেন। তাঁর বক্তব্য, 'আমি ১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিলের কঠোর নিন্দা করছি। এই বিল শুধু গণতন্ত্র নয়, দেশের ফেডারেল কাঠামোর উপরেও শেষ আঘাত। এটি অতিজরুরি অবস্থা’র চেয়েও ভয়ঙ্কর, যা ভারতের গণতান্ত্রিক যুগের অবসান ঘটাবে।'
প্রধানমন্ত্রীর বিহার সফর
এদিন প্রধানমন্ত্রী মোদী বিহারে প্রায় ১৩,০০০ কোটি টাকার প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করেন। গয়া থেকে দিল্লি পর্যন্ত অমৃত ভারত এক্সপ্রেস এবং বৈশালী থেকে কোডারমা পর্যন্ত বুদ্ধ সার্কিট ট্রেন চালু করেন। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের হাতে চাবি তুলে দেন।