রাজস্থানের ঝালাওয়ারের স্কুলের ছাদ ভেঙে পড়ার ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে সাতজন পড়ুয়া। গুরুতর জখম প্রায় ১২ জন। সেই ঘটনার পরপরই বড় দাবি করল স্কুলের পড়ুয়ারা। তাদের দাবি, ছাদের অবস্থা যে ভাল নয়, তা আগেই টের পেয়েছিল তারা। ছাদ থেকে প্লাস্টার, সিমেন্টের টুকরো ভেঙে তাদের মাথায় পড়ছিল। সেই বিষয়ে তারা ক্লাসের শিক্ষকদের জানিয়েছিল বলেও দাবি করে। যদিও এর বদলে তাদের বেশ বকুনি খেতে হয় স্যারদের কাছে।স্থানীয় সূত্রে খবর, দুর্ঘটনার সময় শিক্ষকরা সকালের জলখাবার খেতে গিয়েছিলেন। তখনই ছাত্রছাত্রীরা দেখতে পায়, ক্লাসরুমের ভিতরে ছাদ থেকে পলেস্তরা খসে পড়ছে। তারা সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষকদের জানায়। কিন্তু শিক্ষকরা বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে পড়ুয়াদের ক্লাসে ফিরে বসতে বলেন।
এক অষ্টম শ্রেণির ছাত্র জানিয়েছে, 'ছোট ছোট পাথর পড়ছিল। আমরা শিক্ষকদের বলি। কিন্তু তারা আমাদের বকাঝকা করে বলেন বসে থাকতে। কিছুক্ষণ পরেই দেয়াল ভেঙে পড়ে, ছাদ নেমে আসে। অনেকে দৌড়ে পালাতে পারলেও বেশ কয়েকজন ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে যায়। পরে গ্রামবাসীদের সাহায্যে পড়ুয়াদের উদ্ধার করা হয়।'
স্কুলের অবস্থা আগেই বেহাল ছিল। মাত্র এক মাস আগেই দেয়াল ও ছাদে সিমেন্টের প্লাস্টার করা হয়েছিল। অথচ সেই বিল্ডিংয়েরই এমন বিপর্যয় ঘিরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
গাফিলতির অভিযোগে পাঁচ শিক্ষক সাসপেন্ড
এই ঘটনায় পাঁচ শিক্ষককে অবহেলার দায়ে সাসপেন্ড করা হয়েছে। অভিযোগ, তাঁদের গাফিলতিই সাত ছাত্রছাত্রীর মৃত্যু ও বহু জনের জখম হওয়ার কারণ।
ঝালাওয়ারের পিম্পলোদ গ্রামে অবস্থিত সরকারি হাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করত ওই শিশুরা। স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। তাঁরা অভিযোগ করেছেন, শিক্ষকরা যদি সতর্কবার্তা শুনতেন, তাহলে এত বড় দুর্ঘটনা এড়ানো যেত।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতাদের প্রতিক্রিয়া
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে ঘটনাটিকে 'অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও হৃদয়বিদারক' বলে মন্তব্য করেছেন।
রাজ্যের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী সচিন পাইলট বলেন, 'এই ঘটনায় লজ্জায় আমাদের মাথা হেঁট হয়ে গিয়েছে।' কড়া পদক্ষেপের দাবি তোলেন তিনি। শিক্ষামন্ত্রীর মন্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'বিজেপি সরকার রাজ্যে ও কেন্দ্রে ক্ষমতায়। তাহলে কেন আগে থেকে বিপজ্জনক স্কুলগুলির সংস্কার হয়নি?'
প্রশাসনের পদক্ষেপ
জেলা শাসক অজয় সিং রাঠৌর জানান, 'আমরা জুন মাসেই নির্দেশ জারি করেছিলাম, কোথাও কোনও জরাজীর্ণ ভবনে পড়ুয়াদের বসানো যাবে না। বহু স্কুলে সংস্কারও হয়েছে। এখানে স্পষ্ট গাফিলতি রয়েছে। পাঁচজন শিক্ষাকর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, রিপোর্ট এলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
এক পড়ুয়ার আত্মীয় বলেন, 'আমরা আগেই স্কুলের অবস্থা নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছিলাম। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।'