
রাজস্থানের প্রশাসনে দুর্নীতির এক রোমহর্ষক ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। দুর্নীতি দমন ব্যুরো (ACB) এমন এক কেলেঙ্কারির পর্দাফাঁস করেছে, যা সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। এক সরকারি আধিকারিক নিজের স্ত্রীকে এক নয়, দুটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি পাইয়ে দিয়েছিলেন। অথচ তিনি কখনও অফিসে পা পর্যন্ত রাখেননি। তবুও পাঁচ বছরে তাঁর অ্যাকাউন্টে জমেছে প্রায় ৩৭.৫৪ লক্ষ টাকা।
এই দুর্নীতির মূল অভিযুক্ত প্রদ্যুম্ন দীক্ষিত। যিনি জয়পুরের তথ্য প্রযুক্তি ও যোগাযোগ দফতরের (DoIT) যুগ্ম পরিচালক। ACB-র তদন্তে জানা গেছে, প্রদ্যুম্ন নিজের স্ত্রী পুনম দীক্ষিতের জন্য দুটি কোম্পানিতে, অরিয়নপ্রো সলিউশনস লিমিটেড এবং ট্রাইজেন্ট সফটওয়্যার প্রাইভেট লিমিটেড-এ ভুয়ো চাকরির ব্যবস্থা করেন।
তদন্তে আরও বেরিয়ে আসে, এই দুই সংস্থায় পুনমের বেতন অনুমোদনের স্বাক্ষর করতেন প্রদ্যুম্ন নিজেই! অর্থাৎ, তিনি সরকারি অফিসার হয়েও নিজের স্ত্রীর ‘বেতন বিল’ অনুমোদন করতেন।
ACB সূত্রে জানা গেছে, জানুয়ারি ২০১৯ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২০ পর্যন্ত পুনম দীক্ষিতের পাঁচটি ব্যক্তিগত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দুই সংস্থার পক্ষ থেকে টাকা পাঠানো হয়। এই সময়ে তাঁর মোট আয় হয় ৩৭,৫৪,৪০৫ টাকা। অথচ তিনি কখনও এই অফিসগুলিতে হাজিরই হননি।
প্রথমে এক গোপন অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে ACB। তদন্তের সূত্রে উঠে আসে আরও বিস্ফোরক তথ্য। প্রদ্যুম্ন শুধু নিজের স্ত্রীর ভুয়ো চাকরিই তৈরি করেননি, বরং অরিয়নপ্রো নামের সংস্থাকে সরকারি চুক্তি মঞ্জুর করার ক্ষেত্রেও বিশেষ সুবিধা দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ।
এ ঘটনায় আরএক আধিকারিকের নামও জড়িয়েছে। রাকেশ কুমার, যিনি একই দফতরের উপ-পরিচালক, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি পুরো জালিয়াতি ধামাচাপা দিতে সাহায্য করেছিলেন।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে রাজস্থান হাইকোর্ট এই মামলায় FIR দায়ের ও পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দেয়। আদালতের নির্দেশ অনুসারে, ২০২৫ সালের ৩ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের হয় এবং এ বছরের ১৭ অক্টোবর প্রদ্যুম্ন দীক্ষিত ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়।
তদন্ত এখনও চলছে। ACB সূত্রে খবর, পুনম দীক্ষিতের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ও সংশ্লিষ্ট দুই কোম্পানির আর্থিক লেনদেন খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রাজস্থানের সরকারি দফতরে এই কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসায় প্রশাসনিক মহলে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।