কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি বিল বাতিলের দাবিতে দিল্লি চলো অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন কৃষকেরা। বৃহস্পতিবার হাজার হাজার কৃষক হরিয়ানা থেকে দিল্লির দিকে যাওয়ার সময় তাঁদের পঞ্জাব-হরিয়ানা সীমানায় আটকায় পুলিশ। এই ঘটনা ঘিরে তীব্র উত্তেজনা ছড়ায়। শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।
এদিন বিকেলে সব বাধা সরিয়ে এগিয়ে যান প্রতিবাদী কৃষকেরা। হরিয়ানাতে তাঁদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। তাঁরা দিল্লিতে পৌঁছতে পারেননি। হরিয়ানার পানিপথের কাছে টোল প্লাজার কাছে তাঁদের অনেককে আটকে দেওয়া হয়েছে। তবে কয়েকজন হালদানার কাছে পৌঁছে গিয়েছেন। যা দিল্লি থেকে ৬২ কিলোমিটার দূরে। পরিস্থিতি আয়ত্তে রাখতে দিল্লি পুলিশ ইতিমধ্যে ভিন রাজ্যের সীমানায় অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করেছে।
ঘটনার দিকে আগে থেকেই নজর রাখা হয়েছিল। তাই বেশ কয়েকটা রাস্তায় ইতিমধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এবং দিল্লির সঙ্গে সংযোগকারী প্রতিবেশী শহরগুলোর মধ্যে মেট্রো পরিষেবাও আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। কৃষকরা দিল্লি ঢুকতে পারেননি। পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টর সরকারের সমালোচনা করেছে।
এখনও পর্যন্ত কী জানা যাচ্ছে দিল্লি চলো অভিযানে? দেখে নেওয়া যাক। পঞ্জাব থেকে প্রতিবাদী কৃষকেরা হরিয়ানার দিকে রওনা হয়েছিলেন। সেখানে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল। প্রথমে তাঁদের জলকামানের মুখে পড়তে হয়, হরিয়ানা সীমান্তে।
এরপর বিকেলের দিকে অজস্র প্রতিবাদী কৃষক হরিয়ানা এবং পঞ্জাব সীমানা এলাকায় পৌঁছে যান। তারপর তাঁরা পৌঁছে যান দিল্লির কাছে। কিন্তু সেখানে তখন বিশাল পুলিশ মোতায়েন করা ছিল। তাঁদের আটকানো হয় পানিপথ টোলপ্লাজার কাছে। তবে ততক্ষণে তাঁরা পৌছে গিয়েছেন হালদানার কাছে, যা রাজধানী থেকে ৬২ কিলোমিটার দূরে। এবার সেখানে আটকে দেওয়া হয়।
হরিয়ানা সরকার নাগরিকদের কাছে আবেদন করেছে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক এবং ৪৪ নম্বর জাতীয় সড়ক যেন ব্যবহার না করা হয়।
প্রতিবাদ আন্দোলনের কারণে বিভিন্ন রাস্তা এবং জাতীয় সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তার কারণে এই সিদ্ধান্ত। ইতিমধ্যে যানজট দেখা গিয়েছে। হরিয়ানা এবং উত্তরপ্রদেশ দিক থেকে যে সমস্ত গাড়ি আসছে, সেগুলিতে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।
এদিন সকালের দিকে পঞ্জাব-হরিয়ানা সীমান্তে পুলিশ এবং পঞ্জাবের কৃষকদের মধ্যে একটা সংঘাতের পরিবেশ তৈরি হয়। পুলিশ তখন ঘোষণা করে তাঁরা যেন এখান থেকে সরে যায়। তবে প্রতিবাদীরা সেই নির্দেশ মানেনি। ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তখন হরিয়ানা পুলিশ জলকামান এবং কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে এর পরেও তাঁদেরকে আটকানো যায়নি। কৃষকদের মধ্যে অনেকে তা পেরিয়ে এগিয়ে গিয়েছেন। তাঁরা ঘাগ্ঘর নদীর কাছে পৌঁছে যান এবং তখন তাঁদের সেখানে আটকানো হয়।
পুলিশ এবং কৃষকদের সংঘর্ষের খবর এসেছে আম্বালা জেলা থেকেও। হরিয়ানার সিরসা, কুরুক্ষেত্র, ফতেহাবাদ এবং জিন্দ জেলা থেকে, যা পঞ্জাব সীমান্তে। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের আটকাতে সিমেন্ট এবং স্টিলের ব্যারিকেড লাগিয়েছিল এবং অনেকগুলো ট্রাকও করে রেখেছিল। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে পুলিশ আগে থেকেই তৈরী ছিল তাদের মোকাবিলার জন্য।
তবে কয়েক ঘন্টা পর আরও অনেক প্রতিবাদী কৃষক পঞ্জাব-হরিয়ানা সীমান্তে পৌঁছে যান। এবং এর মধ্যে অনেকে তো ব্যারিকেড বেরিয়ে এগোতে শুরু করেন। তবে পুলিশ তাঁদেরকে আটকায়। তবে তা পারেনি এবং তাঁদের ট্রাক্টরগুলিকে দিল্লির দিকে যেতে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।
অমৃতসর দিল্লি হাইরোডে ব্যারিকেড লাগানো হয়েছিল। সেখানকার কারনালেও আরেক দফা পুলিশ এবং কৃষকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়ায়। সেখানে তাঁদের ওপর জলকামান ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। ট্রাক্টরের করে পঞ্জাব এবং হরিয়ানার অনেক প্রতিবাদী কৃষক দিল্লির দিকে রওনা দেন। যানজট মোকাবিলা করতে পুলিশ প্রাইভেট গাড়িগুলোকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেয়।
পঞ্জাবের এক প্রতিবাদী কৃষক জানান, হরিয়ানা পুলিশ এমন আচরণ করছে, যা নিন্দাযোগ্য। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকে দমনের চেষ্টা করছে। আমরা তো শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করছি। কিন্তু আমাদের যেভাবে আটকানো হচ্ছে, তা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকারকে বাধা দেওয়া। কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল হরিয়ানা পুলিশের আচরণের সমালোচনা করেছে।
পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং এবং হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খাট্টার টুইটে একে অপরকে দুষেছেন। অমরিন্দরের দাবি, হরিয়ানা সরকার মানুষের সাংবিধানিক অধিকারকে দমন করার চেষ্টা করছে। তাঁকে পাল্টা দিয়েছেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী। তিনি নয়া কৃষি আইনের সমর্থনে গলা ফাটিয়েছেন। এবং পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীকে সস্তা রাজনীতি থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
শিরোমনি আকালি দলের নেতা সুখবীর সিং বাদল প্রতিবাদীদের ওপর হামলার ঘটনার নিন্দা করেছেন। তাঁর মতে, এটা হল পঞ্জাবের ২৬/১১। তিনি বলেন, আমরা দেখছি গণতান্ত্রিক অধিকারকে কীভাবে নষ্ট করা হচ্ছে।
এর আগে হরিয়ানা তার সীমান্ত আটকে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল। যাতে প্রতিবাদী কৃষকরা ওই রাজ্য হয়ে দিল্লি না যেতে পারে। একইসঙ্গে দিল্লি পুলিশও তাদের ২৬ এবং ২৭ নভেম্বর সেখানে জমায়েত করার ব্যাপারে কোনও অনুমতি দেয়।