কাশ্মীরে পর্যটকদের উপর ভয়াবহ হামলার কয়েকদিন আগেই, পাক অধিকৃত কাশ্মীরের (PoK) রাওয়ালকোটের খাইগালায় এক বিশাল জঙ্গি সমাবেশে প্রকাশ্যে হিংসা ও ‘জিহাদের’ আহ্বান জানিয়েছিল লস্কর-ই-তৈবা (LeT)-র এক শীর্ষ নেতা। গত ১৮ এপ্রিলের এই সভায় উপস্থিত ছিল একাধিক জঙ্গি নেতা। এই সভার পর মাত্র কয়েক দিন পরেই পহেলগাঁওয়ে ঘটে গেল গত কয়েক বছরের মধ্যে অন্যতম রক্তক্ষয়ী হামলা, ২৮ জন নিরীহ পর্যটকর প্রাণ হারালেন। পাক অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গিনেতাদের সেই মিটিংয়ের ভিডিও ভাইরাল।
কারা ছিল এই সভায়?
সমাবেশটি আয়োজন করা হয়েছিল লস্কর জঙ্গি আকিফ হালিম ও আব্দুল ওয়াহাবের স্মৃতিতে। এই দুই জঙ্গিকে ভারতীয় বাহিনী খতম করেছিল মার্চ ও এপ্রিল মাসে। আকিফকে কুপওয়ারায় এবং ওয়াহাবকে সোপরের সংঘর্ষে নিকেশ করে সেনা। দু’জনই ছিল পাক অধিকৃত কাশ্মীরের বাসিন্দা এবং একই পরিবারের সদস্য। সভাটি আয়োজন করে লস্কর-ই-তৈবার ছদ্ম সংগঠন ‘জম্মু কাশ্মীর ইউনাইটেড মুভমেন্ট’ (JKUM)। সেই সংগঠনের শীর্ষ নেতা আবু মুসা ছিল সভার প্রধান বক্তা। পাকিস্তানের সরকারি সমর্থনে এই সভাটি হয়েছিল বলে ভারতীয় গোয়েন্দাদের প্রাথমিক অনুমান। মঞ্চে বসেছিলেন একাধিক সক্রিয় লস্কর জঙ্গি, যারা প্রকাশ্যে শহিদ জঙ্গিদের গৌরবান্বিত করে ভবিষ্যতে আরও হামলার হুমকি দেয়।
📍"J!had will continue, Guns will rage and Beh#@ding will continue in JK" declares JKUM/LeT commander Abu Musa.
— OsintTV 📺 (@OsintTV) April 19, 2025
📍Terrorists spewed venom at the venue of the Akif Haleem (Eliminated LeT terrorist) tribute conference.
📍Location: Khai gala , Rawalkot , PoJK, Date : 18-04-2025 pic.twitter.com/KcL4cnSKlK
কী বলেছে আবু মুসা?
সমাবেশে আবু মুসার বক্তব্যের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেটি ভারতীয় গোয়েন্দারা ইতিমধ্যেই যাচাই করেছেন। সেই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, মুসা প্রকাশ্যে বলছে, 'ভারত ৩৭০ আর ৩৫এ তুলে দিয়ে কাশ্মীরের জনসংখ্যা বদলাতে চায়। ১০ লক্ষ সেনা মোতায়েন করেছে। ওরা চায় পুলওয়ামা, পুঞ্চ, রাজৌরিতে ‘রাম রাম’ ধ্বনি উঠুক। লস্কর এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে। মোদী, আদালতের ঘরে বসে তুমি রায় দাও, কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্র আমাদের। ইনশাআল্লাহ, আমরা গুলি বর্ষণ করব, তোমাদের গলা কাটব, শহিদদের সম্মান জানাব।'
সময় ও বার্তার তাৎপর্য
এই বক্তব্যের মাত্র কয়েকদিন পরেই ঘটে পহেলগাঁওয়ের রক্তাক্ত জঙ্গি হামলা। ঘটনাক্রম এতটাই মিল রয়েছে যে গোয়েন্দারা মনে করছেন, ১৮ এপ্রিলের এই সভায়ই ভবিষ্যতের হামলার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল। খাইগালার এই সভা কার্যত ছিল লস্করের শক্তি প্রদর্শনের মঞ্চ। মুসার বক্তব্য কেবলমাত্র উস্কানিমূলক নয়, সরাসরি ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের আহ্বান বলে মনে করছে ভারতীয় নিরাপত্তা মহল।
পাকিস্তানের ভূমিকা কী?
যদিও এই সভার আয়োজক সংগঠন ‘আওয়ামি অ্যাকশন কমিটি’ দাবি করেছিল, কোনও জঙ্গি সংগঠন এর সঙ্গে যুক্ত নয়, বাস্তবে সেটা হয়নি। গোয়েন্দা সূত্রে জানা যাচ্ছে, লস্করের একাধিক সক্রিয় সদস্য সেই মঞ্চে ছিলেন। পাকিস্তান সরকারের একাংশ এমনকি নিরাপত্তার দায়িত্বও নিয়েছিল বলেই দাবি। ভারতীয় গোয়েন্দারা আশঙ্কা করছেন, গ্রীষ্মে যখন কুপওয়ারা, রাজৌরি, পুঞ্চের মতো সীমান্ত এলাকাগুলো বরফমুক্ত ও চলাচলের উপযুক্ত হয়, তখন নতুন করে অনুপ্রবেশ ঘটানোর পরিকল্পনা করছে লস্কর।