কেন্দ্রকে CAA-এর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়ার পিটিশনের জবাব দিতে হবে। মঙ্গলবার এর জন্য় ৩ সপ্তাহের সময়সীমা বেঁধে দিল সুপ্রিম কোর্ট। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন(CAA) সম্প্রতি লাগু হয়েছে। সেটি বন্ধ করতে চেয়ে পিটিশন জমা পড়েছে। সেগুলির পর্যালোচনার জন্যই সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রকে এই নির্দেশ দেয়। এদিকে জবাব দেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টের কাছে সময় চেয়েছে কেন্দ্র।
'এটি (সিএএ) কোনও ব্যক্তির নাগরিকত্ব কেড়ে নিচ্ছে না,' বলেন কেন্দ্রের পক্ষে উপস্থিত সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূদের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চকে এমনটা জানান তিনি।
সলিসিটর জেনারেল বলেন, পিটিশনের পাল্টা প্রতিক্রিয়া দিতে তাঁর কিছুটা সময় প্রয়োজন। উল্লেখ্য এই পিটিশনগুলিতে নাগরিকত্ব (সংশোধন) আইন, ২০১৯-এর সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। শীর্ষ আদালত এর নিষ্পত্তি না করা পর্যন্ত আইন কার্যকর করার ক্ষেত্রে স্থগিতাদেশ চেয়েছেন পিটিশনকারীরা।
কেন্দ্রের আইনজীবীর আর্জি মতো, প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় কেন্দ্রকে ৩ সপ্তাহের সময় দিয়েছেন। বলেছেন, আদালত ফের আগামী ৯ এপ্রিল এই বিষয়ে শুনানি করবে।
শীর্ষ আদালত এই বিতর্কিত আইনের সঙ্গে যুক্ত ২০০টিরও বেশি পিটিশনের একযোগে শুনানি করে। গত ১৫ মার্চ দেশে সিএএ লাগু হয়। সংসদে পাশ হওয়ার প্রায় চার বছর পর। আলোচ্য পিটিশনগুলিতে সিএএ এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী বিধি ২০২৪-এর বাস্তবায়নে স্থগিতাদেশ চাওয়া হয়েছে।
গত সপ্তাহে, সিনিয়র অ্যাডভোকেট কপিল সিব্বল সুপ্রিম কোর্টে কেরলের ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ (IUML)-এর দায়ের করা একটি পিটিশনের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, লোকসভা নির্বাচনের বেশিদিন বাকি নেই। এমন সময়েই এই বিতর্কিত আইন বাস্তবায়নের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
সিএএ-এর বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করে যে পিটিশনগুলি জমা পড়েছে, তার মূল বিষয়বস্তু মোটামুটি একই। তাতে বলা হয়েছে, সিএএ ধর্মের ভিত্তিতে মুসলমানদের প্রতি বৈষম্য করে।
এটাও দাবি করা হয়েছে যে, এই ধরনের ধর্মীয় বিচ্ছিন্নতার কোনও যুক্তি নেই।
IUML ছাড়াও, অন্যান্য আবেদনকারীদের তালিকায় আছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মহুয়া মৈত্র; কংগ্রেস নেতা এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়রাম রমেশ; এআইএমআইএম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি; অসম কংগ্রেসের নেতা দেবব্রত সাইকিয়া; এনজিও রিহাই মঞ্চ এবং সিটিজেনস অ্যাগেইনস্ট হেট, অসম অ্যাডভোকেটস অ্যাসোসিয়েশন; এবং একদল আইনের পড়ুয়া।
আইইউএমএল, দেবব্রত সাইকিয়া, অসম জাতীয়তাবাদী যুব ছাত্র পরিষদ (একটি আঞ্চলিক ছাত্র সংগঠন), ডেমোক্রেটিক ইয়ুথ ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া (ডিওয়াইএফআই) এবং সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি অফ ইন্ডিয়া (এসডিপিআই)ও সিএএ ২০২৪-কে চ্যালেঞ্জ করেছে। .
কেরলই প্রথম রাজ্য যারা ২০২০ সালে CAA-এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল। তারা দাবি করেছিল যে, এটি ভারতীয় সংবিধানের সমতার অধিকার লঙ্ঘণ করে।
সুপ্রিম কোর্টে আবেদনে, ওয়াইসি বলেছেন, 'সিএএ কেবল নাগরিকত্ব প্রদানের জন্যই নয়, এটি অত্যন্ত স্পষ্টভাবে একটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে বিচ্ছিন্ন করে তাদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট করে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ও নাগরিকত্ব অস্বীকার করার জন্য তৈরি।'
এআইএমআইএম প্রধান বলেন, এনআরসি-র মাধ্যমে মুসলিম সম্প্রদায়কে টার্গেট করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
তবে সবক্ষেত্রেই কেন্দ্র তার অবস্থানে অনড় থেকেছে। তারা বারবার একথাই বলেছে যে, এটি নাগরিকদের আইনি, গণতান্ত্রিক বা ধর্মনিরপেক্ষতার অধিকার প্রভাবিত করবে না। এটিকে চ্যালেঞ্জ করে যে আবেদনগুলি করা হয়েছে, তা খারিজ করার জন্য আদালতকে অনুরোধ করে কেন্দ্র।
CAA-এর মাধ্যমে ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করা হয়েছে। এতে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ বা তার আগে নিজ দেশে ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান থেকে আসা হিন্দু, শিখ, জৈন, পার্সি, বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের অভিবাসীদের দ্রুততর ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদান করা হবে।