রাজ্যসভায় রাষ্ট্রপতির ভাষণে ধন্যবাদ প্রস্তাবের জবাব দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জবাবি ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি মণিপুরের প্রসঙ্গ তোলেন। মোদী জানান, সরকার মণিপুরের পরিস্থিতি উন্নতির চেষ্টা করছে। মণিপুর ছাড়াও গোটা উত্তর পূর্বের প্রসঙ্গেও তোলেন মোদী। কংগ্রেস সরকারের আমলে উত্তর-পূর্বের উন্নয়নকে অবহেলা করা হয়েছিল বলেও দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী। গত ১ বছর ধরে অশান্ত রয়েছে মণিপুর। উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে গোলমালের ঘটনা ঘিরে সরগরম হয়েছে জাতীয় রাজনীতি। মণিপুরে সংঘর্ষের ঘটনায় মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সরব হতে দেখা গিয়েছে বিরোধী শিবিরকে। এই প্রেক্ষাপটে সে রাজ্যে শান্তি ফেরানো নিয়ে বার্তা দিলেন মোদী।
মণিপুর প্রসঙ্গে মোদী বলেন, 'সরকার মণিপুরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে। মণিপুর নিয়ে গত লোকসভায় আমি বিস্তারিত বলেছিলাম। মণিপুরের পরিস্থিতি শান্ত করতে সরকার নিরন্তর প্রয়াস করছে। ১১ হাজারের বেশি এফআইআর করা হয়েছে। ৫০০-র বেশি লোক গ্রেফতার হয়েছে। মণিপুরে হিংসার ঘটনা ক্রমাগত কমছে। মণিপুরেও স্কুল-কলেজ খোলা রয়েছে। দেশে যেমন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, সেখানেও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার সবার সঙ্গে কথা বলে সম্প্রীতির পথ খোলার চেষ্টা করছে। ছোট ছোট দলের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বেশ কয়েকদিন ধরে আছেন। কর্মকর্তারাও সেখানে নিয়মিত যাচ্ছেন। সমস্যা সমাধানের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে। মণিপুরেও রয়েছে বন্যার সংকট। রাজ্য ও কেন্দ্র যৌথভাবে মণিপুর নিয়ে উদ্বিগ্ন। আজই সেখানে দুটি NDRF টিম পাঠানো হয়েছে। যারা মণিপুরে আগুনে ইন্ধন যোগানোর চেষ্টা করছে তাদের আমি সতর্ক করতে চাই এই ধরনের কার্যকলাপ বন্ধ করতে। একটা সময় আসবে যখন মণিপুর নিজেই সেই লোকদের প্রত্যাখ্যান করবে। যারা মণিপুর, এর ইতিহাস জানেন, তারা জানেন যে সেখানে সংঘাতের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। কংগ্রেসের লোকদের ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে এই পরিস্থিতিতে, এই ছোট রাজ্যে ১০ বার রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করতে হয়েছিল। এটা আমাদের আমলে হয়নি। কিছু কারণ অবশ্যই আছে। ১৯৯৩ সালেও একই ধরনের হিংসার ঘটনা ঘটেছিল। এই সব ইতিহাস বুঝেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এতে যারাই সহযোগিতা করতে চান, আমরা সবার সহযোগিতা নিতে প্রস্তুত। আমি আজ প্রধান সেবক হিসেবে আপনাদের সামনে এসেছি।'
উত্তর-পূর্ব ভারত নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আজ যারা উত্তর-পূর্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলে, তারা উত্তর-পূর্ব ভারতকে ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়েছিল। কারণ এখানে মাত্র ৯-১০টা আসন ছিল, এতে কী পার্থক্য এসে যায়। আজ উত্তর-পূর্ব হয়ে উঠছে দেশের উন্নয়নের ইঞ্জিন। গত ৫ বছরে আমরা যতটা কাজ করেছি কংগ্রেসকে যদি ততটা করতে হতো, তাহলে তাদের ২০ বছর লেগে যেত। উত্তর-পূর্বে স্থায়ী শান্তির জন্য ১০ বছর ধরে অবিরাম প্রচেষ্টা করা হয়েছে। অক্লান্তভাবে এবং বিরামহীন প্রচেষ্টা করা হয়েছে। দেশে এ নিয়ে আলোচনা কম হলেও ফলাফল হয়েছে ব্যাপক। সীমান্ত বিরোধ গুরুত্বপূর্ণ ছিল, আমরা রাজ্যগুলির সঙ্গে মিলে এটি সমাধান করছি। এটি উত্তর-পূর্বের জন্য একটি দুর্দান্ত বিষয়। যেসব সশস্ত্র দল যুদ্ধ করত তাদের সঙ্গে স্থায়ী চুক্তি করা হচ্ছে। যাদের বিরুদ্ধে গুরুতর মামলা রয়েছে তারা আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা বৃদ্ধি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।'
নিট কেলেঙ্কারির কথাও প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ উঠে আসে। এই বিষয়ে তিনি রাজ্যসভায় বলেন, 'আমি দেশের যুব সমাজকে বলতে চাই, যারা আপনাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে, এই সরকার তাদের ছাড়বে না। আমি এটা পরিষ্কার করে দিতে চাই যে সংসদ এটা নিয়ে আইন করেছে। আমরা চেয়েছিলাম যে এমন একটি স্পর্শকাতর ইস্যুতে রাজনীতি করা উচিত নয় কিন্তু বিরোধীরা এতে অভ্যস্ত। আমি ভারতের যুবকদের আশ্বস্ত করছি যে যুবকদের ভবিষ্যৎ নিয়ে যারা ছিনিমিনি খেলছে তাদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অনেক অভিযোগ উঠেছে। কিছু অভিযোগ আছে যার জবাব ঘটনা নিজেই দেয়। জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী ঘটনা কমেছে। সন্ত্রাস ও বিচ্ছিন্নতাবাদের অবসান ঘটছে এবং জম্মু ও কাশ্মীরের নাগরিকরা এই লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আজ সেখানে পর্যটন নতুন রেকর্ড করছে, বিনিয়োগ বাড়ছে।'