বিবাহিত দম্পতিদের জন্য একটি তাত্পর্যপূর্ণ পর্যবেক্ষণ করল সুপ্রিম কোর্ট। একটি মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বললেন, 'স্বামীকে লাট্টুর মতো ঘোরাবেন না।' দাম্পত্য কলহের একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির পরামর্শ হল, নিজেদের অহংকার, ইগো একদিকে রেখে সন্তানের উপকারের কথা ভাবুন।
এই মামলায় বিচারপতি বি ভি নাগরত্না এবং বিচারপতি আর. মহাদেবনের বেঞ্চ বলেন, 'স্বামীও স্ত্রীর সম্পর্ক শুধুমাত্র অধিকার ও দায়িত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর মধ্যে বোঝাপড়া, শ্রদ্ধা ও মানসিক ভারসাম্যের প্রয়োজন।' আদালত দু’জনকেই মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিষয়টি মেটানোর পরামর্শ দেয়।
স্বামী দিল্লিতে রেলে কর্মরত, আর স্ত্রী পটনায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কর্মী
মামলার শুনানিতে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, স্বামী দিল্লিতে রেলে কর্মরত, আর স্ত্রী পটনায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কর্মী। দুজনে সরকারি চাকরি। স্ত্রী বর্তমানে তাঁর বাপেরবাড়ি পটনায় থাকেন এবং সন্তানদেরও নিজের সঙ্গে রেখেছেন। স্বামীর দাবি, শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন, তাই তিনি সেখানে গিয়ে থাকতে পারেন না। স্বামী আদালতকে জানান, তিনি পটনায় আলাদা বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে রাজি এবং সপ্তাহে একদিন সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে চান। সুপ্রিম কোর্ট এই প্রস্তাবকে যুক্তিসঙ্গত বলে মনে করে স্ত্রীর আইনজীবীকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে স্ত্রীকে বোঝানোর চেষ্টা করতে। কিন্তু স্ত্রী সেই প্রস্তাবে রাজি হননি।
স্বামীকে লাট্টুর মতো ঘোরানো যায় না
স্ত্রী শুনানিতেই অনীহা প্রকাশ করেন। তখন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বলেন, 'একজন স্ত্রী হিসেবে তাঁরও দায়িত্ব আছে, কেবল নিজের মত চাপিয়ে দেওয়া ঠিক নয়। স্বামীকে লাট্টুর মতো ঘোরানো যায় না। শীর্ষ আদালত আরও মন্তব্য করে, 'মা-বাবার বিষয়টিও বিবেচনা করা উচিত। অনেক সময় দেখা যায়, শ্বশুর-শাশুড়িকে ঘর ছেড়ে যেতে হয়, কারণ পুত্রবধূ তাঁদের সঙ্গে থাকতে চান না।' বিচারপতিরা বলেন, দাম্পত্যে মতের অমিল হতেই পারে, কিন্তু যখন মা-বাবার মতের অমিলে সন্তানরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়, তখন দুই পক্ষেরই উচিত কিছুটা নরম হওয়া। আদালত মনে করে, সন্তানদের মানসিক শান্তিই এই মামলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক।
২০১8 সালের বিয়ে, ২০২৩ সাল থেকে আলাদা থাকা
জানা গিয়েছে, এই দম্পতির বিয়ে হয় ২০১৪ সালে। তাঁদের একটি পাঁচ বছরের মেয়ে ও তিন বছরের ছেলে আছে। ২০২৩ সাল থেকে তাঁরা আলাদা থাকছেন। স্ত্রী মামলাটি পটনায় স্থানান্তর করার আবেদন জানান, কারণ তিনি ও তাঁর সন্তান বর্তমানে সেখানে থাকেন। আদালত শেষ পর্যন্ত পরামর্শ দেয়, এই কলহ আদালতের বাইরে মধ্যস্থতার মাধ্যমে মেটানোই সবচেয়ে ভাল পথ, যাতে অল্পবয়সী দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে না যায়।
সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চের মতে, দাম্পত্য কলহে অহংকার কখনও সমাধান নয়। বরং দু’জনের বোঝাপড়া ও সহনশীলতাই সংসার বাঁচানোর মূল উপায়। বিচারপতিরা বলেন, স্বামী-স্ত্রী যদি নিজেদের আত্মসম্মান রক্ষার নাম করে পরস্পরকে আঘাত করেন, তাহলে ক্ষতি হয় শুধু সন্তানদের।