ভোটমুখী বিহারে আরও এক বড় উপহার। সোমবার পূর্ণিয়াতে বিমানবন্দরের অন্তবর্তী টার্মিনালের নয়া বিল্ডিং উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকার বাসিন্দারা একটি বিমানবন্দরের দাবি তুলেছিলেন। অবশেষে ভোটের মুখে সেই দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হল। সঙ্গে লাভবান হলেন কলকাতাও। কারণ এবার থেকে কলকাতা টু পূর্ণিয়া ডিরেক্ট ফ্লাইট চালুর কথা ঘোষণা করেছে ইন্ডিগো।
বিহারের পূর্ণিয়া জেলা বরাবরই বাঙালি অধ্যুষিত। বাঙালিদের নিজস্ব কমিউনিটি রয়েছে সেখানে। হয় দুর্গাপুজোও। রয়েছে রামকৃষ্ণ মিশন। এমনকী, এই এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে পূর্ণিয়াকে একটা সময়ে 'মিনি দার্জিলিং'-ও বলা হতো। পূর্ণিয়া থেকে প্রচুর মানুষ এ রাজ্যে যাতায়াত করেন। বিমানবন্দর না থাকায় নিকটবর্তী এয়ারপোর্ট থেকে ফ্লাইট ধরে বাগডোগরা হয়ে ঘুরপথে কলকাতা পৌঁছতে হতো তাদের। তবে এবার মুশকিল আসান। পূর্ণিয়া বিমানবন্দর থেকে এবার সরাসরি বিমানে চড়ে কলকাতা আসা যাবে।
একটা সময়ে বাঙালি অধ্যুষিত এই পূর্ণয়ার অংশবিশেষ পশ্চিমবঙ্গে অন্তর্ভূক্তির দাবিতে ২২ দিন অনশন করেছিলেন বৈদ্যনাথ ভৌমিক। সে কাহিনি কার্যত ইতিহাস থেকে উবে গিয়েছে।
আবার বিহারের নির্বাচনের আগে যে SIR হচ্ছে তাতে দেখা গিয়েছে, ভোটার তালিকা থেকে সবচেয়ে বেশি নাম বাদ দিয়েছে বাংলা লাগোয়া জেলাগুলি থেকেই। এরমধ্যে রয়েছে গোপালগঞ্জ, কিশানগঞ্জ, কাটিহার, আরারিয়া এবং অবশ্যই পূর্ণিয়া। যেখানে বাংলা ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যা অনেকটাই বেশি। পরিসংখ্যান বলছে, পূর্ণিয়া থেকে ১২.০৮ শতাংশ ভোটারের নাম বাদ পড়েছে। পূর্ণিয়ায় ৩৮.৪৬ শতাংশ মুসলিম ভোটার রয়েছেন। SIR-এ দেখা গিয়েছে অনুপস্থিত ভোটারের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি পূর্ণিয়ায়।
এই আবহে বাংলা এবং বিহারের এই অংশের মধ্যে বিমান সংযোগ তৈরি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। বাগডোগরার মতো পূর্ণিয়া এয়ারপোর্টটিও ভারতীয় বায়ুসেনার অধীনে। ফলত সেখানেই রয়েছে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল পরিষেবা। এর আগে পূর্ণিয়া থেকে কমার্শিয়াল ফ্লাইট চালুর চেষ্টা করা হলেও তা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। তবে এবার সপ্তাহে ৩ দিন করে পূর্ণিয়া থেকে কলকাতা পর্যন্ত উড়ান চলবে বলে জানিয়েছে ইন্ডিগো এয়ারলাইন্স। ভৌগলিক দিক থেকেও পূর্ণিয়ার গুরুত্ব অপরিসীম বলে জানিয়েছেন এয়ারলাইন্স কর্তারা। জানা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের বালুরঘাট এবং মালদা থেকে ফ্লাইট ধরতে গেলে যেতে হয় বাগডোগরা। অথচ সীমান্ত লাগোয়া পূর্ণিয়া বিমানবন্দরে তার চেয়েও কম সময়ে পৌঁছে যেতে পারবেন এ রাজ্যের এই দুই জেলার বাসিন্দারা। এছাড়াও বিমানবন্দরে গিয়ে উড়ান ধরতে পারবেন ভাগলপুরের বাসিন্দারাও।
ঠিক হয়েছে, ৫০টি আসনের এটিআর বিমান আপাতত উড়বে পূর্ণিয়া বিমানবন্দর থেকে। সোম, বুধ এবং শুক্র অর্থাৎ সপ্তাহে ৩ দিন কলকাতা ও পূর্ণিয়ার মধ্যে ডিরেক্ট ফ্লাইট চলবে। যাত্রীদের প্রতিক্রিয়ার উপর নির্ভর করে পরিষেবা বাড়ানো হতে পারে বলেও খবর।