
ভারতীয় সেনাবাহিনীর ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র ও শৃঙ্খলা রক্ষার প্রশ্নে কঠোর অবস্থান নিল সুপ্রিম কোর্ট। মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশ করতে অস্বীকৃতি জানানোয় বরখাস্ত হওয়া খ্রিস্টান সেনা অফিসার স্যামুয়েল কমলেসানের বহিষ্কারাদেশ বহাল রেখেছেন শীর্ষ আদালত। আদালত স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে, সেনাবাহিনীর শপথ ও শৃঙ্খলা ব্যক্তিগত বিশ্বাসের ঊর্ধ্বে, এবং সেনাবাহিনী একটি ধর্মনিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে কোনও ধরনের অসহযোগিতা বরদাস্ত করতে পারে না।
'আপনি সেনার অনুভূতিতে আঘাত করেছেন'
ভারতের প্রধান বিচারপতি (CJI) সুর্য কান্ত ও বিচারপতি জয়সূর্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চ অফিসারের আচরণকে 'সবচেয়ে জঘন্য শৃঙ্খলাভঙ্গের উদাহরণ' বলে অভিহিত করেন। বেঞ্চ সরাসরি প্রশ্ন ছোড়ে, 'এই ধরনের ঝগড়ুটে ব্যক্তি কি ভারতের সবচেয়ে সুশৃঙ্খল বাহিনীতে গ্রহণযোগ্য?'
আদালত পর্যবেক্ষণ করে জানায়, কমলেসান সৈন্যদের সামনে মন্দিরে প্রবেশে অস্বীকৃতি জানিয়ে শুধু আদেশ অমান্য করেননি, বরং নিজের অধীনস্থ সৈন্যদের অনুভূতিতেও আঘাত করেছেন।
ঘটনার প্রেক্ষাপট
শিখ স্কোয়াড্রনে কর্মরত স্যামুয়েল কমলেসানকে পাঞ্জাবের মামুন ক্যান্টনমেন্টে একটি রেজিমেন্টাল অনুষ্ঠানে সর্বধর্ম স্থল, যা স্থানীয়ভাবে মন্দির হিসেবে ব্যবহৃত। সেখানে তাঁকে প্রবেশের নির্দেশ দেওয়া হয়। তিনি যুক্তি দেন, গর্ভগৃহে প্রবেশ তাঁর ধর্মীয় বিশ্বাসের বিরুদ্ধে। তিনি বাইরে থেকে ফুল দিতে রাজি হলেও ভেতরে কোনওভাবেই প্রবেশ করবেন না জানান।
তারপরই কর্তৃপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে কঠোর ব্যবস্থা নেয়। দিল্লি হাইকোর্ট সেই বরখাস্ত বহাল রাখে, যা পরে সুপ্রিম কোর্টেও টিকল।
অফিসারের যুক্তি খারিজ করল আদালত
অফিসারের আইনজীবী গোপাল শঙ্করনারায়ণন যুক্তি দেন। অধিকাংশ রেজিমেন্টে সর্বধর্ম স্থল থাকে। মামুনে কেবল মন্দির ও গুরুদ্বার রয়েছে। তাঁর মক্কেল ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে অংশ না নেওয়ার অধিকার রাখেন। কিন্তু আদালত এই যুক্তি মানেনি। পাল্টা প্রশ্ন তোলে, 'আচার করতে কেউ তাঁকে বাধ্য করেনি, কেবল প্রবেশ করতে বলা হয়েছিল। প্রবেশে অস্বীকৃতি কি নিজের সেনার অপমান নয়?'