ফের সাইবার ক্রিমিনালদের হাতে ডিজিটাল অ্যারেস্টের শিকার অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ। জানা গিয়েছে, দিল্লি নিবাসী ৭৮ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্কার নরেশ মালহোত্রাকে ১ মাস ধরে ডিজিটাল অ্যারেস্ট করে রেখেছিল প্রতারকরা। এতে ২৩ কোটি টাকা খুইয়েছেন তিনি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৪ অগাস্ট থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দিল্লির হজ খাস এলাকার গুলমোহর অ্যাপার্টমেন্টে ডিজিটাল অ্যারেস্ট ছিলেন ওই প্রবীণ।
কীভাবে ফাঁদে পা দিলেন প্রবীণ?
দিল্লির বাসিন্দা নরেশ মালহোত্রা কীভাবে প্রতারকদের ফাঁদে পড়লেন? বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার লেনদেনের মাধ্যমে তাঁর ৩টি অ্যাকাউন্ট থেকে ২২ কোটি ৯২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারকরা। দিল্লি পুলিশ কর্তারা জানিয়েছেন, এক মহিলা প্রতারক নিজেকে মুম্বই পুলিশ হিসেবে পরিচয় দেয়। প্রবীণকে বলা হয়, তাঁর আধার কার্ডের সঙ্গে লিঙ্ক করা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে পুলওয়ামা হামলার সময়ে জঙ্গিদের ব্যাঙ্কে টাকা পাঠানো হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, তাঁর দুই মেয়ে, জামাই ও নাতি-নাতনিদের প্রাণে মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়। ১ মাস ধরে কখনও ED, কখনও CBI এবং মুম্বই পুলিশের নাম করে হুমকি দেওয়া হয় বৃদ্ধকে।
দিল্লি পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, 'সাম্প্রতিক অতীতে ডিজিটাল অ্যারেস্টে এত বড় অঙ্কের প্রতারনা কারও সঙ্গে হয়নি।' নরেশ মালহোত্রার অভিযোগের ভিত্তিতে দিল্লি পুলিশের ফিউশন অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক অপারেশন (IFSO) ইউনিট একটি FIR দায়ের করেছে। ইতিমধ্যেই তদন্তে নেমে বৃদ্ধের দেড় কোটি টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ।
নরেশ মালহোত্রা জানিয়েছেন, সাইবার প্রতারকরা তাঁকে হুমকি দিয়ে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ডিটেলস, সম্পত্তির বর্ণনা, ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট, লকার এবং যাবতীয় ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেয়। এমনকী তাঁর পরিবারের নানা ব্যক্তিগত তথ্যও ছলে বলে কৌশলে জেনে নেয় ক্রিমিনালরা। তাঁকে দিয়ে বলিয়ে নেওয়া হয় বাড়ির ঠিকানাও।
পুলিশের সতর্কবার্তা
দিল্লির জয়েন্ট কমিশনার রজনীশ গুপ্তা বলেন, 'ক্রমশ এই ধরনের ঘটনা বাড়ছে। নাগরিকদের বলব, সঞ্চার সাথী অ্যাপ ডাউনলোড করে ব্যবহার করা শুরু করুন। ডিজিটাল অ্যারেস্টের জন্য যে ধরনের নম্বরগুলি থেকে ফোন আসে, সেগুলিকে ব্লক করে এই অ্যাপ। কোনও ভুয়ো লিঙ্কও পাঠানো যাবে না আপনার ফোনে। ৩ জনের বেশি এই ধরনের নম্বর সঞ্চার সাথী অ্যাপ থেকে ব্লক করলে তা আর কখনও সক্রিয় হবে না।'
উৎসবের মরশুমে সাবধানতা
উৎসবের মরশুমে এই ধরনের সাইবার প্রতারনা চক্র আরও বেশি সক্রিয় থাকে। ফলে অবসরপ্রাপ্ত একাকী বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের আরও বেশি করে সতর্ক করা হয়েছে। এছাড়াও নবরাত্রি এবং দুর্গাপুজোর সময়ে বেশি কেনাকাটা এবং অনলাইন লেনদেন বেড়েছে। এই সময়ে ডিজিটাল অ্যারেস্টের আশঙ্কা বেশি রয়েছে। কখনও বিমানবন্দরে পাসপোর্ট পাওয়া গিয়েছে বলে আবার কখনও সিমকার্ডের সঙ্গে যুক্ত অ্যাকাউন্ট থেকে জঙ্গিদের অর্থ সাহায্য করা হয়েছে বলে ভয় দেখিয়ে ডিজিটাল অ্যারেস্টের ফাঁদে ফেলা হয়। ডিজিটাল বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, +6, +92 দিয়ে শেষ হচ্ছে এমন ৫ বা ৬ ডিজিটের নম্বর থেকে কল আসে প্রতারকদের। এমন নম্বর থেকে ফোন এলে না ঘাবড়ে পুলিশকে খবর দিতে হবে।