ভোটগণনা এখনও চললেও, আপাতত স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, কংগ্রেসের হাত ছাড়া হচ্ছে রাজস্থান। স্বভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, অশোক গেহলতের জনপ্রিয়তায় ভাঁটা পড়ল? নাকি গেহলত বনাম সচিন পাইলট শিবিরের দ্বন্দ্বের খেসারত দিতে হল কংগ্রেসকে? রাজস্থানে ৯৮টি আসনে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। কংগ্রেস এগিয় রয়েছে ৮৪টি আসনে। গণনার শুরুতেই ১৭টি আসনে এগিয়ে যায় বিজেপি।
রাজস্থানে এই ভরাডুবি লোকসভা ভোটের আগে বড়সড় ধাক্কা কংগ্রেসের কাছে। একবার দেখে নেওয়া যাক, যে ৫ কারণে রাজস্থানে হারতে হচ্ছে কংগ্রেসকে।
১. দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্ব: নির্বাচনের কয়েক মাস আগেও রাজস্থানে দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্ব দেখা গিয়েছে কংগ্রেসে। একদিকে সচিন পাইলটের শিবির ও অন্যদিকে অশোক গেহলতের শিবিরের দ্বন্দ্বের প্রভাব পড়েছে রাজস্থানে কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের উপর। যদিও নির্বাচনের ঠিক মুখে অশোক ও সচিন একজোটের বার্তা নিয়ে এগিয়ে আসলেও, লাভ হল না। বছরভর অন্তর্দ্বন্দ্বের ফল ভুগতে হল কংগ্রেসকে। কংগ্রেসের এই দ্বন্দ্বের ভরপুর ফায়দা তুলতে চেষ্টার কসুর করেনি বিজেপি। কংগ্রেস রাজস্থানে কোনও মুখ্যমন্ত্রীর মুখ ঘোষণা না করলেও, হাইকম্যান্ডের অঘোষিত মুখ ছিলেন অশোক। এই সুযোগেই রাজস্থান বসুন্ধরা রাজেকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করে দেয় বিজেপি। একই সঙ্গে বিজপি-র বড় নেতাদেরও ভোটের প্রচারে নামানো হয়।
২. মোদী বনাম গেহলত ফ্যাক্টর: রাজস্থানের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বনাম অশোক গেহলত ন্যারেটিভের খেসারত গুনল কংগ্রেস। জাতিগত গণননার তাস খেলেও মোদী ফ্যাক্টরের কাছে পেরে উঠল না কংগ্রেস। রাজস্থানে ব্যাপক প্রচার করেছেন মোদী। অন্যদিকে প্রচারের অনেকটাই দায়িত্ব অশোক গেহলতের উপরে চাপিয়ে দেয় কংগ্রেস। যার নির্যাস, নির্বাচনে মোদী বনাম গেহলত ন্যারেটিভ তৈরি হয়ে যায়।
৩. কানাইহালাল হত্যাকাণ্ড: উদয়পুরের কানহাইলাল হত্যাকাণ্ডকে ভোটে কাজে লাগায় বিজেপি। বিজেপি-র এই রাজনীতির প্রভাব পড়েছে রেজাল্টে। রাজস্থানের রাজনীতিতে বলা হয়, যে দল মেওয়াড় জিতবে, সেই দল রাজস্থান জিতবে। কানহাইয়ালাল হত্যাকাণ্ডে রাজস্থানের আইন-শৃঙ্খলাকে ভোটে ইস্যু করে বিজেপি।
৪. পেপার লিক: অশোক গেহলতের সরকার একের পর এক জনমোহিনী প্রকল্পের তাস খেলতে শুরু করে। চিরঞ্জীবি যোজনায় স্বাস্থ্যবিমার সীমা ৫০ লক্ষ টাকা করার প্রতিশ্রুতি দেয় কংগ্রেস। সস্তায় গ্যাস সিলিন্ডার সহ একাধিক লোভনীয় প্রকল্পের পেপার লিক, লাল ডায়েরি ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে শুরু করে গেহলত সরকারের বিরুদ্ধে।
৫. বিদ্রোহীদের কূটচাল: কংগ্রেসের হারের আরও একটি বড় কারণ হল, বিদ্রোহী নেতাদের কূটচাল। কংগ্রেসের টিকিট না পেয়ে একাধিক নেতা নির্দল প্রার্থী হিসেবে ভোটের ময়দানে নেমে পড়েন। কিছু বিজেপি ও অন্যান্য দলের টিকিটেও লড়াই করেন। এই বিদ্রোহের প্রভাব পড়েছে কংগ্রেসের ফলাফলেও। বিদ্রোহী নেতাদের মন পেতে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব চেষ্টা করলেও, কিছু লাভ হয়নি।