উত্তরপ্রদেশের সম্ভলের হিংসা নিয়ে সেই রাজ্যের মুখ্য়মন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের কাছে রিপোর্ট জমা পড়ল। তিন সদস্যের এক কমিটি এই রিপোর্ট তুলে দেন যোগীর হাতে। ৪৫০ পাতার এই রিপোর্টে ওই এলাকার জনবিন্যাস, হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক, স্বাধীনতা পরবর্তী ও বর্তমান সময়ের সম্ভলের যাবতীয় তথ্য তুলে দেওয়া হয়েছে।
সেই রিপোর্টে উল্লেখ, সম্ভলে এখন মাত্র ১৫ শতাংশ হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন। অথচ স্বাধীনতার সময় সম্ভলের পুরসভা এলাকায় সেই জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৪৫ শতাংশ। অর্থাৎ উল্লেখযোগ্য হারে ওই এলাকায় হ্রাস পেয়েছে হিন্দু বসবাসকারীর সংখ্যা।
গত বছর সম্ভলের শাহি জামা মসজিদকে ঘিরে অশান্তি হয়। সেই মসজিদের জরিপের নির্দেশ দিয়েছিল স্থানীয় আদালত। দাবি করা হয়েছিল, সেই মসজিদটি আগে মন্দির ছিল। কিন্তু সেখানে জরিপের জন্য সরকারের তরফে আধিকারিক ও পুলিশকর্মীরা গেলে তাঁদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখায় এলাকাবাসী। এমনকী মসজিদের কাছে জড়ো হওয়া একদল লোক পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষেও জড়িয়ে পড়েন। নিরাপত্তাকর্মীদের লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হয়। গাড়িতে অগ্নিসংযোগ চলে। ২০ জনেরও বেশি পুলিশকর্মী জখম হন।
এই হিংসার জেরে অবসরপ্রাপ্ত হাইকোর্টের বিচারক দেবেন্দ্র আরোরার নেতৃত্বে তিন সদস্যের এক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। আরও দুই সদস্য হলেন প্রাক্তন আইপিএস একে জৈন ও অমিত প্রসাদ।
কমিটির দেওয়া রিপোর্টে উল্লেখ, ১৯৪৭ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ১৫ টি সাম্প্রদায়িক হিংসার সাক্ষী থেকেছে সম্ভল। যার মধ্যে ১৯৪৮, ১৯৫৩, ১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৭৬, ১৯৭৮, ১৯৮০, ১৯৯০, ১৯৯২, ১৯৯৫, ২০০১ এবং ২০১৯ সালের হিংসার উল্লেখও রয়েছে।
সূত্রের খবর, যোগীর কাছে পেশ করা রিপোর্টে উল্লেখ সম্ভলে স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই পুরসভা এলাকার জনবিন্যাসে বড়সড় পরিবর্তন এসেছে। সেই সময় হিন্দু ও মুসলিমের শতকরা ভাগ ছিল ৪৫ ও ৫৫। তবে তারপর থেকে হিন্দুদের সংখ্যা কমতে শুরু করে। এখন সেখানে হিন্দু কমে এসে দাঁড়িয়েছে ১৫ শতাংশে। হিন্দুদের সংখ্যা কমার কারণ হিসেবে তুষ্টিকরণের রাজনীতিকে দায়ি করা হয়েছে।
২০২৪ সালের নভেম্বরের ঘটনা সম্পর্কে কমিটির রিপোর্টে উল্লেখ, সমাজবাদী পার্টির সাংসদ জিয়া উর রহমান বারকের ২২ নভেম্বরের মন্তব্যের পর ধর্মান্তরিত হিন্দু পাঠানরা বিক্ষোভ শুরু করে। তার ২ দিন পর তুর্কি ও পাঠানদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরে ক্রস ফায়ারিং হয়, যেখানে চারজন নিহত হন।
সূত্রের খবর, সেখানে আরও উল্লেখ, সম্ভলে একসময় ৬৮টি তীর্থস্থান এবং ১৯টি পবিত্র কূপ ছিল। যোগী আদিত্যনাথ সরকার সেগুলোর পুনরুজ্জীবনের জন্য পরিকল্পনা শুরু করে।