
মহাকুম্ভের দ্বিতীয় অমৃতস্নান পর্বের আগেই ভয়াবহ দুর্ঘটনা প্রয়াগরাজে। মৌনী অমাবস্যার দিন প্রয়াগরাজের সঙ্গম এলাকায় পদপিষ্টের ঘটনা ঘটেছে । এতে ১০ জনের বেশি পুণ্যার্থী মৃত্যু হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। পদদলিত হওয়ার পর আখড়া পরিষদ ১৩টি আখড়ার আজকের অমৃত স্নান বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, পদদলিত হয়ে বহু মানুষ আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। যার চিকিৎসা চলছে মেলা এলাকার ২ নম্বর সেক্টরে নির্মিত সেন্ট্রাল হাসপাতালে।
এদিকে, পদপিষ্টের ঘটনায় অনেক ভয়ঙ্কর ছবিও উঠে আসছে। যেখানে কাউকে তার পরিবারের সদস্যদের মৃত্যুতে কাঁদতে দেখা গেছে, আবার কাউকে ভিড়ের মধ্যে তার হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জনকে খুঁজতে দেখা গেছে। কোথাও কোথাও পুলিশ সদস্যদের আহতদের নিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে। মেলা প্রশাসন আখড়া পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রপুরীর কাছে আখড়ায় অমৃতস্নান বন্ধের আবেদন জানিয়েছিল, তার পর এই অমৃতস্নান আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
কীভাবে পদপিষ্টের ঘটনা ঘটল?
তথ্যমতে, রাত ২টো থেকে সঙ্গম তীরে ভক্তদের ভিড় জমেছিল। এসময় ব্যারিকেডের একাংশ ভেঙে পড়ে এবং লোকে পদদলিত হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং লোকজন এদিক ওদিক ছুটতে থাকে। অনেক ভক্তের জিনিসপত্র পড়ে যায়, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আমরা নির্বিঘ্নে যাচ্ছিলাম, এমন সময় হঠাৎ ভিড় এসে পড়ে। ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। আমরা পালানোর চেষ্টা করেছি, কিন্তু কোথাও জায়গা ছিল না। সবাই এখানে-সেখানে ছিটকে গেল। আহত হয়েছেন বহু মানুষ। পরিস্থিতি এমন যে আমরা জানি না কী ঘ
টছে।
এদিকে, পদদলিত হওয়ার খবর পাওয়া মাত্রই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ, আধাসামরিক বাহিনী ও ফায়ার ব্রিগেডের দল। ফায়ার সার্ভিসের একটি অল-টেরেন গাড়ি আগে থেকেই সঙ্গম এলাকায় উপস্থিত ছিল, যার সাহায্যে অনেক আহত মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। চিফ ফায়ার অফিসার (সিএফও) ভারতেন্দু যোশি বলেছেন যে এই গাড়িটি ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে ছিল, যার কারণে দ্রুত ত্রাণ কাজ শুরু করা গিয়েছিল। এই গাড়ির সাহায্যে একটি বাচ্চাকে অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যাওয়া হয়।
ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। ত্রাণ ও উদ্ধার অভিযান চলছে এবং পুরো এলাকায় পুলিশ নজরদারি বাড়াচ্ছে। ভক্তদের ধৈর্য ধরতে এবং প্রশাসনের নির্দেশ মেনে চলার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। ঘটনার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে জনগণকে যেখানে আছেন সেখানে থাকার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। কিন্তু ভিড় ক্রমাগত গঙ্গার দিকে যাচ্ছে, যার জেরে প্রশাসনও অসহায়। অনেক ঋষি ও সাধকও ভক্তদের তাদের জায়গায় থাকার এবং এখানে-সেখানে না যাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। জনগণকে শান্তি বজায় রাখারও আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বুধবার মৌনী অমাবস্যায় স্নান করার আবেগের কারণে মহাকুম্ভ নগরে প্রচুর মানুষ ভিড় করেছিলেন। প্রয়াগরাজের জনসংখ্যা ৫ কোটি ছাড়িয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ ৪ কোটি ৬৪ লাখ ভক্ত স্নান করে নতুন রেকর্ড গড়েছেন। এর সঙ্গে যদি জেলার জনসংখ্যা যোগ করা হয়, প্রায় ৭০ লক্ষ, তাহলে প্রয়াগরাজে একদিনে রেকর্ড করা জনসংখ্যা ছিল ৫.৩৪ কোটি।