পহেলগাওঁয়ের জঙ্গি হামলার পর ভারত যে প্রত্যাঘাত করল, তার নেতৃত্বে ছিলেন এমন এক সাহসিনী, যার পরিবারে সেনাবাহিনীতে কাজ করার রীতিই প্রজন্মান্তরে চলে এসেছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্নেল সোফিয়া কুরেশি এবং উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং গতকাল সংবাদমাধ্যমের সামনে দাঁড়িয়ে জানালেন কীভাবে ‘অপারেশন সিঁদুর’ সফলভাবে বাস্তবায়িত করা হয়েছিল। এই ঘটনায় গোটা দেশ গর্বিত, আর সোশ্যাল মিডিয়ায় তারা হয়ে উঠেছেন নারীর ক্ষমতায়নের প্রতীক।
ভদোদরার বাসিন্দা কর্নেল সোফিয়ার বাবা তাজ মোহাম্মদ কুরেশি নিজেও একজন যোদ্ধা ছিলেন। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি এএনআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, 'আমরা আমাদের মেয়ের জন্য গর্বিত। পাকিস্তান ধ্বংস হওয়া উচিত। আমি, আমার বাবা, আমার দাদা—তিন প্রজন্ম ধরেই আমরা ভারতীয় সেনাবাহিনীর অংশ।'
তাজ মোহাম্মদের মতে, 'আমরা প্রথমে ভারতীয়, তারপর অন্য কিছু। সুযোগ পেলে আজও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিতাম।' তার বক্তব্য ভারতীয় সেনার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং দেশের জন্য প্রাণ দেওয়ার মানসিকতাকেই তুলে ধরে।
কর্নেল সোফিয়ার জীবনযাত্রা যথেষ্ট অনুপ্রেরণামূলক। তিনি ভদোদরার এমএস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন এবং সহকারী অধ্যাপক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন। পিএইচডি করার সময়েই সেনাবাহিনীতে শর্ট সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে যোগ দেন। পরবর্তীতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের অন্তর্গত কঙ্গোতেও কাজ করেছেন।
২০১৬ সালে, তিনি প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে বহুজাতিক সামরিক মহড়া ‘ফোর্স ১৮’-তে নেতৃত্ব দেন। তার ভাই সঞ্জয় কুরেশি বলেন, 'আমার মেয়ে জারাও এখন সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন দেখে, তার মাসি সোফিয়ার মতো।'
কর্নেল সোফিয়া কুরেশির জীবন ও কাজ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে মহিলাদের ক্রমবর্ধমান ভূমিকা ও সাফল্যের একটি শক্তিশালী উদাহরণ। তিনি প্রমাণ করেছেন, যখন দেশকে রক্ষা করার কথা আসে, তখন নারীরাও সর্বাগ্রে দাঁড়াতে পারে সম্মান ও সাহসে।
অপারেশন সিন্দুরে মেয়ের সাফল্যে গর্বিত কর্নেল সোফিয়া কুরেশির বাবা, বললেন— সুযোগ পেলে পাকিস্তানকে ধ্বংস করতাম
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে 'অপারেশন সিন্দুর'-এর পর গোটা দেশে প্রশংসার বন্যা বয়ে চলেছে। বিশেষ করে কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ও উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং— এই দুই সাহসিনী ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর বীরত্বের প্রতীক হয়ে উঠেছেন। কর্নেল কুরেশির ব্রিফিংয়ের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। এমন এক মুহূর্তে তার বাবা তাজ মোহাম্মদ কুরেশি-র বক্তব্য আরও আবেগ ছড়িয়ে দিয়েছে।
ভদোদরার বাসিন্দা এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্তন যোদ্ধা তাজ মোহাম্মদ সংবাদমাধ্যমে বলেন, 'আমরা গর্বিত, আমাদের মেয়ে দেশের জন্য অনেক করেছে। সুযোগ পেলে আমরাও পাকিস্তানকে ধ্বংস করে দিতাম। পাকিস্তান বসবাসযোগ্য দেশ নয়।'
তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট, দেশসেবা তাঁদের রক্তে। তিন প্রজন্ম ধরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত কুরেশি পরিবার। এই পরিবারে প্রথমে মানুষ ‘ভারতীয়’, পরে অন্য কিছু— এমন মনোভাবেই গড়ে উঠেছে দেশভক্তির ভিত্তি।
সোফিয়া কুরেশি মূলত একজন শিক্ষিকা ছিলেন। ভদোদরার এমএস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জৈব রসায়নে বিএসসি ও এমএসসি করেন। পরে সেখানে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। কিন্তু পিএইচডির মাঝপথে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৯৭ সালে সিগন্যাল কর্পসে যোগ দেন এবং ২০১৬ সালে ফোর্স-১৮ সামরিক মহড়ায় ভারতের নেতৃত্ব দিয়ে প্রথম মহিলা কমান্ডার হিসেবে ইতিহাস গড়েন। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের অধীনে কঙ্গোতেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন।