ভয়াবহ বন্যায় বিধ্বস্ত পঞ্জাব। মঙ্গলবার বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শনে যাবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রিপোর্ট অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত পঞ্জাবে অতিবৃষ্টি, বন্যায় ৪৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। কৃষি নির্ভর পঞ্জাবের প্রায় ১.৭৫ লক্ষ হেক্টর জমির ফল নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সরকারি হিসাব বলছে, সে রাজ্যের ২৩টি জেলার প্রায় ১,৯৯৬টি গ্রাম বন্যার জলে সম্পূর্ণ রূপে ডুবে গিয়েছে।
সূত্রের খবর, আগামী ৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী গুরুদাসপুর জেলায় গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবেন। বন্যা কবলিত মানুষ এবং কৃষকদের সঙ্গে কথা বলবেন।
চলতি বছর স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটাই বেশই বৃষ্টি হয়েছে। আর তার ফলেই পঞ্জাবে এই ভয়াবহ পরিস্থিতি। শুধু পঞ্জাবই নয়, পশ্চিম ও উত্তর ভারতের একাধিক রাজ্যে এবার বর্ষায় রীতিমতো ভুগেছে। হিমাচল প্রদেশ এবং জম্মু ও কাশ্মীরে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। এদিকে সেই রাজ্যগুলি থেকেই রাভি, শতদ্রু, বিয়াসের মতো নদী প্রবাহিত হয়ে পঞ্জাবের উপর দিয়ে গিয়েছে। একদিকে অতিবৃষ্টি, অন্য়দিকে অন্য রাজ্য থেকে নদী মারফত জল, জোড়া ধাক্কায় পঞ্জাবে ভয়ানক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
পঞ্জাবের রাজ্য সরকারের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানালেন, যুদ্ধকালীন তৎপরতায় এনডিআরএফ, সেনাবাহিনী, সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনী, পঞ্জাব পুলিশ এবং জেলা আধিকারিকরা একযোগে কাজ করছেন।
প্রায় ২,০০০ গ্রাম জলে ডুবে গিয়েছে
পঞ্জাবে গত পাঁচ দশকের মধ্যে এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা বলে মনে করা হচ্ছে। রাজ্যের অর্থমন্ত্রী হরপ্রীত সিং চিমা বলেন, পঞ্জাব এবং পার্শ্ববর্তী পার্বত্য রাজ্যগুলিতে অবিরাম বৃষ্টিপাতের ফলে প্রায় ২,০০০ গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারি তথ্যানুসারে, ৩.৮৭ লক্ষেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
জলস্তর বিপজ্জনক পর্যায়ে
হরপ্রীত সিং চিমা বলেন, 'কৃষিই আমাদের রাজ্যের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। আর সেই কৃষিতে এগিয়ে থাকা ১৮টি জেলাতেই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি পরিকাঠামো, ঘরবাড়ি এবং গবাদি পশুরও ক্ষতি হয়েছে। ঘাগর নদীর জলস্তরও ৭৫০ ফুটের বিপদসীমা অতিক্রম করেছে।' আরও বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি কোনদিকে গড়ায়, সেই প্রমাদই গুনছে প্রশাসন ও রাজ্যবাসী।
'এনডিআরএফের ২৪টি দল কাজ করছে'
পঞ্জাব জুড়ে ২০০টি ত্রাণ শিবির স্থাপন করা হয়েছে। ৭,০০০ এরও বেশি মানুষ আপাতত সেই ত্রাণ শিবিরেই আশ্রয় নিয়েছেন। রাজ্যজুড়ে এনডিআরএফের ২৪টি টিম কাজ করছে। সেই সঙ্গে রাজ্যের দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনীর (এসডিআরএফ) দু'টি টিম উদ্ধার ও ত্রাণকাজ চালাচ্ছে।
কেন্দ্রীয় সরকারকে দোষারোপ করলেন আমন অরোরা
শনিবার পঞ্জাবের মন্ত্রী আমান অরোরা বন্যার পিছনে নদীতে অবৈধ খনন কাজকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শনের বদলে বিজেপি নেতাদের আগে অন্য রাজ্যে নদীতে অবৈধ খনন বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
আম আদমি পার্টি বিজেপির বিরুদ্ধে পঞ্জাবের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণেরও অভিযোগ এনেছে। তারা বলছে, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রাজ্য সরকার প্রায় ৬০,০০০ কোটি টাকা বকেয়া। কিন্তু তা দেওয়া হচ্ছে না।
আপ এর রাজ্যসভার সাংসদ সঞ্জয় সিং কাপুরথলা জেলার সুলতানপুর লোধিতে বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি মান্ড ইন্দরপুরের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছে গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলেন।